সাংবাদিকদের দেশদ্রোহী, ভণ্ড বললেন কঙ্গনা

কঙ্গনা রনৌত
কঙ্গনা রনৌত

বিতর্ক যেন কঙ্গনা রনৌতের সমার্থক। কঙ্গনা যেখানে, বিতর্ক সেখানে—এই নিয়মের যেন কোনো ব্যত্যয় নেই। কঙ্গনার নতুন ছবি ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’র একটা প্রচার অনুষ্ঠানে গিয়ে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে রীতিমতো বাগ্‌যুদ্ধ বাধিয়ে দিলেন। আর এখন সাংবাদিক পক্ষ সব একজোট হয়ে কঙ্গনাকে খারাপ ব্যবহার করার জন্য ক্ষমা চাইতে বলছে। আর ক্ষমা চাওয়ার পাত্র নন কঙ্গনা। তিনি এবার ভিডিও বার্তায় ওই সাংবাদিককে দেশদ্রোহী আর ভণ্ড বলছেন।

কঙ্গনা রনৌতের বোন ও ম্যানেজার রাঙ্গোলি চান্ডেল তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেছেন ওই ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, কঙ্গনা বলেছেন, যেসব সাংবাদিক জাতীয়তাবাদ নিয়ে তাঁর ধারণার সঙ্গে একমত পোষণ করেন না, তাঁরা সবাই দেশদ্রোহী। কঙ্গনা আরও বলেন, মিডিয়া টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। মিডিয়া মোটেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে না। এর আগে কঙ্গনা ক্ষমা না চাইলে সাংবাদিকেরা তাঁকে বয়কট করার হুমকি দিয়েছিলেন।

কঙ্গনা রনৌত
কঙ্গনা রনৌত

এই হুমকির উত্তরে কঙ্গনা যা বলেছেন, তাতে সাংবাদিক মহলের কথা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। যাঁরা কঙ্গনাকে বয়কট করতে চেয়েছেন, কঙ্গনা তাঁদের অনুরোধ করেছেন তাঁকে বয়কট করার জন্য। কঙ্গনা বলেন, ‘প্লিজ, আপনারা আমাকে বয়কট করুন। ওই সাংবাদিকেরা আমাকে নিয়ে নিউজ করে বলেই তাঁদের ঘরে চুলা জ্বলে। তাঁদের পরিবার খেয়ে–পরে বেঁচে থাকে। আমি চাই না, যাঁরা আমাকে অপছন্দ করেন, আমাকে নিয়ে আজেবাজে লিখেন, তাঁরা জীবনধারণ করুক। আমি চাই না, দেশদ্রোহীরা আমাকে নিয়ে নেতিবাচক খবর করে অর্থ উপার্জন করুক।’

মানে, কঙ্গনা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি মিডিয়ার ধার ধারেন না, ধার ধারেন না কোনো সাংবাদিকেরও। বরং মিডিয়া আর সাংবাদিকেরাই নাকি তাঁর ওপর নির্ভরশীল। তাই কঙ্গনাকে বয়কট করলে কঙ্গনার নাকি কোনো ক্ষতি নেই, ক্ষতি মিডিয়ার, ক্ষতি সাংবাদিকদের।

কঙ্গনা রনৌত
কঙ্গনা রনৌত

ওই ভিডিওতে কঙ্গনা নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন। কঙ্গনা বলেছেন, যিনি যত ভালো কাজই করেন না কেন, ওই সাংবাদিক তাঁর সম্বন্ধে কেবল খারাপ কথা লিখেছেন। পরিবেশ দিবসে তিনি প্লাস্টিক বর্জনের ওপর একটা প্রচারণা চালিয়েছেন, সেটিকে ভালো চোখে দেখেননি ওই সাংবাদিক। বন দিবসে বন্য প্রাণীদের রক্ষা করার জন্য আর প্রাণীদের সঙ্গে নৃশংস আচরণ করার বিপক্ষে কথা বলেছেন, তা নিয়েও নাকি নেতিবাচক শিরোনাম লিখেছেন ওই সাংবাদিক। এমনকি কঙ্গনা নিজের ওভি ভ্যানে বসে তাঁর তিন ঘণ্টা ধরে সাক্ষাৎকার নিয়েও তাঁর সম্বন্ধে খারাপ খারাপ কথা লিখেছেন।

শুধু ভিডিও বার্তায় এগুলো বলেই ক্ষান্ত থাকেননি কঙ্গনা। আইনজীবী রিজওয়ান সিদ্দিককে দিয়ে প্রায় সব মিডিয়া হাউসে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। সেখানে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার নীতি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই সাংবাদিক অপেশাদার আচরণ করেছেন। কঙ্গনাকে নিয়ে মিথ্যে রটিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর মানহানি করেছেন। ‘এন্টারটেইনমেন্ট জার্নালিস্ট গিল্ড’কে তাঁকে নয়, বরং ওই সাংবাদিক ও ওই ধরনের সাংবাদিকদের বয়কট করতে বলা হয়েছে।

ঘটনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার কার্টুন
ঘটনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার কার্টুন

অন্যদিকে এসব ঘটনায় প্রযোজক একতা কাপুরের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। তিনি টুইট করেছেন, ‘আমরা কি কোনোভাবেই এই ছবির আসল নামে ফিরে যেতে পারি না?।’ অর্থাৎ, ‘মেন্টাল’, ‘জাজমেন্টাল’ হওয়ার পর, এই সব ঘটনা ঘটার পর একতা কাপুরের মনে হচ্ছে, এই ছবির জন্য ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ নামটাই ঠিক ছিল। একজন আবার একতা কাপুরকে উদ্দেশ্য করে সেখানে মন্তব্য করেছেন, এই ছবির সিক্যুয়েল বানান। কঙ্গনাকে ইঙ্গিত করে আবার বলেছেন, সেই সিক্যুয়েলে এই ছবির যেকোনো একজন প্রোটাগোনিস্টকে নিতে পারেন।

একতা কাপুর আবার সেই মন্তব্যের উত্তরে লিখেছেন, ‘আমিও অভিনয় পারি। আর তা ছাড়া আমি নিজেই পাগল হয়ে গেছি।’ একতা কাপুর কারও নাম উল্লেখ না করে যিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও প্রকাশ করেছেন আর যিনি ভিডিওতে কথা বলেছেন, অর্থাৎ কঙ্গনা আর রাঙ্গোলির পক্ষ থেকে মিডিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। মিডিয়াকে দেশদ্রোহী, বিক্রীত আর বিকৃত বলায় তিনি সব মিডিয়াকর্মীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে ক্ষমা চাইবেন না কঙ্গনা। উল্টো সাংবাদিকদের দিকে কথার বিষাক্ত বাণ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি, আইনি নোটিশ পাঠাতেও ভোলেননি। এখন দেখা যাক, সাংবাদিক বনাম কঙ্গনা যুদ্ধের এই পর্যায়ে সাংবাদিকেরা কী করেন! সময়ই বলে দেবে এই যুদ্ধে কে জিতলেন, কে হারলেন আর কার কত ক্ষয়ক্ষতি হলো।