আলোচিত ৫ কোরীয় নাটক

গার্ডিয়ান: দ্য লোনলি অ্যান্ড গ্রেট গড সিরিজের পোস্টার
গার্ডিয়ান: দ্য লোনলি অ্যান্ড গ্রেট গড সিরিজের পোস্টার
>কোরিয়ান নাটকগুলোয় থাকে সুদর্শন নায়ক, সুন্দরী নায়িকা আর গতানুগতিক ধারার বাইরের গল্প। এই মিশেল দিয়েই কোরিয়ান প্রযোজনাগুলো দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের নানা দেশে এর প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশেও রয়েছে কে–ড্রামার দর্শক। আমরা কথা বলেছি কয়েকজন কে–ড্রামার দর্শকের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সময়ের আলোচিত ৫টি কে–ড্রামা নিয়ে আজকের আয়োজন।
মিস্টার সানশাইন
মিস্টার সানশাইন

মিস্টার সানশাইন

বিকৃত ইতিহাস, তবে সফল

ইতিহাসনির্ভর কোরীয় সিরিজটি যেমন এর আকর্ষণীয় চিত্রগ্রহণ ও দৃশ্যায়নের জন্য প্রশংসিত হয়েছে, তেমনই সমালোচিত হয়েছে এর চিত্রনাট্যের জন্য। কিন্তু এরপরও এর সাফল্য দমানো যায়নি। গত বছর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ২৪ পর্বের নাটকটি। শুরু থেকেই এটা নিয়ে অনেকের অনেক কৌতূহল ছিল। কারণ, আলোচিত কে–ড্রামা ‘গবলিন’–এর নির্মাতা বানিয়েছেন ‘মিস্টার সানশাইন’। শুরুতে প্রত্যাশিত সাফল্য ঠিকই পায় এই সিরিজ। কিন্তু একসময় গিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ওঠে এই প্রেমকাহিনি–নির্ভর সিরিজের বিরুদ্ধে। ১৮ শতকে জাপানের কলোনিয়াল শাসনের সময়কার যে কোরিয়াকে দেখানো হয়েছে নাটকটিতে, তার সঙ্গে ইতিহাসের মিল খুঁজে পান না কোরিয়ার ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইয়ং–সিয়োব। তিনি অভিযোগ তোলেন, প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ডলার খরচ করে সিরিজের যে অংশটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার পুরোটোই ভুল। তিনি একটি অনলাইন পিটিশনে উল্লেখ করেন, ‘নির্মাতারা যত অর্থ নাটকটির দৃশ্যায়নের পেছনে ব্যয় করেছেন, তার কিছু অংশ যদি গবেষণা ও ইতিহাস পড়ায় ব্যয় করতেন, তাহলে এত অভিযোগ উঠত না।’

তবে সব বিতর্ক ছাপিয়ে ‘মিস্টার সানশাইন’ প্রেমের গল্প হিসেবে দারুণ সাড়া ফেলে বিশ্বব্যাপী। এমনকি এখন নেটফ্লিক্সে দেখা যাচ্ছে সিরিজটি এবং এটি কোরিয়ার সর্বোচ্চ আয় করা নাটকের মধ্যে চতুর্থ অবস্থান দখল করে রেখেছে।

গার্ডিয়ান: দ্য লোনলি অ্যান্ড গ্রেট গড
গার্ডিয়ান: দ্য লোনলি অ্যান্ড গ্রেট গড

গার্ডিয়ান: দ্য লোনলি অ্যান্ড গ্রেট গড

নায়ক দেবতা নায়িকা মানবী

নাটকটি কোরিয়ার সর্বোচ্চ আয় করা নাটকের তালিকার ৩ নম্বরে আছে। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় এই ধারাবাহিকের প্রচার। প্রথমে কোরিয়ান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টিভিএনে সম্প্রচার হয়, পরে নেটফ্লিক্সেও উঠেছিল এটি। প্রচারের পর থেকেই এই নাটক বিশাল সাফল্য পায়। নাটকে দেখানো কোরীয় স্থানগুলো হয়ে ওঠে পর্যটনস্থান।

এই নাটককে অনেকে ‘গবলিন’ নামেও চেনেন। নাটকে দেখানো হয় এর নায়ক ৯৩৪ বছর বয়সী অমরত্ব লাভ করা এক দেবতা, যে ৩০ বছরে আটকে আছে। আর নায়িকা হলো স্কুলপড়ুয়া এক কিশোরী। কোরিয়ান লোকগাথা দোক্কায়েবিকে নায়ক গং ইয়ো ওরফে কিম শিনের মধ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে। নায়কের দেবতাসুলভ অবতার ও নায়িকার সরলতা সাধারণ দর্শকদের এই সিরিজের দিকে টেনেছে এবং এটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়। লোকগাথা থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ায় নাটকটি যেমন বয়স্ক দর্শকদের টেনেছে, তেমনই এ সময়ের প্রেক্ষাপটে তৈরি বলে তরুণ দর্শকেরাও গবলিন–এ রীতিমতো আসক্ত হয়ে উঠেছিলেন।

স্ট্রং উইম্যান ডু বং সুন
স্ট্রং উইম্যান ডু বং সুন

স্ট্রং উইম্যান ডু বং সুন

শক্তিশালী নায়িকার দাপট

এই কে–ড্রামা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এর গল্পের কারণে। এতে দেখা যায়, ছোটখাটো একটা মেয়ের ভেতর অতিমানবীয় শক্তি ভর করে। তার সেই অস্বাভাবিক শক্তি দিয়ে সে উঠিয়ে ফেলতে পারে গাড়ি, কুপোকাত করে দিতে পারে বিশালদেহী মানুষকেও। কিন্তু সেই অস্বাভাবিক শক্তিকে লুকিয়ে রাখে মেয়েটি। কারণ, মেয়েটি যাকে ভালোবাসে, সেই ছেলে এমন ক্ষমতার ব্যাপারে জেনে গেলে প্রেম যদি ভেঙে যায় সেই ভয়ে। কিন্তু নানা ঘটনার কারণে নিজের শক্তিকে লুকিয়ে রাখতে পারে না মেয়েটি। ১৬ পর্বের এই নাটকে অনেক মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই বিশেষ ক্ষমতার নানা দিক দেখা যায়।

