বাবা না থাকলে পরিবার সুখে থাকে না: অনন্ত জলিল

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সেলিম। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সেলিম। ছবি: প্রথম আলো

‘আমরা মুখে বলি, ভালো কাজ করতে হবে। কিন্তু এফডিসিতে ভালো কাজের সুযোগ কম। আমি ইরানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় কাজ করতে গিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সমিতিগুলোর সঙ্গে তিনবার বসতে হয়েছে আমাকে।’ বললেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এখানে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তিনি এভাবেই বললেন।

নবনির্বাচিত নেতাদের স্বাগত জানিয়ে অনন্ত জলিল বলেন, ‘একটি পরিবারে বাবা না থাকলে পরিবার সুখে থাকে না। চলচ্চিত্রের অভিভাবক সংগঠন হলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি। দীর্ঘদিন পর সংগঠনটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখন কাজ করতে হবে। তবে নির্বাচিত কমিটিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

পরিচালক ও প্রযোজক কাজী হায়াৎ বলেন, ‘সিনেমা শেষ হয়ে গেছে। আমি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। প্রায় প্রতিদিন কাকরাইলে ফোন করেছি, সিনেমার খোঁজ নিয়েছি। দিনের পর দিন সিনেমার মন্দা খবর আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি দূর দেশে বসে ভেবেছি, কীভাবে সিনেমা বাঁচবে। সিনেমাকে রক্ষা করার দিন চলে এসেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি গঠিত হওয়ায় চলচ্চিত্রের সুদিন উঁকি দিচ্ছে। আজ যাঁরা দায়িত্ব নিচ্ছেন, তাঁরা সিনেমাবান্ধব মানুষ। আমার বিশ্বাস, তাঁরা সিনেমার নতুন দিন উপহার দেবেন।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রযোজক ও চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল ও অন্যরা। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রযোজক ও চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল ও অন্যরা। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ বাচ্চু বলেন, ‘যাঁরা দায়িত্ব নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন। বহু সমস্যা কাটিয়ে চলচ্চিত্রের অভিভাবক সংগঠন ফিরে এসেছে। যাঁরা দায়িত্ব নিচ্ছেন, তাঁদের মেধা মনন দিয়ে এবার চলচ্চিত্র এগিয়ে নেওয়ার পালা। এই সমিতি না থাকার কারণে চলচ্চিত্র অনেক অনিয়মের মধ্যে চলে যায়। চলচ্চিত্রের যে ঐতিহ্য ছিল, এই কমিটি তা ফিরিয়ে আনবে।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘সাত বছরের বেশি সময় ধরে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্বের অপেক্ষায় ছিলাম, তা আজ পূরণ হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির দায়িত্বে থাকা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিমের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বিশাল প্রত্যাশা নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা বড় আশা নিয়ে এই শক্তিশালী কমিটিকে নির্বাচিত করেছি। তাঁরা যদি হতাশ করেন, তাহলে চলচ্চিত্র শেষ হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে স্বাগত জানাতে আসেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এবং নতুন-পুরোনো পরিচালক ও প্রযোজকেরা। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটিকে স্বাগত জানাতে আসেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এবং নতুন-পুরোনো পরিচালক ও প্রযোজকেরা। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘চলচ্চিত্রের ক্রান্তিলগ্ন আজ। সবাই এখন একসঙ্গে বসে সমস্যা সমাধান করতে হবে। ঘরে বসে একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ হবে না। প্রদর্শককে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রদর্শক হতে হবে। একজন মেশিন দেবেন, একজন সাউন্ড দেবেন, আরেকজনের হল—এটা হবে না। হলের মালিককে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ছবি চালাতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম. হামিদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক নেতা নাসির উদ্দিন দিলুসহ প্রযোজক, পরিচালকেরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ নতুন-পুরোনো প্রযোজক ও পরিচালকেরা।

সবশেষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমসহ নবনির্বাচিত ২১ সদস্যদের কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সেলিম। তিনি কমিটির সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান।

পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন জেমী।