শ্রাবণের এক রাতে গানটির জন্ম

গীতিকার ও সুরকার আশরাফ বাবু। ডিফরেন্ট টাচের প্রথম অ্যালবামের প্রচ্ছদ
গীতিকার ও সুরকার আশরাফ বাবু। ডিফরেন্ট টাচের প্রথম অ্যালবামের প্রচ্ছদ

বাংলাদেশে ব্যান্ডসংগীত ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় গানের প্রথম লাইন। দেশে যেকোনো এলাকায় ঘরোয়া কিংবা আনুষ্ঠানিক কোনো গানের আসরে এর পরিবেশনা থাকবেই। ছুটির দিনে, বৃষ্টির দিনে ইউটিউবে বা সংগ্রহে থাকা গানের তালিকা থেকে এ গানটি শোনেন অনেকেই। অনেককেই এ গান করে তোলে স্মৃতিকাতর।

সহজ-প্রাঞ্জল কথার এ গানটির সঙ্গে শ্রোতারা খুব সহজেই একাত্ম হয়ে যায়। প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই এ গানটি এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে এটি ডিফরেন্ট টাচের সিগনেচার গানে পরিণত হয়। উঠতি ব্যান্ড যারা অন্য ব্যান্ডের গান কভার করে থাকে, তাদের পছন্দের শীর্ষে এখনো রয়েছে এ গানটি। তার জন্য অবশ্য শ্রোতাদের গ্রহণযোগ্যতাটাই মূল কারণ।

জানেন কী, এ গানটির জন্ম কোনো এক শ্রাবণের রাতেই। সে গল্পটাই আজ শোনালেন গানের গীতিকার এবং সুরকার আশরাফ বাবু। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, অ্যালবামের শেষ গান ছিল এটি। পরদিন রেকর্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাত্রা করবে ডিফরেন্ট টাচের সদস্যরা। আগের রাতে গানটির জন্ম।
সেটা ১৯৮৭ সালের কথা। তখন ছিল শ্রাবণ মাস। সেবার দিনের পর দিন বৃষ্টি হচ্ছে। একনাগাড়ে চার দিন বৃষ্টি। অবস্থা এমন যে মানুষের বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন। ডিফরেন্ট টাচের নতুন অ্যালবামের মোটামুটি সব গান হয়ে গেছে। তখন ১২ গানে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যালবামের প্রচলন ছিল। একটি গান দরকার। অন্য গানগুলো হয়ে গেছে।
আশরাফ বাবুর ওপর দায়িত্ব পড়ল, আরেকটি গান করার। কিন্তু কোনোভাবে আসছিল না। ওদিকে বৃষ্টি ঝরছে অবিরাম। শেষ রাতের দিকে জানালার পাশে বসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা দেখতে দেখতে মাথায় এল, এই শ্রাবণের বৃষ্টি নিয়ে একটা গান লিখলে কেমন হয়। এমনিতে কথাগুলো কিছুদিন ধরে রাস্তায় চলতে–ফিরতে মাথায় ঘুরছিল। আশরাফ বাবু লেখা শুরু করলেন, ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে, অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণে ঝরায়ে...।’

এক লাইন দুই লাইন করে লেখা হয়ে গেল ১২ লাইনের একটি নতুন গান। আশরাফ বাবু বললেন, ভোর রাতের দিকে যখন পুরো গানটা শেষ করে উঠলাম তখন স্বস্তি পেলাম, যাক শেষ পর্যন্ত কিছু একটা হলো। পরে ঢাকা থেকে খুলনা ফিরে যায় দলের সদস্যরা। একদিন হঠাৎ করে খুলনা নিউমার্কেটের এক ক্যাসেটের দোকানে গানটি শুনি।

ডিফরেন্ট টাচের অ্যালবামটি প্রকাশ করেছিল ইলেকট্রা ভয়েস। গানটি নিয়ে বেশ কিছু মজার ঘটনাও আছে। ডিফরেন্ট টাচের কণ্ঠশিল্পী মেজবাহ এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছিলেন তেমন অভিজ্ঞতার কথা। ১৯৯১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক কনসার্টে অংশ নেয় ডিফরেন্ট টাচ। বৃষ্টির মুখরতাকে উপজীব্য করে রচিত ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ গানটি শুরুর কয়েক মুহূর্ত পরই সত্যি সত্যি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। খোলা জায়গা হওয়ার কারণে সেদিনের মতো কনসার্ট বন্ধ হয়ে গেল। মজার ব্যাপার হলো, পরের বছর একই জায়গায় আরেকটি কনসার্টে যখনই ডিফরেন্ট টাচ ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’ গাওয়া শুরু করল, তখন আবারও বৃষ্টি শুরু হলো।

শ্রাবণের মেঘগুলো পুরো গানটি
কথা ও সুর: আশরাফ বাবু
শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে
অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণে ঝরায়ে
আজ কেন মন উদাসী হয়ে
দূর অজানায় চায় হারাতে

কবিতার বই সবে খুলেছি
হিমেল হাওয়ায় মন ভিজেছে
জানালার পাশে চাপা মাধবী
বাগান বিলাসী হেনা দুলেছে

আজ কেন মন উদাসী হয়ে
দূর অজানায় চায় হারাতে

মেঘেদের যুদ্ধ শুনেছি
সিক্ত আকাশ কেঁদে চলেছে
জমেছে হাঁসের জলকেলি
পথিকের পায়ে হাঁটা থেমেছে

আজ কেন মন উদাসী হয়ে
দূর অজানায় চায় হারাতে