বলিউডের ছোট খানরা

তারকা হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় কী? তারকার সন্তান হওয়া! তারকাদের তো তা–ও চলচ্চিত্র করে, প্রেম করে, বিয়ে করে, সামাজিক কর্মকাণ্ড করে ‘খবর’ হতে হয়। আর এই ‘স্টার কিড’রা জন্মই নেয় খবর হয়ে। এরপর যা-ই করে, তা-ই খবর। কী জামা পরে, কী খায়, কার সঙ্গে খেলে, কোন স্কুলে পড়ে—সবই স্থান পায় গণমাধ্যমে। আর বলিউডে কয়েক দশক ধরেই চলছে খানদের খানদানি রাজত্ব। আর এই খানদের সন্তানেরাও গণমাধ্যমের কল্যাণে জন্মের পর বুঝেছে, তারা সাধারণ কেউ নয়। প্রায়ই দেখা যায়, শুধু ফিডার খেয়েই, বলটা পা দিয়ে খেলেই, সানগ্লাস পরেই বা গণমাধ্যমকর্মীদের হাত নেড়ে টা টা দিয়েই তাদের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে গেছে তারকা মা–বাবাকেও। এ রকম তিন ‘খানপুত্র’কে নিয়ে এ আয়োজন।


তৈমুর আলী খান 

পতৌদি পরিবারের সবচেয়ে বড় তারকা কে? অপশনগুলো হলো মনসুর আলী খান পতৌদি, শর্মিলা ঠাকুর, সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুর খান। সঠিক উত্তর, ছোট নবাব তৈমুর আলী খান! কারিনা কাপুর খান বছরের ‘মোস্ট স্টাইলিশ আইকন’ পুরস্কার হাতে নিয়ে তা উৎসর্গ করেছেন ছেলেকে। বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে স্টাইলিশ ছেলের পক্ষ থেকে মা হিসেবে এই পুরস্কার নিয়েছি।’ এমনকি রণবীর সিংয়ের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমার ছেলে কিন্তু তোমার চেয়েও স্টাইলিশ।’

এই ছবিটি ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বরের। তৈমুর আলী খানের জন্মের কিছুক্ষণ পর তোলা। করণ জোহরের একটি টুইট বার্তায় জানা গেল, জন্মেছে তৈমুর। মা হয়েছেন কারিনা। আর তৃতীয়বারের মতো বাবা হয়েছেন সাইফ আলী খান। তৈমুর জন্ম নেওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের দাওয়াত করে মিষ্টি খাইয়েছিলেন সাইফিনা। সেই তৈমুর এখন নার্সারি স্কুলে পড়ে।

এই দেখুন পতৌদির সর্বশেষ নবাব। মা কারিনা চেয়েছিলেন সন্তানকে একটি স্বাভাবিক শৈশব দিতে। কিন্তু সেই ইচ্ছা অচিরেই ভুলে যেতে হয়েছে তাঁকে। সেলিব্রিটিদের সন্তানদের মধ্যে তৈমুরের ফলোয়ার সবচেয়ে বেশি। তৈমুর তার লাল গাল আর নীল চোখের জন্য বেশ জনপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ফ্যান ক্লাবও খোলা রয়েছে তৈমুরকে নিয়ে। এই ফ্যান ক্লাবগুলো আবার খুব সক্রিয়। তারা নিয়মিত তৈমুরের সব খবর সরবরাহ করে। এই পেজ থেকেই মা কারিনা কাপুরের অনুকরণে তৈমুরের ‘ছাম্মাক ছাল্লো’ গানে নাচের ভিডিও ভাইরাল হয়। এর আগে আরেক বলিউড তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ঘোষণা দেন, তিনিও নাকি তৈমুরের ফ্যান!

তৈমুরের সঙ্গে খেলছেন সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুর। পৃথিবীর সব মা–বাবা একই। তিনি তারকা হন বা একজন সাধারণ মানুষ। সাইফ ও কারিনা দুজনই কাজে ব্যস্ত থাকলেও মন পড়ে থাকে সন্তানের কাছে। সাইফ যতই নবাব বা বলিউড তারকা হন না কেন, সন্তানের জন্য তিনিও ঘোড়া হন। আর মা কারিনা তো মাঝেমধ্যে তৈমুরকে নিজের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে শুটিংয়ে যান।

প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে সাইফ আলী খানের কন্যা, বলিউড তারকা সারা আলী খান, সোহা আলী খান ও কুনাল খেমুর কন্যা ইনায়া নাওমি, তৈমুর আলী খান ও সাইফ আলী খানের বড় ছেলে ইব্রাহিম আলী খান। অর্থাৎ চার ভাইবোন! পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইনায়ার সঙ্গে খেলছে তৈমুর।

