ছায়ানটের শ্রোতার আসরে নজরুলের গান

ছায়ানট ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে গান করছেন একজন শিল্পী ছবি: প্রথম আলো
ছায়ানট ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে গান করছেন একজন শিল্পী ছবি: প্রথম আলো

থেমে থেমে বৃষ্টি ছিল কাল সন্ধ্যায়। এ বৃষ্টি দমাতে পারেনি ছায়ানট ভবনে আসা সংগীতপিপাসুদের। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় সেখানে ভেসে বেড়াল নজরুলের গানের সুর। গানের বাণী আর সুরের অবগাহনে প্রকৃতির মতোই সিক্ত হলো শ্রোতার অন্তর। শুক্রবার সন্ধ্যায় এভাবেই প্রাণের প্রবাহে উদ্দীপ্ত হয় ছায়ানট আয়োজিত শ্রোতার আসর। ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অমিত আচার্য হিমেল গেয়ে শোনান ‘গগনে প্রলয় মেঘের মেলা’ ও ‘তুমি দিলে দুঃখ অভাব’ শীর্ষক গান। আনিলা আমিরের কণ্ঠে ‘মালা গাঁথা শেষ না হতে’ ও ‘হে প্রিয় আমারে দিব না ভুলিতে’। অনামিকা সরকার সোমা পরিবেশন করেন ‘একেলা গোরী জলকে চলে’ ও ‘মেঘ-মেদুর বরষায়’। শরিফুর রহমান গেয়ে শোনান ‘দাঁড়ালে দুয়ারে মোর’ এবং ‘তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম’। সানজিদা রহমানের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘শ্রান্ত ধারা বালুতটে’ ও ‘কে নিবি ফুল’। নাওশিন তাবাসসুম শুনিয়েছেন ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’ ও ‘রিম ঝিম রিম ঝিম ঝিম’ শীর্ষক সংগীত। জারি সুবাহ্ গেয়েছেন ‘মাটির প্রতিমা পূজিস রে তোরা’ ও ‘জানি জানি প্রিয়’ শিরোনামের গান। ধ্রুব সরকার পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘আমি গগন গহনে’ ও ‘মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়’। শুক্লা সরকার পরিবেশন করেন ‘শাওন আসিল ফিরে’ ও ‘আধো ধরণী আলো’ শীর্ষক সংগীত। মৌসুমী সাহার কণ্ঠে গীত হয় ‘সংসারেরই দোলনাতে মা’ ও ‘তোমার বুকের ফুলদানিতে’। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠার পরই ঘরোয়া গানের আসর হিসেবে ‘শ্রোতার আসর’ শুরু করে ছায়ানট ছবি: প্রথম আলো
প্রতিষ্ঠার পরই ঘরোয়া গানের আসর হিসেবে ‘শ্রোতার আসর’ শুরু করে ছায়ানট ছবি: প্রথম আলো

বাঙালিকে তার গানের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সংগীতরুচিতে আভিজাত্য আনতে, প্রতিষ্ঠার পরই ঘরোয়া আসর শুরু করে ছায়ানট। শ্রোতার আসর-এর প্রথম অনুষ্ঠান হয় মোখলেসুর রহমান সিধু ঢাকার ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিটের বাসায়। গেয়েছিলেন ওই সময়ে কলকাতা থেকে আসা ফিরোজা বেগম। পরের অনুষ্ঠানগুলো সাজানো হয়েছিল ফাহমিদা খাতুনের রবীন্দ্রসংগীত, খাদেম হোসেনের সেতার বাদন এবং ইউসুফ খান কোরেশী ও ইয়াসিন খানের উচ্চাঙ্গসংগীত দিয়ে। সাংস্কৃতিক অন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছায়ানট আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় কয়েকটি অধিবেশনের পর আর হয়নি শ্রোতার আসর। পরে ছায়ানট আবার শ্রোতার আসর শুরু করে ২০০৭ সালের ২০ জুন, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী সুফিয়া কামালের জন্মদিনে। সংগীতে শ্রোতার চিত্ত উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে প্রথমে আয়োজন ছিল মাসিক। বর্তমানে বছরে ছয়টি আসরের আয়োজন করছে ছায়ানট। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলা মাসের চতুর্থ শুক্রবার সন্ধ্যায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের ‘রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্র’-এ হচ্ছে অনুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সঙ্গে নবীন শিল্পীদেরও এই আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠানের দিনে শ্রোতা হওয়ার পাশাপাশি উৎসুকজনের জন্য থাকে বার্ষিক সদস্যপদের ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সঙ্গে নবীন শিল্পীরা শ্রোতার আসরে গান শোনান ছবি: প্রথম আলো
প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সঙ্গে নবীন শিল্পীরা শ্রোতার আসরে গান শোনান ছবি: প্রথম আলো