২০১৭ সালে নির্মিত ‘স্ট্রং উইম্যান ডু বং সুন’ নেটফ্লিক্সের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ওঠার পর এতই জনপ্রিয়তা পায় যে এটির মার্কিন সংস্করণ নিয়েও শোনা যায় কানাঘুষা। এ বছরের শুরুর দিকে খবর ছড়ায়, বিশ্বখ্যাত রেস্টলার রন্ডা রৌজি মার্কিন সংস্করণে বিশেষ ক্ষমতাধর সেই মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন। মার্কিন/ইংরেজি সংস্করণে সিরিজটির নাম হবে ‘স্ট্রং গার্ল’। কিন্তু এখনো সেই সংস্করণের ব্যাপারে আর কিছু জানা যায়নি। তাই ‘স্ট্রং উইম্যান ডু বং সুন’ একাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বময়।

হোয়াটস রং ইউথ সেক্রেটারি কিম
হোয়াটস রং ইউথ সেক্রেটারি কিম

হোয়াটস রং ইউথ সেক্রেটারি কিম

গৎবাঁধা গল্পের সফল সিরিজ

রোমান্টিক কমেডি সিরিজ ‘হোয়াটস রং ইউথ সেক্রেটারি কিম’ নিয়ে যেমন ফুটেছে প্রশংসার ফুলঝুরি, তেমনই আছে সমালোচনায়। এই নাটকের তারকা অভিনেতা পার্ক সেও–জুনের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব নাটকের অন্যতম আলোচিত বিষয়। তবে এর বিরুদ্ধে উঠেছিল ‘ক্লিশে’র অভিযোগও। কারণ এতেও দেখানো হয়েছে সেই গতানুগতিক ধনী সুদর্শন বসের প্রেমে পড়েছে কর্মজীবী সাদামাটা সেক্রেটারি। কিন্তু একসময় তাদের সামাজিক ও মানসিক অবস্থানের পার্থক্যটাই হয়ে ওঠে প্রেমে বাধা।

গৎবাঁধা প্রেমের গল্প হওয়ার পরও সিরিজটি ব্যবসাসফল কোরিয়ান টিভি সিরিজের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এর কারণ হিসেবে সমালোচকেরা বলছেন, কোরিয়ান সিরিজগুলোর জনপ্রিয়তা সাধারণত নির্ভর করে সুদর্শন নায়কের ওপর। যে নায়ককে নাটকে অনেক ধনী ও ক্ষমতাবান হিসেবে দেখানো হবে। আর ‘হোয়াটস রং উইথ সেক্রেটারি কিম’ ঠিক সেই সূত্র ধরেই বানানো। নায়ক পার্ক সেও–জুনের চরিত্রটি এ সময়ের কোনো রাজপুত্রের চেয়ে কম নয়। তাই নারী দর্শকদের খুব টেনেছে এই সিরিজ। সেই সঙ্গে সিরিজের নায়িকার সাদামাটা উপস্থাপন কে–ড্রামার পুরুষ ভক্তদের কাছেও হয়ে উঠেছে প্রিয়।

স্কাই ক্যাসেল
স্কাই ক্যাসেল

স্কাই ক্যাসেল

উচ্চশিক্ষার লড়াই

বিশ্বের সবচেয়ে শিক্ষিত দেশের তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়া আছে প্রথম পাঁচের মধ্যে। শিক্ষাকে এই দেশের প্রতিটি পরিবার দারুণ গুরুত্ব দেয়। আর এটা নিয়েই ‘স্কাই ক্যাসেল’ সিরিজটি তৈরি। কে–ড্রামা বিশ্লেষকেরা বলেন, নাটকের বিষয়টিই ‘স্কাই ক্যাসেল’–এর সাফল্যের কারণ। এই নাটক এখন সর্বোচ্চ আয় করা কোরিয়ান নাটকের তালিকার ১ নম্বরে আছে। ২০১৮ সালে কোরিয়ায় এবং ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সে সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে এই নাটক পৌঁছে যায় সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে।

নাটকে দেখানো হয়, স্কাই ক্যাসেল নামের একটি স্থানের ৪ ধনী পরিবার তাদের সন্তানের উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক কঠোর প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়। নিয়োগ করে একজন ‘স্কুল ক্যারিয়ার ম্যানেজার’। কোরিয়ার তিনটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়— সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি ও ইয়োনসেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ, রাজনীতিসহ আরও অনেক কূটকাজও দেখা যায় ‘স্কাই ক্যাসেল’–এ। নাটকে দেখানো হয়, সন্তানের শিক্ষার সাফল্য আর ব্যর্থতা দুইয়ের জন্য দায়ী করা হয় একজন মাকে। যদি সন্তান সফল হয়, জিতে যায় মা। আর ব্যর্থ হলেও পুরো দায়ভার আর ধিক্কার মায়ের ঝুলিতেই গিয়ে পড়ে। তাই এই বিষয়ও বিশ্বের অনেক দেশের দর্শককে সিরিজটির প্রতি আকর্ষণ করেছে।

গ্রন্থনা : আদর রহমান