গানে গানে আলতাফ মাহমুদ ও লুতফর রহমান স্মরণ

আলতাফ মাহমুদ ও লুতফর রহমান স্মরণে গান করছেন শিমূল ইউসুফ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
আলতাফ মাহমুদ ও লুতফর রহমান স্মরণে গান করছেন শিমূল ইউসুফ। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সুরস্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদ ও শেখ লুতফর রহমানের সুরারোপিত গণসংগীত ভাষার লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে জনতাকে উদ্দীপ্ত করেছে। স্বদেশকে ভালোবাসা সেই দুই কালজয়ী শিল্পীকে স্মরণ করা হলো আজ সোমবার। শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হলো তাঁদেরই সুরের ধারায়। শেষ আষাঢ়ের সন্ধ্যায় জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে দুই শিল্পীকে নিবেদিত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ।

দুই পর্বে বিভক্ত ছিল স্মরণের এ আয়োজন। প্রথম পর্বে দেশের সংস্কৃতি সংগ্রামে আলতাফ মাহমুদ ও শেখ লুতফর রহমানের অনন্য ভূমিকার কথা উঠে আসে বিশিষ্টজনদের আলাপনে। দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হয় শিল্পীদ্বয়ের সুরারোপিত গণসংগীত। আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও অভিনয়শিল্পী শিমূল ইউসুফ। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সাতচল্লিশ-পরবর্তী পাকিস্তানি শাসনামলে গণসংগীতের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন এই দুই কালজয়ী শিল্পী। সুরের আশ্রয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণমুক্তি ও মানবতা বোধকে তাঁরা ছড়িয়ে দিয়েছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের গণসংগীত দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করেছে সেই সময়ের তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের।

আলোচনায় আলতাফ মাহমুদ ও লুতফর রহমানের সুরারোপিত গান শোনান শিমূল ইউসুফ। তাঁর পরিবেশনায় ছিল ‘ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে’, ‘আমি মানুষের ভাই স্পার্টাকাস’, ‘রক্তে আমার আবার প্রলয় দোলা’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ ‘বিপ্লবেরই রক্তে রাঙানো’ শিরোনামের সংগীত।

সমবেত গান করছেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা ছবি : সংগৃহীত
সমবেত গান করছেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা ছবি : সংগৃহীত

পরিবেশনা পর্বে লুতফর রহমানের সুরারোপিত সংগীত পরিবেশন করেন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনান ‘বিপ্লবেরই ঝালা ওড়ে আকাশে’ ও ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’ শিরোনামের গান। আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত সংগীতকে কণ্ঠে ধারণ করেন বহ্নিশিখার শিল্পীরা। সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও ‘আমরা পুবে-পশ্চিমে’।

ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘মিলিত প্রাণের কলরবে’ ও ‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’ ও ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’। আনন্দনের শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয় ‘জনতার মুখগুলি আগুনের হলকায়’ এবং ‘ওরে মাঝি নৌকা ছেড়ে দে’। সমস্বরের শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘রক্ত শিমুল, তপ্ত পলাশ দিল ডাক সুনীল ভোরে’ এবং ‘ওরে বিষম দরিয়ার ঢেউ উথাল-পাথাল করে রে’।

১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশালে মুলাদীর পাতারচর গ্রামের ফকিরবাড়ীতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের সুরস্রষ্টা হিসেবেই আজীবন বাঙালির মনে টিকে থাকবেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ। গানটির প্রথম সুর করেছিলেন আরেক বিশিষ্টজন আবদুল লতিফ। পরে আলতাফ মাহমুদের সুরটিই কালজয়ী হয়। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট আলতাফ মাহমুদকে তাঁর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।