আলোকচিত্রীরা যেমন তৈমুরকে ভালোবাসেন, তৈমুরও এই ছোট্ট বয়সেই বেশ মানিয়ে নিয়েছে তাঁদের সঙ্গে। শত শত ক্লিকেও এতটুকু বিরক্ত হয় না। উল্টো আলোকচিত্রীদের সঙ্গে হাত নেড়ে নেড়ে গল্প করে। তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকায়, পোজ দেয়। সে–ও একজন পুরোদস্তুর বলিউড স্টারের চেয়ে কম যায় না কোনো অংশে। পাশের ছবিটি সম্প্রতি হরিয়ানার পতৌদি যাওয়ার সময় এয়ারপোর্ট থেকে তোলা। এ সেই ছবি, যেটা তোলার সময় সাইফ রেগে একজন আলোকচিত্রীকে বলেছিলেন, ‘এবার ক্ষান্ত দাও, বাচ্চাটা তো অন্ধ হয়ে যাবে!’ কিন্তু তৈমুর তখন বেশ আরামে বাবার কাঁধে দুই পা দুলিয়ে বসে ছিল। আর বরাবরের মতোই আলোকচিত্রীর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছিল।

আবরাম খান
বলিউডের আরেক ‘কিউটের ডিব্বা’ আবরাম খান। বাবা শাহরুখ খানের মতো আবরাম খানকেও সবাই একনামে চেনে। সম্প্রতি শাহরুখ খান যে চলচ্চিত্র থেকে অলিখিতভাবে ছুটি নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে ছুটে বেড়াচ্ছেন শ্রীলঙ্কার সমুদ্রপাড়ে, তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে আবরামের। শাহরুখ তো আগেই জানিয়েছেন, বলিউডকে জীবনের অনেকটা সময় বিলিয়ে দিয়েছেন। আর এদিকে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে। তিনি নাকি টেরই পাননি। এবার তাই ছোট ছেলে আবরাম খানের বড় হওয়া দেখবেন আর বড় দুই সন্তানকেও সময় দেবেন। সম্প্রতি আবরাম ‘বোটিং’ আর ‘ভোটিং’ শব্দ দুটি গুলিয়ে ফেলছিল বলে বিভ্রান্তি দূর করতে ছেলেকে নিয়ে নৌকায় চড়েছেন।

এই হলো আবরামের বাবা, মা, ভাই, বোন—পুরো পরিবার। আবরামের জন্ম ২০১৩ সালের ২৭ মে, সরোগেসি পদ্ধতিতে। ৩৪ সপ্তাহে মাত্র দেড় কেজি ওজন নিয়ে প্রিম্যাচিউর বেবি হিসেবে জন্মেছিল আবরাম। ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, গৌরীর ভাবি নামিতা শিবর নাকি আবরামের সারোগেট মা। শাহরুখ ও গৌরীর ভ্রুণ কৃত্রিমভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় নামিতার গর্ভে। জন্মের প্রায় এক মাস পর তাঁর জন্মের খবর আসে নানা কানাঘুষা হয়ে। মুম্বাইর মাশরানি হসপিটাল ফর উইমেনে জন্ম নেওয়া এক শিশুর অভিভাবকের নাম হিসেবে দেখা যায় শাহরুখ আর গৌরীর নাম। সেখান থেকেই গণমাধ্যম জানতে পারে আবরামের জন্মের খবর।

তৃতীয়বার বাবা হতে গিয়ে ভালো ঝক্কি পোহাতে হয়েছে শাহরুখকে। সন্তান জন্মের আগেই লিঙ্গ নির্ধারণের অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কারণ, ভারতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ও বেআইনি। এমনকি শাহরুখের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাও ঠুকে দেন সমাজকর্মী বর্ষা দেশপান্ডে। এসব কারণে বাবা হওয়ার পর দুঃখ আর আনন্দের মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে বলেই জানান শাহরুখ। ব্যক্তিগত বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি দেখে তিনি প্রচণ্ড বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন। জনসমক্ষে আবরামের কোনো ছবি যাতে প্রকাশিত হতে না পারে, তার সব ব্যবস্থা করেন। তাই আবরামের একদম ছোটবেলার ছবি পাওয়া যায় না।

