আলোচিত ৫ কোরীয় সিনেমা

>কোরিয়ার সমৃদ্ধ বিনোদনের বাজারের বড় অংশজুড়ে সিনেমার প্রভাব। কে-পপেরও আগে থেকে পশ্চিমা বাজারে কে-মুভির দোর্দণ্ড প্রতাপ। জনপ্রিয় ঘরানার বেশির ভাগ কোরীয় ছবি টান টান রোমাঞ্চকর ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে আপনাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখবে। তাদের ভৌতিক, থ্রিলার, অ্যাকশন ঘরানার ছবিগুলো তো হরহামেশাই হলিউডের বড় বড় নির্মাতা ও প্রযোজকেরা অনুসরণ করছেন। চলুন একনজরে পাঁচ ধাঁচের পাঁচটি কোরীয় সিনেমার ব্যাপারে জেনে নিই। যেগুলো দেখা হয়েছে, আরেকবার দেখে ঝালাই করে নিতে পারেন। আর যাঁদের দেখা হয়নি, তাঁরা এই তালিকা সংগ্রহে রাখতে পারেন।
ট্রেন টু বুসান
ট্রেন টু বুসান

ট্রেন টু বুসান

রোমাঞ্চকর এক যাত্রা

কোরীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় হয়েছে ট্রেন টু বুসান দিয়ে। জম্বি কাহিনি নিয়ে বানানো হলিউডের ছবিগুলো যদি আপনার কাছে একঘেয়ে লাগতে শুরু করে, তাহলে স্বাদ বদলের জন্য দেখে ফেলুন এই ছবি। সিয়োক-য়ু ও সু-আন, বাপ-বেটির সঙ্গে আপনিও চড়ে বসুন ভয় আর আবেগমিশ্রিত এক রোমাঞ্চকর ট্রেনে!

সারা শহর তখন জম্বি দখলে। এরই মধ্যে সিয়োক-য়ু ও সু-আন যাচ্ছে বুসানে। জম্বি আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করে তারা কি শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে? জানতে হলে ১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিটের ছবিটি আপনাকে দেখে ফেলতে হবে। ট্রেন টু বুসান পরিচালনা করেছেন ইয়ন স্যাং-হো।

আ মোমেন্ট টু রিমেম্বার
আ মোমেন্ট টু রিমেম্বার

আ মোমেন্ট টু রিমেম্বার

আ ফিল্ম টু রিমেম্বার

অনেকেই তাঁদের দেখা সেরা রোমান্টিক ছবির তালিকায় আ মোমেন্ট টু রিমেম্বারকে ওপরের দিকে রাখেন। ছবিটি অবশ্য সে রকম একটা অবস্থানই দাবি করে। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া আ মোমেন্ট টু রিমেম্বার­–এবলা হয়েছে চুল-সু ও সু জিন নামে দুই তরুণ-তরুণীর গল্প। ভালোবেসে বিয়ে করে দুজন। ছবির গল্প মোড় নেয় তখন, যখন সু জিনের আলঝেইমার ধরা পড়ে। একে একে সবকিছুই ভুলে যেতে থাকে সে, এমনকি প্রিয়তম স্বামীর মুখটাও! স্ত্রী সবকিছু ভুলে গেছে জেনেও তার হাত ছাড়ে না চুল-সু, সে ঠিকই পাশে থাকতে চায়। ছবি শেষেও আপনার ঘোর কাটতে সময় লাগবে মূলত তিনটি কারণে—প্রথমত, চমৎকার আবহসংগীত। দ্বিতীয়ত, মূল চরিত্রে থাকা জাং য়ু-সাং এবং সন য়ি-জিনের অভিনয়। তৃতীয়ত—ছবির দুর্দান্ত সমাপ্তি।

ওল্ড বয়
ওল্ড বয়

ওল্ড বয়

আক্কেল গুড়ুম!

