ভাঙল চারুশিল্পীদের মিলনমেলা

২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে আয়োজক, অতিথিদের সঙ্গে অংশ নেওয়া শিল্পীরা ছবি: প্রথম আলো
২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে আয়োজক, অতিথিদের সঙ্গে অংশ নেওয়া শিল্পীরা ছবি: প্রথম আলো

শেষ হলো শিল্পের মহাযজ্ঞ। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী উপভোগ করেছেন বিচিত্র শিল্পসম্ভার। কী ছিল না সেই আয়োজনে? চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে স্থাপনাশিল্প, ভিজুয়াল আর্ট, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র কিংবা পারফরম্যান্স আর্ট।

গত ১ জুন থেকে শুরু হয় শিল্পের সফরটি। সারা দেশের তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের শিল্পের সমাহার ঘটে সে আয়োজনে। বিগত ২১ দিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ছয়টি গ্যালারিজুড়ে ছিল বহুমাত্রিক শিল্পকর্ম। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীদের সৃজিত সেই বিপুল শিল্পসম্ভার মুগ্ধ করেছে শহুরে শিল্পরসিকদের। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার চারটি প্রদর্শনীকক্ষে সজ্জিত শিল্পকর্মগুলো শিল্পরসিকেরা অবলোকন করেছেন মনের আনন্দে। শৈল্পিক সেই আনন্দযজ্ঞ ২৩তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল আজ রোববার। এদিন চিত্রশালা মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত প্রদর্শনীটির সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন অতিথিরা ছবি: প্রথম আলো
সমাপনী অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন অতিথিরা ছবি: প্রথম আলো

রোববার বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। এতে সমাপনী পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন শিল্পী মোস্তফা জামান ও শিল্পী শাওন আকন্দ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক। পরে অংশগ্রহণকারী সব শিল্পীর হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়।
২১ দিনের শিল্প সফরে দর্শকেরা দেখেছেন সারা দেশের ৩১০ জন শিল্পীর ৩২২টি শিল্পকর্ম। বিচিত্র শিল্পরেখায় উজ্জ্বল প্রদর্শনীতে দেখা মিলেছে বিভিন্ন মাধ্যমের ১৫৯টি চিত্রকলা, ৪৫টি ভাস্কর্য, ৫০টি ছাপচিত্র, ১৭টি কারুশিল্প, ৮টি মৃৎশিল্প, ৩৭টি স্থাপনাশিল্প ও ভিডিও আর্ট। সেই সঙ্গে যুক্ত ছিল ৭টি পারফরম্যান্স আর্ট।

প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল শিল্পী সহিদ কাজীর ‘সোনালি আঁশ’ শিল্পকর্মটি। ছবি: আবদুস সালাম
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল শিল্পী সহিদ কাজীর ‘সোনালি আঁশ’ শিল্পকর্মটি। ছবি: আবদুস সালাম

জানা গেছে, এবার প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য ৮৫০ জন শিল্পী আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে শিল্পকর্ম বাছাই কমিটিতে ছিলেন শিল্পী নাসরিন বেগম, শিল্পী মোস্তাফিজুল হক, শিল্পী শেখ সাদী ভূইয়া, শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল ও শিল্পী আনিসুজ্জামান। তাঁরা আবেদন করা শিল্পীদের মধ্যে ৩১০ জন শিল্পীর ৩২২টি শিল্পকর্ম বাছাই করেছেন। পুরস্কারের জন্য সেরা শিল্পকর্ম বাছাইয়ে বিচারক হিসেবে ছিলেন শিল্পী আবদুস শাকুর শাহ, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, শিল্পী রণজীৎ দাস, শিল্পী ফরিদা জামান ও শিল্পী মোহাম্মদ ইউনুস।

সাগর চক্রবর্তীর স্থাপনা-শিল্পকর্ম। শিরোনাম—‘শ্রম মর্যাদা’। ছবি: আবদুস সালাম
সাগর চক্রবর্তীর স্থাপনা-শিল্পকর্ম। শিরোনাম—‘শ্রম মর্যাদা’। ছবি: আবদুস সালাম

এবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী কামরুজ্জামান। তিনি পেয়েছেন নগদ দুই লাখ টাকাসহ পদক। শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও ‍চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র ও স্থাপনা—এই চারটি বিভাগে সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যথাক্রমে পুরস্কারগুলো পেয়েছেন শিল্পী রাফাত আহমেদ, শিল্পী তানভীর মাহমুদ, শিল্পী রুহুল করিম রুমী, শিল্পী সহিদ কাজী। প্রতিটির আর্থিক মূল্যমান ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী উত্তম কুমার তালুকদার, যার মূল্যমান ১ লাখ টাকা। দীপা হক পুরস্কার পেয়েছেন সুমন ওয়াহিদ, যার মূল্যমান ২০ হাজার টাকা ও চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী ফারিয়া খানম তুলি, যার মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা।

শিল্পী: শারদ দাশের ‘উই আর গোইং ফাস্ট!!!’ শিরোনামের স্থাপনা-শিল্পকর্মটি সাড়া ফেলেছিল প্রদর্শনীতে। ছবি: প্রথম আলো
শিল্পী: শারদ দাশের ‘উই আর গোইং ফাস্ট!!!’ শিরোনামের স্থাপনা-শিল্পকর্মটি সাড়া ফেলেছিল প্রদর্শনীতে। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী দেশের চারুশিল্পের বৃহত্তম উৎসব। ১৯৭৪ সালে সমকালীন চিত্রকলা প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির চারুকলাবিষয়ক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এ কর্মকাণ্ডের সূত্র ধরে ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু। প্রতি দুই বছর পরপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।