৬০-এ ত্রুফোর 'দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ'

>ফরাসি নবতরঙ্গের প্রতিনিধিত্বশীল সিনেমাগুলোর অন্যতম দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ। ১৯৫৯ সালে মুক্তি পাওয়া ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি শুরু থেকেই ধরে রেখেছে ঈর্ষণীয় এক অবস্থান। রটেন টোমাটোর বিস্ময়কর ১০০ ভাগ ফ্রেশ রেটিং ও আইএমডিবির (ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেইস) সেরা ২৫০ চলচ্চিত্রের তালিকায় ২১০ নম্বর জায়গা করে নেওয়া যেকোনো ছবির জন্যই এক বিরল অর্জন। মুক্তির ৬০ বছর উপলক্ষে আজকের এই আয়োজন দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ নিয়ে। 

 

১৯৪৮ সালে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে কাইয়ে দ্যু সিনেমা পত্রিকায় যোগ দেন। সমালোচক হিসেবে তিনি এতটাই কঠোর ও কুখ্যাত ছিলেন যে অল্প সময়ের মধ্যে ত্রুফো ‘ফরাসি চলচ্চিত্রের কবর-খননকারী ও জল্লাদ’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর সমালোচনা সিনেমা জগতের মানুষদের এতটাই অখুশি করেছিল যে ১৯৫৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনিই ছিলেন একমাত্র ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক, যাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। নাটকীয়ভাবে ঠিক এর পরের বছর, ১৯৫৯ সালে নিজের বানানো চলচ্চিত্র নিয়ে ত্রুফো কান উৎসবে হাজির হয়েছিলেন এবং জিতেছিলেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার।

 ২ 

স্ট্যান লি, হিচকক, টারান্টিনো, স্পিলবার্গ, কুব্রিক প্রমুখ পরিচালক যেমন নিজেদের সিনেমায় নিজেরাই আকস্মিক অতিথিশিল্পীর ভূমিকায় পর্দায় হাজির হন, তেমনিভাবে ফোর হানড্রেড ব্লোজ ছবিতেও রয়েছে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর এক ঝলক।

৩ 

প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যাঁরা অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হতে পারেননি, সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি তাঁদের কাউকেই। সবাইকে শ্রেণিকক্ষের কিছু দৃশ্যে অভিনয় করানো হয়। এক ঘর ভর্তি বাদ পড়ে যাওয়া শিল্পীদের অভিনয় ছিল সহজ-সাবলীল ও দারুণ জীবন্ত।

 

ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর গুরু বলে স্বীকৃত চলচ্চিত্র সমালোচক অদ্রেঁ বাঁজার নামে সিনেমাটি উৎসর্গ করা হয়। দুঃখজনকভাবে ছবিটি চিত্রায়ণের কিছুদিন আগেই তিনি মারা যান। 

দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ ছবির দৃশ্য
দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ ছবির দৃশ্য

৫ 

ফরাসি নবতরঙ্গকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দেওয়া চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ। অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধার মতে, এই সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে ফরাসি নবতরঙ্গের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।

 

কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনার পর অরসন ওয়েলসের টাচ অব এভিল (১৯৫৮) দেখে এই সিনেমা নির্মাণে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ত্রুফো। তা ছাড়া এই সিনেমায় অরসন ওয়েলসের সিটিজেন কেইন (১৯৪১) চলচ্চিত্রের মতো অস্বাভাবিক ও সংকটময় শৈশব-কৈশোরের নিবিড় বয়ান রয়েছে।

 ৭ 

সিনেমার শেষ পর্যায়ে ক্যামেরা প্রধান চরিত্র অঁতোয়ানের চেহারায় স্থির হয়ে যায় এবং ছবিটি এভাবে শেষ হয়। এই সমাপ্তি ফ্রিজ শট নামে পরিচিতি পায়, যা ত্রুফোই প্রথম ব্যবহার করেন। পরবর্তী সময়ে এই কৌশল বিভিন্ন সিনেমায় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন ২০১৬ সালে তিনটি বিভাগে অস্কার পাওয়া মুনলাইট সিনেমার শেষ দৃশ্যে রয়েছে একই রকম কৌশল।

৮ 

আকিরা কুরোসাওয়া, লুই বুনুয়েল, সত্যজিৎ রায়, জ্যঁ ককতো, উডি অ্যালেনের মতো ডাকসাইটে পরিচালকদের মুগ্ধ করেছে বয়ঃসন্ধির সংকটে পড়া কিশোরের মনস্তত্ব এবং একজন ত্রুফোর আত্মজৈবনিক বাস্তববাদী ধ্রুপদি বয়ান।

 

ছবির মূল চরিত্র জ্যঁ পিয়েরে লিও আর পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর মধ্যে ছিল অদ্ভুত মিল। মাঝেমধ্যেই তাদের মানুষ আলাদা করে চিনতে না পেরে ভুল করত।

১০ 

এই সিনেমার জন্যই ত্রুফো ১৯৬০ সালে পেয়েছেন ৩২তম একাডেমি পুরস্কার (অস্কার) আসরে মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য মনোনয়ন।

গ্রন্থনা: আব্দুর রেহমান