সোনাক্ষীর ছবির বিষয় যৌনতা আর গুপ্তরোগ নিয়ে সচেতনতা

>

সোনাক্ষী
সোনাক্ষী

ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালোই করেছিলেন সোনাক্ষী সিনহা। সালমান খানের হাত ধরে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। তবে সোনাক্ষীর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটা ছবি সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি। তাই এবার তিনি বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্নধারার এক ছবি। যৌনতা আর গুপ্তরোগ এই ছবির বিষয়। ছবির নাম খানদানি সাফাখানা। বলিউড অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় নতুন এই ছবি সোনাক্ষীর ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বললেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য

ছবির বিষয় যৌনতা আর গুপ্তরোগ। এই নিয়ে সমাজে এখনো অনেক বিধিনিষেধ আর কুসংস্কার আছে। ছবির বিষয় নিয়ে আপনি নিজে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন? 

সোনাক্ষী সিনহা: সত্যি বলতে, আমি নিজে প্রথমে ছবিটা করতে রাজি ছিলাম না। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে পর্দায় বিষয়টা কীভাবে তুলে ধরা হবে। তবে ছবির মূল ভাবনাটা আমার দারুণ পছন্দ হয়। যৌনতা আর এই বিষয়ক গোপন রোগ নিয়ে আমাদের এখনো অনেক অস্বস্তি আর লজ্জা আছে। আমার খুব ভালো লেগেছে যে সমাজের এই অন্ধকার দিকটা আমরা মজা করে সবার কাছে তুলে ধরেছি। আমরা প্রকাশ্যে যৌনতা নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করি। আমাদের মা–বাবারাও এই সম্বন্ধে কথা বলতে লজ্জা পান। কিন্তু যৌনতা আমাদের জীবনের একটা অংশ। এরপরও যে এ নিয়ে কেন এত রাখঢাক, বুঝতে পারি না। আমাদের সামান্য একটু অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে ছুটি। অথচ যৌনরোগ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জা পাই। লুকিয়ে রাখি। আমাদের প্রয়াস হাস্যরসের মাধ্যমে সমাজের এই গম্ভীর সমস্যাকে তুলে ধরা। আর আমরা চাই মানুষ যেন এবার তাদের মানসিকতা বদলায়। 

আপনি কি মনে করেন, প্রতিটি স্কুলে সেক্স এডুকেশন অর্থাৎ যৌনশিক্ষা থাকা জরুরি? 

সোনাক্ষী: অবশ্যই। আমাদের এই উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো যৌনতাকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মতো এটিও পাঠ্যপুস্তকে থাকা উচিত। তাহলে শিশুদের মধ্যেও এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে উঠবে। আর তারা এ বিষয়ে সঠিক শিক্ষা পাবে, যা তাদের ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখাবে আর নিজেদের নিরাপদে রাখতেও শেখাবে। 

আপনি কবে ‘সেক্স’ বা ‘যৌনতা’—এই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন? 

সোনাক্ষী: আর পাঁচটা শিশুর মতো আমিও এ ব্যাপারে অনেক দেরিতে জেনেছি। সবার মতো আমার মা–বাবাও এ সম্বন্ধে আমার সঙ্গে কখনো আলোচনা করেননি। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। বড় হয়ে ধীরে ধীরে সব জানতে পেরেছি। তবে বন্ধুরা আমাকে এ ব্যাপারে অনেক শিক্ষিত করেছে। (সশব্দে হেসে) 

 খানদানি সাফাখানা ছবির পরিচালক একজন নারী। এ জন্যই কি ছবিটা করা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়েছে? 

সোনাক্ষী: এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার যে এ ধরনের বিষয় নিয়ে ছবি বানিয়েছেন একজন নারী নির্মাতা। এ ধরনের ছবি পরিচালনা কিন্তু সহজ কথা নয়। পরিচালক শিল্পী দাশগুপ্ত সেটে খুব সুন্দর একটি পরিবেশ বজায় রাখতেন। আমাদের প্রত্যেককে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। কখনো বাজে কিছু অনুভব করিনি। পরিচালক শিল্পী খুব মজার ছলে বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। 

 আকিরা, ফোর্স টু, নুর-এর মতো সিরিয়াস ছবির পর আপনাকে কমেডি ছবিতে বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ছবি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত কি ভেবেচিন্তে নিয়েছেন? 

সোনাক্ষী: সে রকম কিছু নয়। কমেডি ছবি করতে ও দেখতে ভালোবাসি। কাউকে হাসানো মোটেও সহজ কথা নয়। কমেডির ক্ষেত্রে সময়ের জ্ঞান থাকা খুব জরুরি। তাই সেটার চর্চা করতে হয়। আর দুশ্চিন্তা ও চাপ এখন মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। হাসির ছবি মানুষকে একটু হলেও সেই চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়। কমেডি ছবি করার এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। 

ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন বিষয়ে জোর দেন বেশি? 

সোনাক্ষী: বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখি। প্রথমত দেখি চরিত্রের সঙ্গে আমি কতটা মানানসই। মানে, আমি সেই চরিত্রের উপযুক্ত কি না। আর সব সময় এমন ছবি করতে চাই, যা আমি আমার পরিবারের সঙ্গে বসে দেখতে পারি। 

 দাবাং-এর পর দাবাং থ্রি আসতে চলেছে। এই সফরে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে কতটা সমৃদ্ধ করেছেন? 

সোনাক্ষী: জানেনই তো, আমি কখনো অভিনেত্রী হতে চাইনি। কখনো ভাবিনি যে অভিনয় করব। আমি অভিনয়ের অ আ ক খ শুটিংয়ে এসেই শিখেছি। প্রথম ছবির থেকে আজ অবধি শিখেই চলেছি। তবে সেই প্রথম ছবি দাবাং-এর থেকে আজকের আমার মধ্যে অনেক বদল এসেছে। নিজেকে এখন অনেক সমৃদ্ধ বলে মনে হয়। তবে কোনো বিষয় নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নই। 

আপনি কি মনে করেন, বলিউডে টিকে থাকতে হলে সব সময় সংগ্রাম করে যেতে হয়? 

সোনাক্ষী: একদম তা–ই। কেউ কেউ প্রথম ছবিতে সফলতা পায় না। আবার কেউ কেউ ক্যারিয়ারের প্রথম ছবিতেই দারুণ সফলতা পায়। আর তখন তাকে নিজের জায়গা ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। আর এটা প্রতিটা ক্ষেত্রেই হয়। প্রত্যেককে নিজের জায়গা ধরে রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। ধৈর্য ও নিষ্ঠা সব সময় ধরে রাখতে হয়।