কারা খেয়ে নিচ্ছেন লাভের গুড়

এই সপ্তাহে দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে সাইফ চন্দনের আব্বাস
এই সপ্তাহে দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে সাইফ চন্দনের আব্বাস

মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য সিনেমার টিকিটের টাকা হাতে পাচ্ছেন না প্রযোজকেরা। তাঁদের অভিযোগ, বুকিং এজেন্ট আর প্রযোজকদের পাঠানো প্রতিনিধিরা লোপাট করছেন টিকিটের টাকা। তাঁরা বলছেন, ই–টিকেটিং ব্যবস্থা ও সেন্ট্রাল সার্ভার চালু হলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারেন প্রযোজকেরা।

এই সপ্তাহে দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে সাইফ চন্দনের আব্বাস ছবিটি। সিরাজগঞ্জের একটি হলের একটি শোর তথ্যমতে, ওই হলে সিট সংখ্যা প্রায় ৬০০। রোববার বেলা তিনটার শোতে দর্শক সংখ্যা ছিল ২০০-এর মতো। টিকিটের মূল্য ৩০, ৫০ ও ৬০ টাকা। যদি গড়ে ৪০ টাকা টিকিটের মূল্য ধরা হয়, তা–ও এক শোতে টাকা আসে আট হাজার। কিন্তু ওই দিন পাঁচটি শো থেকে প্রযোজকের হাতে টিকিট বিক্রির টাকা এসেছে মাত্র ২ হাজার ৪৭২ টাকা। ওই হলে প্রতিটি টিকিটের মূল্যের শতকরা ৬০ ভাগ প্রযোজক এবং ৪০ ভাগ পান হলমালিক।

ঢাকার একটি হলে সোমবার তিনটার শোতে রিয়ার স্টলে দর্শক ছিলেন প্রায় ৭০ জন। ডিসিতেও কিছু দর্শক ছিলেন। রিয়ারের টিকিট মূল্য ৬০ টাকা। তাহলে শুধু এক শোতেই রিয়ার স্টলে টাকা হওয়ার কথা ৪ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু ওই দিন চারটি শো থেকে প্রযোজকের কাছে এসেছে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছবি মুক্তির সময় বুকিং এজেন্টের দৌরাত্ম্য এবং হলে হলে প্রযোজকের পাঠানো প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট হলের অসাধু কিছু কর্মকর্তা মিলে দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রযোজক টিকিট বিক্রির সঠিক হিসাব পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার মনে করেন, ছবি মুক্তির সময় বুকিং এজেন্ট ও প্রতিনিধিরা প্রযোজকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। তিনি বলেন, ‘বুকিং এজেন্টরা যে টাকায় হলে ছবি বুকিং দিচ্ছেন, আগেই প্রযোজকের কাছ থেকে সেই টাকার দশ ভাগ কমিশন নিয়ে নিচ্ছেন। বাকি টাকা হল কর্তৃপক্ষ বুকিং এজেন্টের মাধ্যমে প্রযোজককে পরিশোধ করছেন। কিন্তু সেখানেও বুকিং এজেন্টেদের কারসাজি। পাওনা টাকা চাইতে গেলে হল কর্তৃপক্ষের কাছে বকেয়া পড়ে থাকার কথা বলে বুকিং এজেন্টরা বছরের পর বছর প্রযোজকদের ঘোরাচ্ছেন। শুধু তাই-ই নয়, টিকিট বিক্রির সঠিক হিসাব নেওয়ার জন্য প্রযোজকেরা যেসব প্রতিনিধি হলে হলে পাঠাচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ হলের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সঠিক হিসাব দিচ্ছেন না। ফলে প্রযোজক প্রতিনিয়তই লোকসান গুনছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রযোজক বলেন, ‘অনেক নতুন ছবি মুক্তির সময় কোনো কোনো হল কর্মকর্তা ও বুকিং এজেন্ট সিন্ডিকেট তৈরি করেন। ছবির নায়ক–নায়িকা ভালো না, হলমালিকেরা ছবি নিতে চাইছেন না—এ ধরনের নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলে কম টাকায় হলে ছবি দিতে বাধ্য করেন প্রযোজকদের। প্রযোজকদের কাছ থেকে তো কমিশন পানই, আবার এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সফল হতে পারলে হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও একটা অর্থ পাচ্ছেন বুকিং এজেন্টরা।’

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন সিনেমা বাঁচাতে এবং প্রযোজকদের ফেরাতে হলে প্রেক্ষাগৃহ ও প্রযোজকদের মাঝের এসব মধ্যস্বত্বভোগীকে বাদ দিতে হবে।

বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি সারোয়ার আলী ভূঁইয়া অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, ‘যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কোনো কোনো ছবিতে শতকরা দশ ভাগ হিসেবে পাঁচ শ টাকাও কমিশন আসে। সেখান থেকে অফিস খরচ, হলে পোস্টার পাঠানো খরচ, ম্যানেজারের খরচ। আর কিছু থাকে বলেন? একমাত্র শাকিব খানের ছবি থেকে থাকার মতো কিছু কমিশন আসে।’

প্রতিনিধি সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রযোজকেরা এই ধরনের অভিযোগ করতেই পারে। কিন্তু এই অভিযোগ তখনই বেশি আসে, যখন ছবি হলে ভালো চলে না। ব্যবসাসফল ছবি নিয়ে প্রযোজকেরা কোনো অভিযোগ করেছে বলে জানা নেই। তবে এই ধরনের ঢালাও অভিযোগ ঠিক না। অভিযোগ থাকলে যাচাই করে দেখা উচিত।’