বন্ধুর পথে বন্ধু তাঁরা

‘আমি বন্ধুর সঙ্গে অন্ধকারেও হাঁটতে পছন্দ করব বহুদূর, একা হাঁটতে চাই না সূর্যের আলো থাকলেও।’ বলেছিলেন হেলেন কেলার। অস্কার ওয়াইল্ড বন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন আরেক কথা—‘যে কেউ বন্ধুর কষ্টে সমব্যথী হতে পারে, কিন্তু বন্ধুর সাফল্য উদ্যাপন করতে পারে যে, সে-ই তো প্রকৃত বন্ধু।’

আমরা প্রথমে যে বন্ধুযুগল নিয়ে কথা বলব, তাঁদের ব্যাপারে খাটে অ্যারিস্টটলের বলা কথাটি, ‘বন্ধু হব, বলে দেওয়া খুব সহজ, কিন্তু বন্ধুত্ব পরিপক্ব হতে সময় লাগে।’ পূর্ণিমা আর ফেরদৌসের বন্ধুত্ব সে রকমই। এই বন্ধুত্বের বয়স কুড়ি ছাড়িয়েছে।

২১ বছর আগে মধু পূর্ণিমা ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। হঠাৎ বৃষ্টি সিনেমার শুটিংয়ের সময়ই এই ছবির শুটিং করেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। এরপর রাজ্জাক পরিচালিত সন্তান যখন শত্রু ছবিতেও ছিলেন তাঁরা। এরপর অনেকগুলো ছবিতে গড়ে ওঠে তাঁদের জুটি। একটা পর্যায়ে দুজনের বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা এখন পারিবারিক। পূর্ণিমা বলেন, ‘বন্ধুত্বে পুরোটাই বিশ্বাস, মনমানসিকতা, বোঝাপড়ার ওপর নির্ভর করে। বন্ধুত্ব সবার সঙ্গে হয়ে ওঠে না। আমাদের অঙ্গনে তো এসব হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কোনো না কোনোভাবে ফেরদৌস আর আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। বিপদে আমরা দুজন দুজনের পাশে থাকি। বন্ধু যখন বিপদে এগিয়ে আসে, তখনই তো বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়। সে কারণই বন্ধুত্বটা এখন পর্যন্ত টিকে গেছে।’

ফেরদৌস বলেন, ‘বন্ধুত্ব করার জন্য কিছু গুণের দরকার হয়। সেই গুণাবলি পূর্ণিমার মধ্যে আছে। যেখানে আস্থা, বিশ্বাস, নির্ভরশীলতা, ভরসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ—এই বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমাদের মধ্যে নানা সময়ে নানা খুনসুটি হয়। মান-অভিমান হয়—কিন্তু আমাদের দুজনের যখন দুজনকে প্রয়োজন পড়ে, তখন পাশে গিয়ে দাঁড়াই। পূর্ণিমার অনেক সময় মুড বদল হয়। প্রথম দিকে বিরক্ত লাগত। পরে যখন বোঝার চেষ্টা করলাম, তখন দেখি, আসলে এটাই সে, যা তার ভেতরের মানুষ। এই যে বুঝে নেওয়া, বন্ধুত্বে এটা বেশি জরুরি।’

বন্ধুত্ব নিয়ে ভার্জিনিয়া উলফের কথাটা বেশ খাটে শবনম ফারিয়া আর সিয়ামের ক্ষেত্রে। ভার্জিনিয়া বলেছিলেন, ‘কেউ যায় ধর্মযাজকের কাছে, কেউ যায় কবিতার কাছে, আমি যাই বন্ধুর কাছে।’ শবনম ফারিয়ার কণ্ঠে যেন সে কথারই প্রতিধ্বনি। তিনি বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু সিয়াম। এখন চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও টেলিভিশনে একই সময়ে পথচলা। দুজনের বেশ কয়েকজন বন্ধু একে অপরের ভালো বন্ধু। সেই সূত্রে নিজেদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া খুবই ভালো। আমরা দুজনে যা চিন্তা করি, একই রকম করি। সে ভালো মানুষও। আমি মনে করি, বন্ধুত্ব সব সময় ভালো মানুষের সঙ্গেই হওয়া উচিত। আমাদের দুজনের বন্ধুত্বের শুরুটা ২০১৩ থেকে।’

সিয়াম আর ফারিয়ার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা পারিবারিক সম্পর্ক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সিয়ামের বিয়েতে তাঁর বোন থাকলে যা যা করতেন, ফারিয়া সেই দায়িত্বই পালন করেছেন। হলুদের দিন ভোর চারটা পর্যন্ত সিয়ামের বাড়িতে ছিলেন ফারিয়া। আবার ফারিয়ার বিয়ের সময় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন সিয়াম ও তাঁর স্ত্রী।
ডানপিটে সংগীতশিল্পী মিনারের প্রথম অ্যালবাম। ২০০৮ সালে প্রকাশিত এই অ্যালবাম দিয়েই পরিচিতি পান তিনি। ২০১১ সালে বাজারে আসে আড়ি।
মিনারের প্রথম দুটি অ্যালবামের সব কটি গানের সংগীতায়োজন করেছিলেন তাহসান। সেই থেকে দুজনের পরিচয়। শুরুতে সম্পর্কটা শুধুই পেশাগত থাকলেও একটা সময় ব্যক্তিগত সম্পর্কের আদান-প্রদানও হয় দুজনের।

তাহসান বলেন, ‘এত বছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে আমার ভালো চায় যে, আমিও তার ভালো চাই, সে হচ্ছে মিনার। ছোট ভাই কিন্তু সে আমার ভালো বন্ধু। ও ব্যক্তিগত সংকট নিয়ে আমার কাছে আসে, আমিও আমার অনেক সমস্যার কথা ওর সঙ্গে ভাগাভাগি করি। সবচেয়ে আপন মনে হয় ওকে।’
তাহসান আর মিনারের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা জেনে আমাদের কি মনে পড়ে যাচ্ছে না আলেক্সান্ডার দ্যুমার বলা কথাটি, ‘বন্ধুত্ব হচ্ছে সেই ব্যাপার, যাতে কে কী দিল, তা মনে রাখে না দুজনের কেউই, কিন্তু কে কী পেল, সেটাই মনে রাখে দুজনই!’