সংগ্রহে এক লাখ নিদর্শন, প্রদর্শিত হচ্ছে মাত্র ৬ হাজার

জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ । ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ । ছবি: প্রথম আলো

১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় এক লাখ নিদর্শন। তার মধ্যে মাত্র ৬ হাজার নিদর্শন প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে নতুন নকশা অনুযায়ী আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জাদুঘর কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে বর্তমানের চেয়ে ৪-৫ গুণ নিদর্শন প্রদর্শনের সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩-তে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আজ বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেন। ‘জাদুঘর সভ্যতার স্মৃতিঘর’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি জানান, আজই (বুধবার) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বিষয়ে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘জাদুঘর যেকোনো জাতির সভ্যতা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। সে জন্য কোনো দেশে ভ্রমণে গেলে আমরা সর্বপ্রথম ওই দেশের জাদুঘর পরিদর্শন করে থাকি।’ 

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘জাদুঘর সারা বাংলাদেশের মানুষের। একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতার ধারক ও বাহক। এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের সন্তানদের আমাদের গৌরবগাথাকে জানানোর কাজটি করতে পারবে একমাত্র জাদুঘর।’ 

অনুষ্ঠানে জাদুঘরের নিয়মিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘জাদুঘর সমাচার’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
অনুষ্ঠানে জাদুঘরের নিয়মিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘জাদুঘর সমাচার’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, অল্প কিছু নিদর্শন নিয়ে ব্রিটিশদের সচিবালয়ের ছোট একটি ঘরে ঢাকা জাদুঘর নামে যে প্রতিষ্ঠানটি পথচলা শুরু করেছিল, আজ সেই প্রতিষ্ঠানটিই এই উপমহাদেশের বৃহত্তর জাদুঘর, যা আমাদের গর্বের, আত্মমর্যাদার বিষয়।’

সম্মানিত অতিথি বক্তব্যে এনামুল হক বলেন, ‘জাদুঘরকে জাদুঘর সভ্যতার স্মৃতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব আমাদের। আমাদের চারটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলো—সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা। একটি জাদুঘর যত বেশি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা এবং প্রকাশনায় উন্নত হবে, তত বেশি সমৃদ্ধ হবে সেই জাদুঘর।’ অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘জাদুঘরকে জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিস্ময়কর নিদর্শন দেখতে আমরা জাদুঘরে আসি এবং দেখার পর যদি মনের ভেতরে বারবার অনুরণিত হয়, তাহলেই জাদুঘরের উদ্দেশ্য সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।’ 
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. আবদুল মজিদ। সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ জানান, জাদুঘরকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে আজ ই-টিকিটিং ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হলো। অনুষ্ঠানে জাদুঘরের নিয়মিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘জাদুঘর সমাচার’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।