পর্দায় বন্ধু যখন পোষা প্রাণী

হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ‘জয়েস হল’ ১৯১৯ সালের আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে সবাইকে কার্ড পাঠাতেন। তবে বন্ধুত্ব দিবসের শুরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৩৫ সালের আগস্টের প্রথম শনিবার। সেদিন মার্কিন সরকার এক লোককে হত্যা করে। তার প্রতিবাদে পরদিন অর্থাৎ আগস্টের প্রথম রোববার সেই লোকের সবচেয়ে কাছের বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই বন্ধুত্বকে শ্রদ্ধা জানাতে মার্কিন কংগ্রেস আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

তার পরই এই দিবসের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। কিন্তু ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাইকে ‘আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস’ ঘোষণা করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটা দেশে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস পালন করা হয়। মার্কিন টিভি ও চলচ্চিত্রে অসংখ্য কাল্পনিক ও বাস্তবের প্রাণীকে দেখা গেছে বিশ্বস্ত বন্ধুর ভূমিকায়। জীবনের তোয়াক্কা না করে এরা বন্ধুর পাশে থেকেছে, বিপদে হাত বাড়িয়েছে।

এসব চরিত্র মূল চরিত্রের খুব কাছের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে বড় ও ছোট পর্দায় দর্শকদের হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু চলচ্চিত্রের একজন হিরো, নায়িকা বা অন্যান্য চরিত্রের মতো এই চরিত্রগুলো কি তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পেয়েছে? তাদেরকে কি মনে রেখেছে মানুষ? কিছু চরিত্রকে দর্শক এত আপন করে নিয়েছে যে সে হাসলে দর্শক হেসেছে, তার বিপদে দর্শক উদ্বিগ্ন হয়েছে। আবার স্বপ্নে, বাস্তবে, কল্পনায় তার মতো একটা বন্ধুকেই কামনা করেছে। টিভি ও চলচ্চিত্রের সেসব সেরা প্রাণী বন্ধুর চরিত্র নিয়েই বন্ধু দিবসের এই আয়োজন।

গোস্টের শেষ দৃশ্যে তাকে এভাবেই দেখা গেছে
গোস্টের শেষ দৃশ্যে তাকে এভাবেই দেখা গেছে

গোস্ট, গেম অব থ্রোনস

এই তালিকার প্রথমেই যার নাম না থাকলেই নয়, সে গোস্ট। সে আসলে কিছুটা নেকড়ের মতো দেখতে হলেও একটা একটা বিশেষ প্রজাতির কুকুর। ব্রিটিশ অভিনয়শিল্পী কিট হ্যারিংটনের শরীরে জীবিত হওয়া জন স্নো এই কুকুরটাকে কুড়িয়ে পান ও পোষা প্রাণীর মতো বড় করেন। ধবধবে সাদা রঙের গোস্টের চোখগুলো ছিল লাল আর ধারালো। শুরু থেকে গোস্ট ছিল স্নোর বিশ্বস্ত সহচর ও সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কিন্তু অষ্টম সিজনের চতুর্থ এপিসোডে গোস্টকে যখন বিদায় বলতে হয়, সেটা মোটেই ভালো লাগেনি ভক্তদের। গোস্টের এই পরিণতি মেনে নেননি তাঁরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

হ্যারি পটারের সেরা সহচর এই হেডউইগ
হ্যারি পটারের সেরা সহচর এই হেডউইগ

হেডউইগ, হ্যারি পটার

এই তালিকায় যদি হ্যারি পটারের পোষা প্যাঁচা হেডউইগের নাম না থাকে, তাহলে কীভাবে চলবে বলুন? হেডউইগ সেই প্যাঁচা, খাঁচা যার মোটেই পছন্দ না। যখনই দরকার পড়েছে, হ্যারি পটারের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে সে চিঠি পৌঁছে দিয়েছে। হ্যারির প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে কখনো কুণ্ঠিত হয়নি হেডউইগ। তবে বড় পর্দার এই হেডউইগ কিন্তু বাস্তবে তৈরি করেছিল মহা সমস্যা। একটার পর একটা হ্যারি পটার সিরিজের ছবি বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল, আর শিশু-কিশোরেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল দেখতে। তারাও হ্যারি পটারের মতো পোষা প্রাণী হিসেবে প্যাঁচা চায়! ভারতে আইন করেও তখন প্যাঁচার কেনা-বেচা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। এমনকি ৩০ প্রজাতির প্যাঁচার ভেতর প্রায় ১৫ প্রজাতির প্যাঁচা বিলুপ্তির মুখে পড়েছিল!