ওল্ড বয় দেখে অবধারিতভাবেই আপনি ভাববেন—একটা গল্প এমনও হতে পারে! কিছু কিছু ছবি আছে, যা সিনেমা সম্পর্কে আমাদের ধারণা, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান আমূল পাল্টে দেয়। ওল্ড বয় সে রকমই একটি ছবি।

ছবির শুরুতেই কে বা কারা যেন অপহরণ করে নিয়ে যায় ছবির প্রধান চরিত্র ডে-সুকে। একটা ছোট্ট ঘরে আটকে রাখা হয় তাকে। সঙ্গী কেবল একটা টেলিভিশন। বদ্ধ ঘরে একটা টেলিভিশনের সঙ্গে কেটে যায় ডে-সুর জীবনের ১৫টা বছর। এরপর হঠাৎই একদিন ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। কে, কেন তাকে ১৫ বছর আটকে রাখল? আবার কেনই বা ছেড়ে দিল? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করে খ্যাপাটে লোকটা। পার্ক চ্যান-য়ুক পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। ২০০৪ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ওল্ড বয় গ্রাঁ প্রি পুরস্কার পেয়েছিল। পাম দ্য’–এর পর এটিই কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার।

মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন
মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন

মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন

হাসি-কান্নার গল্প

মিরাকল ইন সেল নাম্বার সেভেন একটি কমেডি ছবি। তবে জেনে রাখুন, আপনি যদি খুব কঠিন হৃদয়ের মানুষ না হয়ে থাকেন, তাহলে সম্ভবত হাসির ছবিটি দেখতে বসে আপনাকে চোখও মুছতে হবে!

ছবির গল্প লি ইয়ং-গু নামে এক প্রতিবন্ধী বাবা আর তার মেয়ে য়ি-সিয়ুংকে নিয়ে। ঘটনাচক্রে খুন ও ধর্ষণের মামলায় ফেঁসে যায় লি। জেলখানায় তার জায়গা হয় কুখ্যাত সব অপরাধীর সঙ্গে, ৭ নম্বর সেলে। একসময় সেলের অপরাধীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে লির। তারাই জেলখানার ভেতরে য়ি-সিয়ুংকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। কুখ্যাত সব অপরাধী আর বাবার সঙ্গে ৭ নম্বর সেলে লুকিয়ে থাকে একটা ছোট্ট মেয়ে।

ছবিতে য়ি-সিয়ুং-এর চরিত্রে অভিনয় করেছে কাল সো-য়োন। বাচ্চা মেয়েটির অভিনয় এত অপূর্ব, নিশ্চয়ই ছবি শেষেও তার মায়াকাড়া মুখটা দীর্ঘক্ষণ আপনার মনে গেঁথে থাকবে। 

দ্য অ্যাডমিরাল: রোরিং কারেন্টস
দ্য অ্যাডমিরাল: রোরিং কারেন্টস

দ্য অ্যাডমিরাল: রোরিং কারেন্টস

১ নম্বর আসনে

আজ থেকে ৫ বছর আগে, এই জুলাই মাসেই মুক্তি পেয়েছিল দ্য অ্যাডমিরাল: রোরিং কারেন্টসক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই ছবিই দেখা হয়েছে সর্বাধিকবার, আয়ও করেছে সবচেয়ে বেশি। ওল্ড বয় খ্যাত তারকা চোয় মিন সিক অভিনীত চলচ্চিত্রটি মুক্তির ১২ দিনের মধ্যেই পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলেই বোধ হয়, মুক্তির আগে থেকেই দ্য অ্যাডমিরাল: রোরিং কারেন্টস নিয়ে দর্শকের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ১৫৯৭ সালের ঐতিহাসিক মিয়োংইয়েং-এর যুদ্ধ উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে।

জাপানের ৩৩৩টি যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে মাত্র ১২টি জাহাজ নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিলেন কোরিয়ার নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল য়ি সুন-সিন। বুঝতেই পারছেন, টান টান রোমাঞ্চ এই ছবির মূল আকর্ষণ। যাঁরা যুদ্ধের ছবি পছন্দ করেন, আর যাঁরা করেন না, দুই ধরনের দর্শকের জন্যই এটি ‘অবশ্যদেখ্য’। দ্য অ্যাডমিরাল ছবির পরিচালক কিম হান-মিন।

গ্রন্থনা: মুসাব্বির হুসাইন