'আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে'

‘বাজাও তুমি কবি, তোমার সংগীত সুমধুর’—ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় উৎসব
‘বাজাও তুমি কবি, তোমার সংগীত সুমধুর’—ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় উৎসব

এমন শ্রাবণেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর কিডনি কাজ করছিল না। নানা উপসর্গ শরীরে তখন জেঁকে বসেছে। তারপর বাইশে শ্রাবণ থেমে গেলেন কবি। কিন্তু তিনি বারবার ফিরে আসেন, ভোরের আলোর মতো বারবার ফিরে আসেন। গানে, কবিতায়, নাটকে, কথায়। গতকাল শুক্রবার যেমনটা ফিরে এসেছিলেন ছায়ানটে। সেখানে শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘রবীন্দ্র উৎসব’। 

শ্রাবণের চতুর্থ সন্ধ্যায় শ্রোতা আর শিল্পীর দারুণ সম্মিলন ছিল ধানমন্ডি শংকর এলাকার ছায়ানট ভবনের সুপরিসর মিলনায়তনে। সেটি সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি নানা পর্যায়ের রবীন্দ্রসংগীতে মুখরিত ছিল। শুভবোধ ও কল্যাণের প্রত্যাশায় শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র উৎসব।

‘রবীন্দ্রনাথের রচনা কীভাবে আজও বাঙালির মনন আলোড়িত করে’, স্বাগত কথনে সে কথা তুলে ধরেন আবুল হাসনাত
‘রবীন্দ্রনাথের রচনা কীভাবে আজও বাঙালির মনন আলোড়িত করে’, স্বাগত কথনে সে কথা তুলে ধরেন আবুল হাসনাত

দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সম্মেলক গানের সুরে। পূজা পর্বের মাঝেই যেন ভালোবাসা জানানোর পাশাপাশি স্মরণ করা হয় বিশ্বকবিকে। সন্ধ্যার সার্থক আয়োজন দেখে রবীন্দ্রনাথের গানটির প্রথম চরণ মনে পড়ে বারবার, ‘আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে, আহা’।

‘বাজাও তুমি কবি, তোমার সংগীত সুমধুর’—ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় উৎসব। গান শেষে মঞ্চে আসেন লেখক, সম্পাদক আবুল হাসনাত। স্বাগত কথন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনে তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনা কীভাবে আজও বাঙালির মনন আলোড়িত করে এবং সংকটে প্রেরণার পথপ্রদর্শক হয়ে রয়েছে, সে কথা তুলে ধরেন। কথন শেষে পরিবেশিত হয় ছায়ানট শিল্পীদের পরিবেশিত বিশেষ গীতিনৃত্যালেখ্য ‘অনন্ত আনন্দধারা’। এরপর ছিল একক কণ্ঠের সংগীত পরিবেশনা। পাশাপাশি এগিয়ে চলে কবিতা পাঠ ও সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনা।

গীতিনৃত্যালেখ্যর পরে ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’ গান দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের আয়োজনের পরবর্তী পর্ব। একক কণ্ঠে অভয়া দত্ত গেয়ে শোনান ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’, তাহমিদ ওয়াসিম শোনান ‘কী গাব আমি, কী শুনাব, আজি আনন্দধামে’, ফারজানা আক্তার শোনান ‘আজি এ আনন্দসন্ধ্যা সুন্দর বিকাশে, আহা’, পার্থ প্রতীম রায় শোনান ‘সদা থাকো আনন্দে, সংসারে নির্ভয়ে নির্মল প্রাণে’, সেঁজুতি বড়ুয়ার কণ্ঠে গীত হয় ‘এত আনন্দধ্বনি উঠিল কোথায়’, সত্যম কুমার দেবনাথ পরিবেশন করেন ‘হৃদয়বাসনা পূর্ণ হলো আজি মম পূর্ণ হলো, শুন সবে জগতজনে’, সেমন্তী মঞ্জরির গানের শিরোনাম ছিল ‘প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে’, মোস্তাফিজুর রহমান শোনান ‘গায়ে আমার পুলক লাগে’, তানিয়া মান্নান শোনান প্রকৃতি পর্বের ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে’, খন্দকার খায়রুজ্জামান কাইয়ুম পরিবেশন করেন ‘এসো হে এসো, সজল ঘন, বাদল বরিষনে’ আর অভিক দেব গেয়েছেন ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’।

অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনাও ছিল
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনাও ছিল

এ ছাড়া মহিউজ্জামান চৌধুরীর কণ্ঠে ‘আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে’, কাঞ্চন মোস্তফার ‘রিমিকি ঝিমিকি ঝরে ভাদরের ধারা’, স্বাতী বিশ্বাসের ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার’, শুক্লা পালের ‘মধু গন্ধে ভরা মৃদু স্নিগ্ধ ছায়া নীপ কুঞ্জতলে’, সুশান্ত রায়ের ‘চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তি তুমি হে প্রভু’, এ টি এম জাহাঙ্গীরের ‘বর্ষণমন্দ্রিত অন্ধকারে এসেছি তোমারি এ দ্বারে’ গানগুলো ছিল। সম্মিলিত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘পথিক মেঘের দল জোটে ওই শ্রাবণগগন-অঙ্গনে’ ও ‘শ্রাবণের গগনের গায় বিদ্যুৎ চমকিয়া যায়’ গানগুলো। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ।

আজ শনিবার উৎসবের সমাপনী। সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানট ভবনের মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শুরু হবে।