মা–বাবার সঙ্গে ছোট্ট আবরাম। আর পরের ছবিতে একটু বড় হয়েই বাবা–মায়ের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন আবরাম। শাহরুখের অপর দুই সন্তান আরিয়ান আর সুহানার ক্ষেত্রে নাকি কাজের ব্যস্ততায় পিতৃত্বের স্বাদ ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেননি শাহরুখ। তাই আবরামের বড় হওয়ার প্রায় প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে চেয়েছেন তিনি।

একদম ছোটবেলায় শাহরুখ যতটা পেরেছেন, গণমাধ্যম থেকে দূরে রেখেছেন আবরামকে। একটু বড় হওয়ার পর প্রায়ই এই আবরামের সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেন। এই ছবিগুলো নাকি ঘর থেকে দূরে গিয়ে কাজের সময় শাহরুখকে শক্তি জোগায়, স্বস্তি দেয়। ওপরের ছবি দুটি সে রকমই। আর এখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবরামের ছবি পোস্ট করা নেশায় পরিণত করেছেন শাহরুখ!

এই যে এক ফ্রেমে তিন ‘জুনিয়র খান’ ভাইবোন—সুহানা, আবরাম ও আরিয়ান। বাবা আর বড় ভাইয়ের মতো আবরামেরও হাসলে গালে টোল পড়ে। লাইক ফাদার, লাইক সানস! আবরাম নামটি নাকি ইসলাম ধর্মের নবী ইবরাহিম (আ.) থেকে অনুপ্রাণিত। আর এই নামের নাকি একটা আন্তর্জাতিকতা আছে। তাই এই নাম রাখা।

আজাদ রাও খান
বলিউডের মিস্টার পার্ফেকশনিস্ট আমির খানের তৃতীয় ও কিরণ রাওয়ের প্রথম জন্ম নেওয়া সন্তান আজাদ রাও খান। এর আগে ২০০৯ সালে কিরণ রাও একবার গর্ভবতী হন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত গর্ভপাত হয়। আজাদ জন্ম নেয় সরোগেট পদ্ধতিতে। আজাদের আগে প্রথম স্ত্রী রীনার ঘরে আমির খানের জুনাইদ ও ইরা নামের দুই সন্তান আছে। কিন্তু ২০০২ সালে বিচ্ছেদের পর ওই দুই সন্তানের অভিভাবকত্ব পান রীনা। ৫ ডিসেম্বর ২০১১ সালে আজাদের জন্মের পর আমির খান একাধিকবার জানিয়েছেন, তাঁর সব আনন্দের উৎস আজাদ।

সরোগেট পদ্ধতিতে আজাদ জন্ম নেওয়ার বেশ কিছুদিন পর গণমাধ্যম জানতে পারে আজাদের জন্মের খবর। আমির খানের চাচা, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের নাম অনুসারে মা কিরণ ছেলের নাম রাখেন আজাদ। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয় মা আর বাবার নামের পরের অংশ।

মাত্র ২ বছর বয়সেই আজাদ মুগ্ধ করেছে তাঁর বাবাকে। তখন মা কিরণ রাও অরুণাচল প্রদেশে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। আর আজাদের দেখভালের দায়িত্ব নেন আমির খান। তাঁর শুটিং কিংবা মহড়ার সময় পাশেই থাকত আজাদ। ট্যাপ ড্যান্স শিখতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন আমির। তখন মাত্রই অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন। নাচটি যথেষ্ট কঠিন হওয়ায় বাড়িতে এবং ছবির সেটে ঘন ঘন এর চর্চা করতেন তিনি। তখন বাবার এই নাচ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখত আজাদ। আর হঠাৎ একদিন আমির দেখলেন, আজাদ ট্যাপ ডান্সের কঠিন মুদ্রা নকল করে নিজের মনে নাচছে! তাই তো বাবা আমির বলেন, ‘ও আমাকে সম্পূর্ণ করেছে।’

ছবিতে দেখা যাচ্ছে আজাদ, বড় বোন ইরা, মা কিরণ আর বাবা আমির খান। প্রাণীদের জন্য কল্যাণ সংস্থা আছে ইরার। এই সংস্থার হয়ে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচে আজাদ খেলেছিল বাবার বিপরীতে। অভিষেক বচ্চন আর মা কিরণ রাওয়ের সঙ্গে একই দলে। আজাদের গোলেই জিতে যায় তার দল। অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বরিয়ার মেয়ে আরাধ্যর সঙ্গে আজাদের আবার খুব ভাব। একটি অনুষ্ঠানে আরাধ্যকে না দেখতে পেয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছিল আজাদ!