আষাঢ়ের নব আনন্দ

‘আষাঢ়ের নব আনন্দ’ অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা ছবি: প্রথম আলো
‘আষাঢ়ের নব আনন্দ’ অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা ছবি: প্রথম আলো

বর্ষার আবেদন সব ঋতুর চেয়ে আলাদা। কবিতা, গান সবখানে তাই এই ঋতুর সৌন্দর্য বর্ণনায় আগ্রহী হয়েছেন কবি-সাহিত্যিকেরাও। বাংলা গানে–কবিতায় বর্ষার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। সেখানে উপমা, রূপক, প্রতীকে বর্ষা ঋতুর রয়েছে বৈচিত্র্যময় প্রকাশ। বাঙালি গান, কাব্য, সাহিত্য সর্বদা বর্ষাবন্দনা। বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে বর্ষার কিছু প্রাণছোঁয়া গান নিয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ‘আষাঢ়ের নব আনন্দ’ শীর্ষক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কলিম শরাফীর হাতে গড়া গানের সংগঠন সঙ্গীত ভবন। বৃষ্টিঝরা সন্ধ্যায় ভেসে বেড়াল গানের সুর। হৃদয় উতলা সেই সব গানের বাণী আর সুরের অবগাহনে সিক্ত হলো শ্রোতার অন্তর।

শ্রোতায় পরিপূর্ণ আসর শুরু হয় সঙ্গীত ভবনের শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তাঁরা পরিবেশন করেন ‘বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে’ গানটি। এরপর একক গান পরিবেশন করেন সীমা সরকার। তিনি পরিবেশন করেন ‘হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে’ গানটি। তাঁর এই গানের রেশ কাটতে না কাটতে মঞ্চে আসেন সুপর্না দে ও তাহমিনা তনু, তাঁরা গেয়ে শোনান ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে’।

এরপর দ্বৈত কণ্ঠে সালেহ মোহাম্মদন ও নিবেদিতা হালদার পরিবেশন করেন ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে’। রিফাত জামাল ‘আমার নিশীথরাতের বাদলধারা, এসো হে গোপনে, আমার স্বপনলোকে দিশাহারা’। সর্ববাণী চক্রবর্তী ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী, তুমি পৌঁছিলে পূর্ণিমাতে’। গোলাম মোস্তফা গাইলেন ‘আষাঢ় মাইসা ভাসা পানিরে’। এমদাদ হোসেন ‘আকাশ এতো মেঘলা যেও নাকো একলা’। ‘এসো শ্যামল সুন্দর, আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা’ গানের সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করে নেওয়াজ মৃন্ময় খুকুমণি। নাচের পর আবার গানের পালা। এবার একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন স্বপন কুমার দাস। তিনি গাইলেন ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ্দিগন্তের পানে’।

অনেকগুলো একক গানের পর আবার দ্বৈত গানের পালা। এবার মঞ্চে আসেন কনক খান ও খন্দকার জাফর সাদেক। তাঁরা দ্বৈত কণ্ঠে গাইলেন ‘এই মেঘলা দিনে একলা’। তাঁদের দ্বৈত পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন সঙ্গীত ভবনের সভাপতি ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া। তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল নজরুলগীতি ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’। তাঁর এই পরিবেশনার পর সুমন চৌধুরী গাইলেন ‘গহন মেঘের ছায়া ঘনায় সে আসে’। মাহমুদ সেলিম গাইলেন ‘বড় একা লাগে এই আঁধারে’। ‘ধরণীর গগনের মিলনের ছন্দে, বাদলবাতাস মাতে মালতীর গন্ধ’ গানের সঙ্গে আয়োজনের দ্বিতীয় এবং শেষ একক নৃত্য পরিবেশন করেন তাহনীনা ইসলাম। গানের ফাঁকে ফাঁকে বর্ষাবিষয়ক কবিতা আবৃত্তি করেন মৌমিতা জান্নাত।

দুটি সমবেত, দুটি দ্বৈত, দুটি একক নৃত্য ও ১০টি একক গান দিয়ে সাজানো বর্ষাবিষয়ক মনোমুগ্ধকর এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শুরু হয়েছিল সমবেত গানের মধ্য দিয়ে। আর শেষও হয় সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গাইলেন ‘অম্বরে মেঘ মৃদঙ্গ বাজে’।

অনুষ্ঠানের সূচনাতেই সংগঠনের সভাপতি পীযূষ বড়ুয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে সঙ্গীত ভবনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আগত দর্শক-শ্রোতাদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন সঙ্গীত ভবনের সভাপতি পীযূষ বড়ুয়া।
প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কলিম শরাফীর হাত ধরে ৩৫ বছর আগে গানের বিদ্যাপীঠ হিসেবে পথচলা শুরু হয় সঙ্গীত ভবনের। গানের বিদ্যাপীঠের কার্যক্রম তিন বছর ধরে সাময়িক বন্ধ থাকলেও থেমে নেই সংগীতায়োজনের।