ফোন বেজে উঠলেই বরখাস্ত

ভীষণ ঘাড় বাঁকা লোক কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো। যেন সিনেমার পরিচালক নন, একজন রগচটা শিকারি। শিকারের সময় টুঁ শব্দটি করলে স্বয়ং সহযাত্রীর ঘাড় মটকে দিতে পিছপা হন না তিনি। এই ট্যারান্টিনো তাঁর শেষ ছবি ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’-এ একটা কঠোর নিয়ম চালু করেছিলেন। শুটিং সেটে কারও ফোন বেজে উঠলেই তাঁর চাকরি নাই!

স্বাভাবিক নিয়মে হলিউডের ছবিগুলো যে পরিমাণ অর্থ আয় করে, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিটি ততটা পারেনি বটে। কিন্তু এটি যে এ বছরের অন্যতম সেরা নির্মাণ, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা নির্মাতা হিসেবে কঠোর নিয়ম মেনে চলেন তিনি। এ ছবি ঘিরে চলুন জেনে নিই মজার কয়েকটি ঘটনা।

চলচ্চিত্র পরিচালক কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো
চলচ্চিত্র পরিচালক কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো


ফোন বেজে উঠলেই বরখাস্ত
‘বানিয়ে বলছি না, কারও ফোন বেজে উঠলেই ঘাড় ধরে বের করে দিতেন লোকটা। সোজা বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আগে থেকে কোনো সতর্কবার্তা নেই, কারও মুখের দিকেও তাকান না তিনি। এমনকি টুং করে ম্যাসেজ আসার শব্দ হলেও।’ একটি রেডিও অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেছেন অভিনেতা টিমোথি অলিফ্যান্ত। তিনি বলেন, ‘শুটিং সেটের বাইরে থাকত একটা ফোন বুথ। খুব দরকার হলে সেখানে গিয়ে ফোন করার অনুমতি দিতেন ট্যারান্টিনো।’

‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে ব্র্যাড পিট ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও
‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে ব্র্যাড পিট ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও


চিত্রনাট্য থাকত লকারে
কাটাকাটি শেষে চিত্রনাট্যের শেষ সংস্করণটি লকারে তালাবদ্ধ করে রাখতেন ট্যারান্টিনো। একদম নিরাপদে রাখা চাই সেটা। কোনো কলাকুশলী যদি সেটা পড়তে চান, তাহলে যেতে হবে পরিচালকের বাড়ি বা অফিসে। আর এ সময় তিনি সামনে বসে থাকেন। ঘটনাটি জানিয়েছেন অভিনেত্রী মারগট রুবি, অভিনেতা ব্র্যাড পিট ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। আগের তিনটি ছবির কাহিনি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে ভদ্রলোক পুরোপুরি সতর্ক হয়ে গেছেন। ছবিগুলো ছিল ২০০৯ সালের ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’, ২০১২ সালের ‘ডিজ্যাঙ্গো আনচেইনড’ এবং ২০১৫ সালের ‘দ্য হেটফুল এইট’। এরপর থেকে যে চিত্রনাট্য পড়তেন, তাঁকে রীতিমতো লিখিত দিব্যি দিতে হতো যে কাহিনির সামান্যও ঘুণাক্ষরে কাউকে বলা যাবে না।

এই সেই শ্যারন টেট, যার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারগট রুবি
এই সেই শ্যারন টেট, যার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মারগট রুবি


শ্যারন টেটের আসল গয়না
অভিনেত্রী মারগট রুবি এ সিনেমায় কিছু গয়না পরেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে কিছু গয়না ছিল ১৯৬৯ সালের মার্কিন অভিনেত্রী শ্যারন টেটের আসল গয়না। এমনকি তাঁর বোনের সঙ্গেও কথা হয়েছিল রুবির। সেটাই তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে খুন হয়েছিলেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা টেট। যদিও ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে সেটা একটু অন্য রকম করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ব্র্যান্ডি নামের এই পিটবুল কুকুরটিই চেটে দিয়েছিল অভিনেতা পিটকে
ব্র্যান্ডি নামের এই পিটবুল কুকুরটিই চেটে দিয়েছিল অভিনেতা পিটকে


পিটকে চেটেছিল পিটবুল
ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যের জন্য একটি পিটবুল কুকুর চেটে দিয়েছিল অভিনেতা ব্র্যাড পিটকে। এ জন্য কাঁধে কিছু শিশুখাদ্য মাখাতে হয়েছিল এই অভিনেতাকে। সে কি অস্বস্তিকর অনুভূতি! সিনেমায় কুকুরটির নাম ছিল ব্র্যান্ডি। পুরো ছবিতে ক্লিফের চরিত্রে ব্র্যাডপিট একাই অভিনয় করেছেন। তবে ব্র্যান্ডির চরিত্রে অভিনয় করেছে তিনটি পিটবুল কুকুর। প্রতিটি দৃশ্যের আগেই এ তিনটি কুকুরের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে যথেষ্ট সময় দিতে হয়েছে ব্র্যাড পিটকে। আর অভিনেতা কুকুর ব্র্যান্ডির নামে একটি ডগফুডের নামকরণ করেছেন ট্যারান্টিনো।

‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে মারগট রুবি
‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে মারগট রুবি


ব্রুস লি ও ব্র্যাড পিটের মারপিট
যে মারপিটের দৃশ্যে ব্রুস লি ও ব্র্যাড পিটকে দেখা গেছে, সেটায় কোনো স্ট্যান্টম্যান ছিল না। অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের মারপিটের দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। এ জন্য দুজনকেই মাসখানেক ট্রেনিং নিতে হয়েছে। যদিও এটি তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নয়। হলিউডের অনেক অভিনেতাই এখন স্ট্যান্টম্যান নেন না।

‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও
‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিতে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবিটি নির্মিত হয়েছে ওয়েস্টার্ন অভিনেতা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর গল্প নিয়ে। ১৯৬৯ সালের আবহ তৈরি করা হয়েছে ছবিটায়। এটিই ছিল কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনোর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প। সূত্র: ইনসাইডার