'তিনিই জীবিত কবি, যাঁকে নিয়ে তর্ক হয়'

কবি আল মাহমুদের ৮৪তম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবিতা ক্যাফে, কাঁটাবন, ঢাকা, ১১ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
কবি আল মাহমুদের ৮৪তম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবিতা ক্যাফে, কাঁটাবন, ঢাকা, ১১ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

জন্মদিনে কবি আল মাহমুদের দুয়ার খুলে দেওয়া হতো। ঝাঁকে ঝাঁকে নানা বয়সী মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা তাঁর ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়তেন। পরিচয় দরকার হতো না। কবির ভক্তদের জন্য সেই দুয়ার সেদিন খুলে দিতেন কবির পুত্রবধূ। কবিকে একনজর দেখার জন্য, একটি সেলফি তোলার জন্য যে ভিড় হতো, সেটা আজ হয়নি। প্রয়াণের পর কবির প্রথম জন্মদিন উদ্‌যাপন হলো অনেকটা নীরবে। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন অল্প কিছু মানুষ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের কবিতা ক্যাফেতে আয়োজন করা হয় আল মাহমুদ জন্মোৎসবের। সাহিত্য সংগঠন ‘কবি এবং কবিতা’–এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন কবির দীর্ঘদিনের সহযোগী ও তরুণ বন্ধু আবিদ আজম। ‘কবি এবং কবিতা’ সম্পাদক শাহীন রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন জাহিদুল হক। এ ছাড়া বক্তৃতা দেন জাহাঙ্গীর ফিরোজ, রেজাউদ্দিন স্টালিন প্রমুখ।

আল মাহমুদকে নিয়ে নিজের স্মৃতির পৃষ্ঠা মেলে ধরেছিলেন রেজাউদ্দিন স্টালিন। মাথার প্রায় সব চুল পড়ে গেলেও আল মাহমুদ পকেটে একটি সোনালি রঙের চিরুনি রাখতেন। প্রায়ই সেটা বের করে আঁচড়ে নিতেন অভ্যাসবশত। কোনো মেয়ে ভক্তের লেখা চিঠি পড়ে শোনাতেন অনুজ কবিদের। সেসব স্মৃতিচারণার পাশাপাশি কবিকে নিয়ে রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ‘তিনিই জীবিত কবি, যাঁকে নিয়ে তর্ক হয়। যাঁকে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নেই, তিনি মরে গেছেন। আল মাহমুদ প্রয়াত হলেও তাঁর কবিতা ও তাঁকে নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন। পৃথিবীর সব বড় কবির ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। নানা যন্ত্রণা, বঞ্চনা, অবজ্ঞা সহ্য করতে হয়েছে কবিদের।’

জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, সোনার কলম নিয়ে জন্মেছিলেন আল মাহমুদ। দেশপ্রেমী মানুষ ছিলেন তিনি। কবিতায় দেশ ও প্রকৃতির কথা লিখে রেখেছেন চমৎকার করে। তাঁর গদ্য অসাধারণ, তাঁর ছড়া যেকোনো বয়সের মানুষকে আকর্ষণ করে। এসব কারণেই বাংলা সাহিত্যে তিনি পোক্ত আসন করে নিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে এসে নিজের পকেট থেকে একটি সোনালি চিরুনি বের করে আনেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। বলেন, ‘আল মাহমুদের কাছ থেকে এটা “আত্মসাৎ” করেছি। তাঁকে ফেরত দিইনি। আল মাহমুদ সেই কবি, যাঁর মাথায় চুল না থাকলেও পকেটে চিরুনি থাকত। আর্থিক সংকট, অভাব-অনটনেও তিনি সাদা কাগজকে কবিতা দিতে বাধ্য করতেন। বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কথা বলতে গেলে অবশ্যই আল মাহমুদের কথা বলতেই হবে।’

অনুষ্ঠানে নেত্রকোনা ও চাঁদপুর থেকে এসেছিলেন দুই তরুণ। আল মাহমুদকে নিয়ে লেখা নিজেদের দুটি কবিতা পড়ে শোনান তাঁরা। কবিতা পড়েন তারেক মাহমুদ, ছড়া শোনান জগলুল হায়দার। আরও বেশ কজন তরুণ-তরুণী আল মাহমুদকে স্মরণ করে তাঁর কবিতা পড়ে শোনান। ‘সোনালী কাবিন’, ‘নোলক’, ‘কবিতা এমন’ ‘ ঊনসত্তরের ছড়া’, ‘একুশের কবিতা’—এসব কবিতা তরুণেরা বেছে নেন কবির জন্মোৎসবে আবৃত্তির জন্য।