তুরুপের তাস!

শাকিব খান, অপূর্ব, আফরান নিশো, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবিন,শবনম ফারিয়া, তানজিন তিশা, ইমরান
শাকিব খান, অপূর্ব, আফরান নিশো, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবিন,শবনম ফারিয়া, তানজিন তিশা, ইমরান

এখন নাটক আর গানের ভিডিও টেলিভিশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। কিংবা সিনেমা শুধু প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় ভাসছে না। পাশাপাশি এখন বিনোদন ভুবনের সব কাজই ছড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। ইউটিউব থেকে শুরু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন ধরনের স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে এই নাটক, গান আর সিনেমা দেখা যাচ্ছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যেমন ভাবছে কীভাবে চ্যানেলের টিআরপি বাড়বে, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কর্তারাও ভাবছেন প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রাইব, ভিউ নিয়ে। তাঁরা খেয়াল করছেন কোন কোন তারকার ব্যাপারে দর্শকের যথেষ্ট আগ্রহ ও সমর্থন রয়েছে। সেই তারকাদের পেছনেই ছুটছেন এই কর্মকর্তারা। তবে সব মাধ্যমেই মিলেই দর্শকের পছন্দের এই তারকার সংখ্যা বেশি না। এই শিল্পীরা এখন টেলিভিশন চ্যানেল, ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কর্মকর্তা, পরিচালক ও প্রযোজকের কাছে তুরুপের তাস!

নাটকে ঘুরে ফিরে হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পীর চাহিদাই বেশি। সেই তালিকায় আছেন জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, তাহসান, অপূর্ব, আফরান নিশো, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মেহজাবিন, তানজিন তিশা, তৌসিফ, জোভান, শবনম ফারিয়া প্রমুখ। তাঁদের কারও কারও অভিনীত নাটক ইউটিউবে আপ হওয়ার এক দিনের মাথায় লক্ষাধিক ভিউ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি হু হু করে বাড়ছে চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব। বিশেষ করে ইউটিউব চ্যানেল ও টেলিভিশন চ্যানেলে উৎসবের নাটকগুলোর ক্ষেত্রে এই তারকাদের চাহিদা ব্যাপক। এই তারকাদের পেছনে প্রযোজক–পরিচালকেরা লাইন ধরে থাকছেন শিডিউলের জন্য। তাঁদের পেছনে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী তাঁরা।

বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন অভিনেতা আফরান নিশো। তিনি বলেন, ‘একজন প্রযোজক বিনিয়োগ করবে লাভের আশায়। যাঁকে দিয়ে কাজ করলে লাভ হবে, তাঁকে নিয়েই তো কাজ করবেন। যাঁর প্রচার ও প্রসার আছে, যিনি নিজের যোগ্যতা দিয়ে উঠে এসেছেন, তাঁর দিকেই সবার নজর থাকবে। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। যে তারকার যখন সময়, সেই তারকার পেছনেই প্রযোজক ও চ্যানেলের কর্মকর্তারা ছুটবেন। সব সময়ই এমনটি হয়ে আসছে।’

নিশো আরও বলেন, ‘এখন আমাদের চাহিদা আছে। একসময় থাকবে না। তখন অন্যরা আসবেন।’

সিনেমাওয়ালা ইউটিউব চ্যানেলের কর্ণধার ও পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। এ বছর ঈদুল ফিতরে সিনেমাওয়ালার জন্য নুসরাত ইমরোজ তিশা, তানজিন তিশা, আফরান নিশো, মেহজাবিনসহ আরও কয়েকজন তারকার পাঁচটি নাটক তৈরি করেন তিনি। তাঁর মতে, দর্শকের কাছে এই তারকাদের চাহিদা তুঙ্গে।

মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘এমন চিত্র বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও আছে। জনপ্রিয় তারকাদের নিয়ে সবাই কাজ করতে চাই। তাঁদের নিয়ে কাজ করলে টেলিভিশনের টিআরপি বাড়ে। ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব ও ভিউ বাড়ে। কারণ, দেশজুড়ে তাঁদের প্রত্যেকের দর্শক আছেন। এই তারকাদের অভিনীত নাটকগুলোর গল্প যদি ভালো হয়, তাহলে তো কথাই নেই। আরেক ধাপ এগিয়ে যায় নাটকগুলো। খেয়াল করলে দেখবেন, তাঁদের কোনো কোনো নাটকের ভিউ ইউটিউবে প্রকাশের ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ পার হয়ে যায়। তাহলে ইউটিউব চ্যানেল মালিকেরা তো তাঁদের পেছনেই ছুটবেন।’

মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ আরও বলেন, যে প্রযোজকেরা নাটকে বিনিয়োগ করেন, তাঁদের তো বিনিয়োগ থেকে লাভ চাই। সুতরাং এই শিল্পীদের দিয়ে পুঁজি ফেরার নিশ্চয়তা থাকে। এ কারণেই তাঁদের চাহিদা বেশি।

এই তারকাদের চাহিদার বিষয়টি খুব সহজ ও সাধারণ বলে মনে করেন পরিচালক মাবরুর রশীদ। তিনি বলেন, এই শিল্পীদের দর্শক চাহিদা বেশি। তাই তাঁদের অভিনীত নাটক দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল মালিক টিআরপি বাড়াতে চায়। একইভাবে ইউটিউব চ্যানেলের মালিকেরাও সাবস্ক্রাইব ও ভিউ বাড়াতে চায়।

সিনেমার ক্ষেত্রে একই অবস্থা। তবে এই তালিকায় একজন নায়িকাও নেই। নায়কদের মধ্যে এখন একমাত্র শাকিব খানই প্রযোজক আর হল মালিকদের কাছে তুরুপের তাস। আরিফিন শুভ ও সিয়াম আহমেদ খানিকটা আলোচনায় থাকলেও তাঁদের পেছনে বিনিয়োগ পুরোপুরি উঠে আসার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না প্রযোজকেরা। এখন ঢাকার চলচ্চিত্রে একমাত্র শাকিব খানের সিনেমায় বিনিয়োগ উঠে আসার শতভাগ সম্ভাবনা আছে। সিনেমার এই মন্দ অবস্থায় শাকিব খানকে নিয়েই কিছু ছবি তৈরি হচ্ছে। তাঁর ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে দর্শক আসছেন।

প্রযোজকেরা বলছেন, ঢাকার চলচ্চিত্রে এখন শাকিব খানের সিনেমা ছাড়া অন্য কোনো শিল্পীর সিনেমা সেভাবে চলছে না। ইদানীং সিয়াম আহমেদের কিছু দর্শক তৈরি হয়েছে। তবে এখনো প্রযোজকদের কাছে নির্ভরশীল হতে পারেননি সিয়াম। তাঁর জন্য আরও কিছু সময় লাগবে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিট প্রোডাকশনের চেয়ারম্যান প্রযোজক তাপসী ফারুক বলেন, এখন সিনেমায় যতটা বাজার আছে, তা শুধু শাকিব খানকে ঘিরেই। দেড় কোটি টাকা বাজেটে তাঁকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করলে বিনিয়োগ উঠে আসবে। তবে এর বেশি খরচ করলে লোকসানের সম্ভাবনা বেশি। তার পরও বলব, শাকিব খান মন্দের ভালো। তাঁর অভিনীত ছবির কারণে দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো এখনো চালু আছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ঢাকার চলচ্চিত্রে এখন ওয়ান অ্যান্ড অনলি শাকিব খান। তাঁর ছবিতে বিনিয়োগ ফিরে আসছে। হলের কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে। তবে সিয়াম ও আরিফিন শুভকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে এক কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে সিনেমা বানালেন বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

যে সংগীতশিল্পীর গানে দর্শক ভিউ বেশি, যাঁর গানের কারণে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব বাড়বে, সেদিকেই হাঁটছে অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আসিফ আকবর, তাহসান, হাবিব, মিনার, ইমরান, মিনার, কনাসহ হাতেগোনা কয়েকজনের চাহিদা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এখন ইমরানকে ঘিরেই। ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ বলেন, এমনিতেই গানের বাজার পড়ে গেছে। তারপরও অডিও–ভিডিও প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথম পছন্দ ইমরান আর কনা। তাঁদের গানে দর্শক ভিউ বেশি। তা ছাড়া আসিফ আকবর, হাবিব, তাহসান, মিনারের গানেও যথেষ্ট ভিউ হয়। তাই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের নিয়েও কাজ করছে। এর বাইরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কিছু শিল্পী নিয়েও কাজ করছে।

ইমরানের ব্যাপারে দর্শক ও শ্রোতাদের আগ্রহের কথা জানালেন অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির কর্ণধার সাহেদ আলী। তিনি বলেন, এখন গানের বাজারের অবস্থা খারাপ। সেই ক্ষেত্রে ইমরান ছাড়া আর কারও পেছনে বিনিয়োগ করলে তা ফেরত আসছে না। গান ছাড়ার পর ইমরান নিজেই তাঁর গানের ব্যাপক প্রচার করেন। ফলে সব মিলিয়ে তাঁর গান অনেকটাই এগিয়ে যায়। নিজের গান নিয়ে তাঁর আন্তরিকতা একটু বেশি।