গানে গানে রবীন্দ্রস্মরণ

সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সমবেত রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন দিয়ে শুরু হয় রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানটি। ছবি: প্রথম আলো
সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে সমবেত রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন দিয়ে শুরু হয় রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানটি। ছবি: প্রথম আলো

১৯৪১ সালে জীবনের শেষ দিনগুলোয় অসুখে ভুগছিলেন কবি। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই। কিন্তু কিছুতে কিছু হচ্ছে না। শেষে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এদিন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ক্যালেন্ডারের হিসাবে দিনটি ছিল ২২ শ্রাবণ, ৭ আগস্ট। এখন অবশ্য আমাদের দেশে দিনটি পালন করা হয় ৬ আগস্টে।

কবিগুরুর জীবনদীপ নিভে গেলেও তাঁর সৃজন ও সৃষ্টিশীলতার দীপ আজও নেভেনি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি এককভাবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন শক্তিশালী ভিত্তির ওপর। বহুমাত্রিক প্রতিভায় সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সব কটি শাখায়। এমনকি বাঙালি জাতিসত্তা গঠনে, বাঙালির মনন বিকাশে, মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি সংগ্রাম-আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তাই তো কবির জয়ন্তী বা প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে স্মরণ করা হয়। ২২ শ্রাবণ আসন্ন। তার আগে আজ ১৮ শ্রাবণ শুক্রবার ছুটির দিনের রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীতগুরু আজাদ রহমানকে ‘রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা স্মারক সম্মাননা’ তুলে দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীতগুরু আজাদ রহমানকে ‘রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা স্মারক সম্মাননা’ তুলে দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো

‘সমুখে শান্তি পারাবার’ শিরোনামে গানে রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ আয়োজনের শুরুতেই দেশের সংগীতগুরু আজাদ রহমানকে ‘রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা স্মারক সম্মাননা’ তুলে দেওয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সম্মাননা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।

আজাদ রহমানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন দুই দিনের রবীন্দ্রস্মরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বরেণ্য সাংবাদিক কামাল লোহানী। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার সহসভাপতি মকবুল হোসেন। সভাপতির বক্তব্য দেন সংস্থার সভাপতি ও কণ্ঠশিল্পী তপন মাহমুদ। এর আগে আজাদ রহমানকে নিয়ে লেখা শ্রদ্ধাঞ্জলি স্তুতি পাঠ করেন তপন মাহমুদ।

‘সমুখে শান্তি পারাবার’ স্লোগান ধারণ করে দুই দিনের স্মরণানুষ্ঠানের প্রথম দিনের সূচনা হয় ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ সমবেত সংগীতের মধ্য দিয়ে। এরপর প্রথম দিনের আয়োজনে সংস্থার অর্ধশতাধিক শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের গান পরিবেশন করেন। ছিল বেশ কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীর কণ্ঠে গান ও কবিতা আবৃত্তি।

প্রথম দিনের আয়োজনে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার অর্ধশতাধিক শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের গান পরিবেশন করেন। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম দিনের আয়োজনে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার অর্ধশতাধিক শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন পর্যায়ের গান পরিবেশন করেন। ছবি: প্রথম আলো

প্রথম দিনে একক পরিবেশনায় অংশ নেন সালমা আকবার, দীপা চৌধুরী, রাবিতা সাবাহ, সীমা সরকার, মাহজাবীন রহিম মৈত্রী, মিতা দে, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, আঁখি হালদার, মীরা মণ্ডল, সুবাহ আকবর, সুমা রায়, রুমঝুম বিজয়া রিসিল, সাজেদ আকবর, গোলাম হায়দার, জয়ন্ত আচার্য্য, শফিকুর রহমান, বিষ্ণু মণ্ডল, নকুল চন্দ্র দাস, জীবন চৌধুরী, মতিউর রহমান, অভিক দে, আবদুর রশিদ, কাজল মুখার্জি, সাগরিকা জামালী, রমা মণ্ডল, খোকন দাস, বনানী দত্ত, তন্বী সাহা প্রমুখ। শিল্পীরা শোনান ‘আমার নিশীথরাতের বাদলধারা, এসো হে গোপনে’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না’, ‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই’, ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’, ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে’, ‘আমার প্রাণের ’পরে চলে গেল কে’, ‘নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা’, ‘জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে’, ‘শ্রাবণবরিষন পার হয়ে কী বাণী আসে ওই রয়ে রয়ে’, ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না’, ‘ভরা থাক স্মৃতির সুধায়’, ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’, ‘আসা–যাওয়ার পথের ধারে’, ‘আমার এই পথ–চাওয়াতেই আনন্দ’সহ আরও গান।

অনুষ্ঠানে ছিল একক গানের পরিবেশনা। গান করছেন গোলাম হায়দার। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
অনুষ্ঠানে ছিল একক গানের পরিবেশনা। গান করছেন গোলাম হায়দার। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

কাল শনিবার দ্বিতীয় ও সমাপনী দিন সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এদিন একক সংগীত পরিবেশন করবেন তপন মাহমুদ, বুলা মাহমুদ, পীযূষ বড়ুয়া, প্রমোদ দত্ত, মাখল হাওলাদার, মহাদেব ঘোষ, মামুন জাহিদ খান, তানজিমা তমা, সর্ব্বানী চক্রবর্তী, অনিন্দিতা রায়, লিলি ইসলাম, রমা বাড়ৈ, কনক খান, নির্ঝর চৌধুরীসহ অনেকে। এদিনও অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে সমবেত সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত বলে জানালেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ।