চলচ্চিত্রে ফেসবুক গ্রুপের প্রভাব পড়ে

আয়নাবাজি ছবিতে নাবিলা ও চঞ্চল চৌধুরী। ছবিটি নিয়ে ফেসবুক গ্রুপগুলোতে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল
আয়নাবাজি ছবিতে নাবিলা ও চঞ্চল চৌধুরী। ছবিটি নিয়ে ফেসবুক গ্রুপগুলোতে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল ‘বৃহন্নলা’ ছবিটি। পরবর্তী সময়ে নকলের অভিযোগ ওঠে সিনেমাটি নিয়ে। বাতিল হয়ে যায় পুরস্কারও। এই অভিযোগ নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে। কেবলই সিনেমা ভালোবেসে গ্রুপগুলো শুরু হলেও ক্রমেই এগুলো দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। গ্রুপগুলোর পরিচালকদের মন্তব্য, পরোক্ষ হলেও সিনেমার প্রচার, আলোচনা–সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কসহ নানাভাবে গ্রুপগুলোর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে।

ছোট-বড় নানা চলচ্চিত্র গ্রুপ আছে। বাংলা থেকে শুরু করে তামিল, তেলেগু, বলিউড, হলিউড—নানা ছবি নিয়ে থাকে আলোচনা-সমালোচনা। দেশি চলচ্চিত্র নিয়ে আলাদা করেই আছে নানা গ্রুপ। এদের সদস্যসংখ্যাও অনেক। কোনো গ্রুপে তিন লাখ, চার লাখেরও বেশি সদস্য। মুভি লাভারস অব বাংলাদেশ, সিনেমাখোরদের আড্ডা, বাংলা চলচ্চিত্র, সিনেমাবাজি, বাংলা সিনেমা, মুভি লাভার পোলাপাইন অব বাংলাদেশসহ নানা বৈচিত্র্যময় নামে পাওয়া যায় এদের।

সিনেমাখোরদের আড্ডা গ্রুপের পরিচালকদের একজন কাউসার রুশো বলেন, ‘সিনেমাখোরদের আড্ডা যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। মূলত আমরা সামহোয়্যারইন ব্লগে সিনেমা নিয়ে লেখালেখি করতাম। একদিন সবাই মিলে সরাসরি আড্ডা দিতে চাইলাম। যোগাযোগের সুবিধার জন্য এই গ্রুপটি খোলা হয়। এভাবেই গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয়।’

মুভি লাভারস অব বাংলাদেশের যাত্রা ২০১৬ সালে। এই গ্রুপের অন্যতম উদ্যোক্তা তাসনিম সায়লা। সিনেমা দেখা, আলোচনা, রিভিউ লেখাসহ নানা কার্যক্রম নিয়েই শুরু হয় গ্রুপটি। গ্রুপের পরিচালকদের একজন ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই সহপাঠী। সায়লা নামে আমার এক বান্ধবী আমাকে এই কাজে যুক্ত করে। পড়ালেখার পাশাপাশি বিনোদন হিসেবে চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করাটা আমাদের ভালো লাগে।’ ২০১৮ সালের দিকে সদস্যরা মিলিত হয়েছিলেন। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে শুরু হলেও এই গ্রুপ এখন মহিরুহ। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা চার লাখের বেশি। সুতরাং সিনেমা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ইন্ডাস্ট্রির ওপর স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়ে বলে মনে করেন ফরহাদ হোসেন। তাঁর মতে, ‘যাঁরা চলচ্চিত্র ভালোবাসেন, তাঁরাই এখানে আলোচনা সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক করেন। ভালো ছবি হলেও বলি, খারাপ হলেও বলি। যে কেউ স্বাধীনভাবে রিভিউ দিতে পারেন। সুতরাং এর প্রভাব ইন্ডাস্ট্রিতে পড়ে।’

বর্তমান চলচ্চিত্রশিল্পের দিকে তাকালে দেখা যাবে, চলচ্চিত্র নিয়ে যেকোনো বিতর্কেই সচল ছিল গ্রুপগুলো। উদাহরণ হিসেবে পাসওয়ার্ড ছবিটি ঘিরে বিতর্কের কথা বলা যায়। চলচ্চিত্র গবেষক ও সমালোচক ফাহমিদুল হক মনে করেন, ‘গ্রুপগুলোর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়ে। গ্রুপের মাধ্যমে প্রচারেরও চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু এটা সবাই করতে পারেন বলে মনে হয় না। ভাবনাচিন্তায় যাঁরা অগ্রসর, তাঁরা কেউ কেউ এটা করে থাকেন। প্রভাবের কথা বললে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। এ ছাড়া ছবি দেখার আগে গ্রুপে কেউ কেউ রিভিউ পড়ে দেখতে যায়। কে কী বলছে আগে দেখে নেয়। এটাকে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি হিসেবে অনেকে কাজে লাগান।’

সিনেমাখোরদের আড্ডার পরিচালকদের একজন রুশোও মনে করেন, প্রযোজক থেকে পরিচালক; এমনকি অভিনয়শিল্পীরাও এসব গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, ‘পরিচালক ও প্রযোজকেরা ছবি মুক্তির আগে আমাদের নক করেন। সিনেমা প্রচারের কথা বলেন।’ তিনি আরও জানান, এটা একটা বড় মার্কেটও। গ্রুপগুলোর মাধ্যমে ফেসবুক মার্কেটিং করেই কয়েকটি ছবি বেশ সফল হয়েছে। আয়নাবাজি ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পর গ্রুপগুলোতে বেশ হইচই পড়ে যায়। এটাও ছবিটি জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ মনে করেন অনেকে।

চিত্রনায়িকা বুবলী বলেন, ‘গ্রুপগুলোতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা হলে অবশ্যই এটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে যেহেতু এখানে সবাই স্বাধীন, তাই অনেক সময় শ্রদ্ধাবোধ থাকে না মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে।’

পরিচালক দীপঙ্কর দীপন বলেন, ‘প্রভাব পড়ে। ছবি দেখে ভালো লাগলে গ্রুপে ইতিবাচকভাবে লেখেন। এটা দেখে আরেকজন ছবি দেখতে আগ্রহী হন। এখানে হলে যাওয়ার অভ্যাস কমে গেছে। শুক্র ও শনিবার দর্শক সব ছবিরই থাকে। রোববারের পর ছবি দেখাটা শুরু হয় ছবি নিয়ে মানুষের মুখে মুখে কিছু শুনলে।’ দীপনের মতে, কিছু কিছু সময় আবার সমস্যাও হয়। কারণ গ্রুপগুলোতে মাঝেমধ্যে কিছু কথাবার্তা দেখা যায়, যেগুলো কাম্য নয়।