মায়ের কাছ থেকে ছেলের হারিয়ে যাওয়ার গল্প

‘লেট মি আউট’ নাটকের একটি দৃশ্য
‘লেট মি আউট’ নাটকের একটি দৃশ্য

প্রায় ৯০ বছর আগের গল্প। গল্পের শুরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা ঘটনা। ৯ বছরের এক শিশু হারিয়ে যায়। অথচ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নাটকটি দেখে মনে হয়েছে, গল্পটা একেবারেই সমসাময়িক। আশপাশে নিত্যই ঘটছে এমন ঘটনা! নাটকের নাম ‘লেট মি আউট’। দেখে মনে হয়েছে যেন এটি সময়ের আর্তচিৎকার। গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো নাটকটির ষষ্ঠ প্রদর্শনী। ১৯ এপ্রিল শুক্রবার দুটি শো দিয়ে উদ্বোধন হয় নাটকটির। এরপর দুই দিন দুটি করে প্রদর্শনী হয়েছে।

রুনা কাঞ্চনের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যকার ও নির্দেশক বাকার বকুল। নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে থিয়েটার অঙ্গনে যুক্ত হয়েছে প্রযোজনাভিত্তিক নাট্য-সংগঠন তাড়ুয়া।

১৯২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিন কলিন্স নামে এক মায়ের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে নাটকের গল্প। ৯ বছরের ছেলে ওয়াল্টার কলিন্সকে হারিয়ে ক্রিস্টিন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দ্বারস্থ হন। ক্রিস্টিন কলিন্স ফিরে পেতে চান তাঁর প্রকৃত সন্তান, কিন্তু প্রশাসনিক নিয়মের জালে নানা জটিলতায় অসহায় হয়ে পড়েন ক্রিস্টিন। এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যার ভয়াবহতায় মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগ্লানিতে ভোগেন। একসময় লস অ্যাঞ্জেলেসের নাগরিক জীবন ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে ওঠে। শহরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জার ফাদার নিখোঁজ সন্তানের মা ক্রিস্টিন কলিন্সের পাশে দাঁড়ান।

মায়ের কাছ থেকে ছেলের হারিয়ে যাওয়ার গল্প ‘লেট মি আউট’
মায়ের কাছ থেকে ছেলের হারিয়ে যাওয়ার গল্প ‘লেট মি আউট’

নাটকটি প্রসঙ্গে বাকার বকুল বলেন, ‘মায়ের কাছ থেকে ছেলের হারিয়ে যাওয়ার গল্প। কিন্তু ওই সময় সমাজের বর্বর রীতি, সংস্কৃতি ফুটে উঠেছে, যা এখনো আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। রাষ্ট্রীয় বিচারিক কিংবা প্রশাসনিক কাঠামো জনবান্ধব না হয়ে যখন হয়ে ওঠে ক্ষমতাবানের অনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহার্য শক্তি, তখন নির্দেশক হিসেবে ‘লেট মি আউট’ নাটকটি আমাকে ভাবিয়েছে। ১৯৩০ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনাটি ইতিহাস হলেও অতীত হতে পারেনি। বর্তমানে দাঁড়ানো পায়ের নিচের মাটিতে একই কম্পন অনুভূত হয়। উপযুক্ত ভাবনাগুলোই নাটক লেখা বা নির্দেশনার প্রধান প্রণোদনা।’

নির্দেশক বাকার বকুল ছাড়া নাটকে আরও অভিনয় করেছেন রুনা কাঞ্চন, ইসতিয়াক হোসেন, সোহেল মণ্ডল, তাহসিন আহমেদ, নুরুল আবসার, সাক্ষ্য শহীদ, খায়রুল আলম, জাভেদ জিমি, হাসিবা আহমেদ, শামিম শেখ, খালিদ বিন নাসির, শফিকুল ইসলাম, শাহজাদা সম্রাট চৌধুরী, ফারজানা তুলি, শোয়ায়েব, সোমা রায়, এস এম নাঈম, সাগর, মামুন, ডরেন, নিশা ও তিশা।

১৯ এপ্রিল দুটি শো দিয়ে উদ্বোধন হয় নাটকটির
১৯ এপ্রিল দুটি শো দিয়ে উদ্বোধন হয় নাটকটির

আসলাম অরণ্যের মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনায় নাটকের সংগীত পরিকল্পনা করেছেন রবিউল ইসলাম শশী ও ইসমাইল পাটোয়ারী। শাহনাজ জাহানের পোশাক পরিকল্পনায় নাটকের কোরিওগ্রাফি করেছেন ফরহাদ শামীম। এ ছাড়াও সহকারী নির্দেশনা ও প্রযোজনাটির সার্বিক সমন্বয়ে রয়েছেন ইসতিয়াক হোসাইন। প্রপস পরিকল্পনায় শেখ শামিম। সংগীত প্রয়োগ করেছেন নীনা কাঞ্চন, মাসুমা লিপা, নিগার সুলতানা মিমি, শান স্বপন প্রমুখ।