কোলারিনকে একাধিকবার বাঁচিয়েছে এই দ্য কাট
কোলারিনকে একাধিকবার বাঁচিয়েছে এই দ্য কাট

দ্য ক্যাট, কোরালিন

ব্রিটিশ লেখক নেইল গেইম্যান ২০০২ সালে ‘কোরালিন’ নামে একটা ফ্যান্টাসি থ্রিলার বই প্রকাশ করেন। সেই বইয়ের অনুকরণে ২০০৯ সালে ‘কোরালিন’ চলচ্চিত্র মুক্তি পেল। বইয়ের মতো চলচ্চিত্রও দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সেই জনপ্রিয়তায় ১১ বছরের কিশোরী কোরালিনের সঙ্গী, বন্ধু ও পোষা বিড়াল ‘দ্য কাটে’র কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। পর্দায় দেখা যায় ধীরে ধীরে কোরালিন আর দ্য কাটের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। এই কাট কিন্তু কোন সাধারণ বিড়াল না। তার যখন খুশি সে উধাও হয়ে যেতে পারে। আবার যখন খুশি হাজির হতে পারে। আর দ্য কাট তার এই ক্ষমতাবলে অনেকবার বাঁচিয়েছে কোরালিনকে।

চিউবাকাকে সবাই বিশ্বাস করে, ভালোবাসে
চিউবাকাকে সবাই বিশ্বাস করে, ভালোবাসে

চিউবাকা, স্টার ওয়ারস

পিটার মেহিউ মারা গেলেন কিছুদিন আগে, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯। ১৯৭৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত স্টার ওয়ারস ফ্রাঞ্চাইজির পাঁচটি চলচ্চিত্রে তাঁকে চিউবাকার চরিত্রে দেখা যায়। এই চরিত্র দিয়েই তিনি মানুষের হৃদয়ে অমরত্ব পেয়েছেন। পিটারের ৭ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা তাকে এই চরিত্র পেতে সাহায্য করেছিল। চিউবাকা কাল্পনিক গ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসা একটা লোমশ প্রাণী। সে মানুষের চেয়ে লম্বা আর শক্তিশালী। চিউবাকা বিশ্বের জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর একটি। সে সাহসী। আর সে হ্যান সোলোর সঙ্গী, বন্ধু। সে তাঁকে চোরাকারবারির কাজে সহায়তা করত। কারণ মানুষ চিউবাকাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করত, ভালোবাসত। আর সোলোকে দেখত সন্দেহের চোখে। কিন্তু চিউবাকা কখনো বিনা কারণে কাউকে হত্যা করেনি।

এই দম্পতির ঘরে পিটার, সুজান ও লুসি
এই দম্পতির ঘরে পিটার, সুজান ও লুসি

মিস্টার অ্যান্ড মিসেস বিভার, দ্য ক্রনিকলস অব নার্নিয়া

দ্য ক্রনিকলস অব নার্নিয়া বিশ্বের সেরা শিশুসাহিত্যের একটি। পরবর্তী সময়ে এই সিরিজের সাতটি বইয়ের কাহিনিকে বড় পর্দায় তুলে ধরা হয়। সেই চলচ্চিত্রগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

মিস্টার এবং মিসেস বিভার, তাঁরা দুজনই এই ফ্রাঞ্চাইজির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র টামনাসের বন্ধু। তাঁরা নার্নিয়ার আসল রাজা, আসলানের পক্ষে। আর নার্নিয়ার স্বঘোষিত রানী হোয়াইট উইচের বিপক্ষে। হোয়াইট উইচকে তো সবাই চেনেনই। যার জাদুর প্রভাবে নার্নিয়ায় সব সময় শীত বিরাজ করে। সে তার বিরুদ্ধাচরণকারীদের পাথরে পরিণত করে দেয়। তারা সব সময় বাচ্চাদের হোয়াইট উইচের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দেখে। মজার মজার কথা আর কর্মকাণ্ড দিয়ে দর্শক হাসায়। বাচ্চাদের জন্য তাদের দরজা সব সময় খোলা। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিস্টার বিভার পিটার, সুজান ও লুসিকে নিরাপদে রাজার কাছে পৌঁছে দেয়।