আশি পেরিয়ে আমিনা সুন্দরী

থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক আমিনা সুন্দরীর একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক আমিনা সুন্দরীর একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

জীবন তো একটাই। সুখ-দুঃখ, হাসি–কান্না সব এই এক জীবনের মধ্যে। ‘জীবন শেষ তো বেবাক শেষ।’ কান্নামাখা কণ্ঠে চিৎকার করে বলছিলেন আমিনা। সবাই তাঁকে আমিনা সুন্দরী বলে ডাকে। নাটকের চরিত্র আমিনা যখন সংলাপটি বলছিলেন তখন মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নীরবতা। আমিনার কষ্টে যেন দর্শকও ব্যথিত। ‘আমিনা সুন্দরী’ কোনো নির্দিষ্ট সময়ের গল্প নয়, এ গল্প সর্বকালের, পৃথিবীর সব মানুষের জীবনের সত্য।

প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো লোককাহিনি ‘নছর মালুম ও ভেলুয়া সুন্দরী’ অবলম্বনে গড়ে উঠেছে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক আমিনা সুন্দরী। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের প্রবঞ্চনাকে উপজীব্য করে লেখা এই নাটকের ৮০তম প্রদর্শনী হলো গতকাল শুক্রবার, নাটক সরণির (বেইলি রোড) মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে।

আমিনা সুন্দরী থিয়েটার আর্টের ১২তম প্রযোজনা।
আমিনা সুন্দরী থিয়েটার আর্টের ১২তম প্রযোজনা।

পতিনিষ্ঠ আমিনা সুন্দরীর স্বামী নছর পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় ভিনদেশে। স্বামীর এই বিদায় আমিনার জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। নছর ভিনদেশি নারীকে বিয়ে করে সংসার বাঁধে। আমিনা নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পরে বন্দী হয় এক সওদাগরের ঘরে। এমনই নাটকীয় গল্পের সংগীতনির্ভর নাটক আমিনা সুন্দরী।

২০০৭ সালে মঞ্চে আসে ‘আমিনা সুন্দরী’
২০০৭ সালে মঞ্চে আসে ‘আমিনা সুন্দরী’

‘আমিনা সুন্দরী’ নাটকটি লিখেছেন এস এম সোলায়মান। নির্দেশনা দিয়েছেন রোকেয়া রফিক। এটি থিয়েটার আর্টের ১২তম প্রযোজনা। ২০০৭ সালে মঞ্চে আসে ‘আমিনা সুন্দরী’। এরই মধ্যে দেশ–বিদেশে নাটকটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতেও নাটকটির প্রদর্শনী হয়েছে।

শুক্রবার নাটকটির আশিতম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো।
শুক্রবার নাটকটির আশিতম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো।

নির্দেশক রোকেয়া রফিক বেবী বলেন, ‘আমিনা সুন্দরী আমার কাছে কোনো সময়ের গল্প নয়, সবকালে পৃথিবীর সব প্রান্তেই এ গল্প সত্যনিষ্ঠ। তাই এক আমিনার গল্পে আমি উপস্থাপন করেছি বহু আমিনার গল্প। আমিনা সুন্দরীর গল্প এ নাটকে তুলে আনা হয়েছে হাজার নারীর গল্প হিসেবে।’ তিনি জানান, বাঙালি সমাজে বহমান ‘নছর মালুম’ ও ‘ভেলুয়া সুন্দরী’ উপাখ্যানে আশ্রয় করে নতুন এক গল্প ‘আমিনা সুন্দরী’। বাঙালি নারীর চিরন্তন প্রেমের স্বরূপ এতে প্রস্ফুটিত। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর প্রতি পুরুষের প্রবঞ্চনার অধুনা দৃষ্টিভঙ্গি এতে বিধৃত। নাটকের গল্প শুরু হয় ‘আমিনা’র অপেক্ষার মধ্য দিয়ে। আমিনার ভালোবাসার মানুষ নছর বর্মামুল্লকে (বর্তমানে মিয়ানমার) গিয়েছে বাণিজ্যে। কিন্তু পুরুষশাসিত সমাজে নারীর মনমানসিকতা, চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্যই নেই। একের পর এক সমাজের নানা কুচক্রী নানা সমস্যার বিস্তার ঘটাতে থাকে। কিন্তু আমিনা মনপ্রাণ সঁপে নছরের জন্যই প্রতীক্ষা করতে থাকে। একসময় আমিনার পরিবার সমাজের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের কাছে হার মানে। অথচ আমিনার আদ্যোপ্রান্ত অপেক্ষাই নছরকে ঘিরে। নাটকের একপর্যায়ে দেখা যায় নিজের সম্মান ও অর্থলোভে নিজের মা কৌশলে আমিনাকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চায়। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে রক্ষা পেলেও শেষ পর্যন্ত আমিনাকে পরাস্ত হতে হয় পুরুষশাসিত সমাজের কৌশলের কাছে। পলায়নরত আমিনা ধৃত হয় ভোলো সওদাগরের কাছে। ভোলো সওদাগরকে নানা কৌশলে অবদমিত করেও নছরের জন্যই প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকে আমিনা।

আমিনা সুন্দরী নাটকের শিল্পী এবং কলাকৌশলীরা
আমিনা সুন্দরী নাটকের শিল্পী এবং কলাকৌশলীরা

নাটকটিতে কাজ করেছেন সেলিম মাহবুব, কামরুজ্জামান মিল্লাত, সঙ্গীতা চৌধুরী, অপসরা মৌ, পল্লবী, ফরিদা লিমা, কামাল রায়হান, শিল্পী চৌধুরী, রেজাউল সুজন, ফেরদৌস আমিন বিপ্লব, হাসনাত প্রদীপ, নুরুজ্জামান বাবু, স্বাধীন শাহ, হাসনাত প্রদীপ, নীল চৌধুরী, চন্দন রেজা প্রমুখ।