শিল্পকলায় অঞ্জন দত্তের নাটক, কর্তৃপক্ষই জানে না

অঞ্জন দত্ত
অঞ্জন দত্ত

আয়োজকেরা বলছেন, পরশু মঙ্গলবার জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে অঞ্জন দত্ত অভিনীত এবং তাঁরই নির্দেশনায় নাটক ‘সেলসম্যানের সংসার’। সেদিন ছাপাখানার ভূত থেকে প্রকাশিত, সাজ্জাদ হুসাইনের লেখা অঞ্জন দত্তের নাট্যজীবন নিয়ে গ্রন্থ ‘নাট্যঞ্জন’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হবে। সে হিসেবে টিকিটও বিক্রি করছেন আয়োজকেরা। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বা গ্রুপ থিয়েটারের প্রতিনিধিরা জানেন না সেদিন জাতীয় নাট্যশালায় ‘সেলসম্যানের সংসার’র নাটকের প্রদর্শনী।

নাটক এবং বইয়ের এই সব আয়োজনে অংশ নিতে তিন ক্যাটাগরির রেজিস্ট্রেশন ফি বা টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০০,২০০০ ও ৩০০০ টাকা। পুরো আয়োজনের উদ্যোক্তা সাজ্জাদ হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাট্যঞ্জন’ বইয়ের দাম ১০০০ টাকা। নাটকের টিকিটের সঙ্গে দেওয়া হবে বইটিও। পরে বইটি আলাদা করে বাজারে পাওয়া যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেদিন ‘সেলসম্যানের সংসার’ নামে বা সংশ্লিষ্ট কোনো দলের নামে জাতীয় নাট্যশালার বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ আছে ‘নাটুকে’ নামের একটি স্থানীয় একটি নাটকের দলের নামে। অঞ্জন দত্তের নাটকের স্থানীয় উদ্যোক্তা সাজ্জাদ হুসাইন জানালেন, ‘নাটুকের’ অনুমতি নিয়ে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করছি আমরা। এ বিষয়ে আমরা শিল্পকলা একাডেমি মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি অনুমতি দিয়েছেন।

‘নাট্যঞ্জন’ বইয়ের প্রচ্ছদ
‘নাট্যঞ্জন’ বইয়ের প্রচ্ছদ

যোগাযোগ করা হলে নাটুকে দল প্রধান আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের উদ্দেশ্যে আমরা জাতীয় নাট্যশালার বরাদ্দ নিয়েছিলাম। কিন্তু সাজ্জাদ হুসাইন আমাকে অনুরোধ করে অঞ্জন দত্তের নাটকে জন্য বরাদ্দ ছেড়ে দিতে। প্রথমবারের মতো অঞ্জন দত্তের মতো গুণী এবং জনপ্রিয় তারকার নাটক, তাই আমরা যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু যখন দেখলাম প্রবেশপত্রের মূল্য এত বেশি এবং অবশ্যই সেটি করের আওতায় চলে আসে, তাই এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে আমিও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এত উচ্চমূল্যের টিকিটে নাটক দেখানোর পক্ষে আমি নই।’

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.: বদরুল আনম ভূঁইয়া জানালেন, অঞ্জন দত্তের নাটকের নামে কোনো বরাদ্দ নেই। এ বিষয়ে তারা মোটেও অবগত নন বলে দাবি করেন তিনি।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদও জানালেন ফেডারেশনের কাছে এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠানের তথ্য জানা নেই। বায়েজিদ বলেন, বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় নাট্যশালা বরাদ্দ দেওয়ার পক্ষে আমরা নই।

জানতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরাদ্দ নিশ্চিত না হয়ে এভাবে প্রচার বা টিকিট বিক্রি করতে পারে না কোনো সংগঠন। তা ছাড়া একটি দলকে বরাদ্দ দেওয়া হয় তাদের নিজস্ব নাটকের জন্য। চাইলে কেউ অন্য দল বা ব্যক্তিকে বরাদ্দ ভাগ করতে পারে না। নাটুকে যেহেতু অঞ্জন দত্তের নাটকের জন্য বরাদ্দ চায়নি, তাই তারা এটা করতে পারে না।’

‘সেলসম্যানের সংসার’ নাটকের দৃশ্যে দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী অঞ্জন দত্ত। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
‘সেলসম্যানের সংসার’ নাটকের দৃশ্যে দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী অঞ্জন দত্ত। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অঞ্জন দত্ত ৯ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে বিষয়ে একটি ভিডিও বার্তা দেন। যেখানে তিনি জানান, এর আগে কয়েকবার ঢাকায় গান করতে এসেছেন, তবে এবারই প্রথম এখানে তাঁর নাটক মঞ্চস্থ হবে। ভিডিও বার্তায় অঞ্জন দত্ত টিকিটের দাম কিছু বেশি মন্তব্য করে বলেন, ‘আমাদের ১০ /১২ জনের ঢাকা আসা, হোটেল ভাড়া, হলভাড়া, লাইটের খরচা, বইয়ের গবেষণার কাজে সাজ্জাদের বারবার কলকাতায় আসা যাওয়া, বইয়ের ছাপার মিলে সব খরচ টিকিটের বিক্রি থেকে তুলছি। আমাদের কোনো স্পনসর নেই। আপনারাই (দর্শক) আমাদের স্পনসর।’ অঞ্জন দত্ত আরও বলেছেন, তিনি অভিনয় করতে চেয়েছিলেন, অভিনেতা হওয়ার তাঁর স্বপ্ন। গান গাইতে তিনি চাননি।

‘সেলসম্যানের সংসার’ নাটকটি আর্থার মিলারের ‘ডেথ অব এ সেলসম্যান’-এর অবলম্বনে তৈরি। ‘ডেথ অব আ সেলসম্যান’ অবলম্বনে ‘সেলসম্যানের সংসার’ তৈরি করেছেন অঞ্জন দত্ত নিজেই। মার্কিন নাট্যকার আর্থার মিলার ১৯৪৯ সালে রচনা করেন নাটক ‘ডেথ অফ এ সেলসম্যান।’ বহু পুরস্কারে ভূষিত এই নাটকের মূল উপজীব্য উইলি লোমান নামের একজন সেলসম্যানের জীবনের বিয়োগান্ত পরিণতি। উইলি মনে করে, অর্থনৈতিক সফলতাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতার একমাত্র মানদণ্ড। ফলে সেই সাফল্য অর্জনের জন্য সে মরিয়া হয়ে ওঠে। তার প্রাণপণ চেষ্টার প্রতিটি পদক্ষেপই অবশেষে ছেয়ে যায় ব্যর্থতায়। ব্যর্থতার বোধ অন্তিমে আনে এক অনিবার্য পরাজয় ও মৃত্যু।
‘সেলসম্যানের সংসার’ নাটকে অঞ্জন দত্ত অভিনয় করেছেন উইলি লোম্যান চরিত্রে। জানা গেছে, নাটকে মধ্যবিত্ত সমাজের সংকট ধরতে চেয়েছেন পরিচালক। সাংসারিক দিক থেকে সমাজ বা রাজনীতিকে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই নির্মিত হয়েছে নাটকটি।