বিদেশি অনুষ্ঠান ও সিনেমার ব্যাপারে কঠোর মন্ত্রণালয়

জান্নাত (ওপরে), ফাতমাগুল (নিচে) ও পালক আকাশে ওড়ে বিদেশি সিরিয়ালের দৃশ্য। অনুমতি ছাড়া চালানোর অভিযোগে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এগুলো
জান্নাত (ওপরে), ফাতমাগুল (নিচে) ও পালক আকাশে ওড়ে বিদেশি সিরিয়ালের দৃশ্য। অনুমতি ছাড়া চালানোর অভিযোগে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এগুলো

দেশের টেলিভিশনে বিদেশি যেকোনো অনুষ্ঠান ও সিনেমা প্রচারের ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ঈদের ছুটির পর এ নিয়ে সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা।

ডাবিংকৃত বিদেশি যেকোনো অনুষ্ঠান বন্ধে দুই বছর আগে রাজপথে আন্দোলন করেন অভিনয়জগতের অনেকে। আন্দোলনের পর মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিনয়–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এবং টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক শেষে বিদেশি যেকোনো অনুষ্ঠান ও সিনেমা দেশের টেলিভিশনে প্রচারে নিয়ম মানার জন্য প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৪) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের টেলিভিশনে বিদেশি চ্যানেলের কোনো অনুষ্ঠান, বিদেশি সিরিয়াল, ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল ইত্যাদি সম্প্রচার বা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিনা অনুমতিতে প্রদর্শন ও সম্প্রচার আইনবহির্ভূত। এ ছাড়া বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সিনেমা সম্প্রচারের জন্য রপ্তানি নীতি ২০১৮-২১ অনুযায়ী তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি গ্রহণ এবং সেন্সর সনদ নেওয়া প্রয়োজন।

ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) টেলিভিশনের অনুষ্ঠান চলার সময়কে তিন ভাগে ভাগ করেছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পিক টাইম, রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা অফপিক টাইম এবং ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লো পিক টাইম। কোনো অবস্থায় পিক টাইমে বিদেশি অনুষ্ঠান কিংবা সিনেমা চালানো যাবে না, এমন দাবি জানিয়েছেন এফটিপিওর কর্মকর্তারা। যোগাযোগ করা হলে এফটিপিওর সদস্যসচিব গাজী রাকায়েত বলেন, ‘আমরা বিদেশি অনুষ্ঠান কিংবা সিনেমা আনা বিষয়ে কখনোই না করিনি। বরাবরই বলেছি, নিয়ম মেনে বিদেশি অনুষ্ঠান আনতে হবে এবং সম্প্রচার সময় যেন কোনো অবস্থায় পিক টাইমে না হয়। অফপিক টাইমে এক ঘণ্টা ও লো পিক টাইমে দুই ঘণ্টা শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান, চাইলে এক ঘণ্টা বড়দের অনুষ্ঠানও থাকতে পারে।’

কয়েক বছর ধরে দেশের বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেল ডাবিংকৃত বিদেশি অনুষ্ঠান, সিরিয়াল ও সেন্সরবিহীন চলচ্চিত্র প্রচারের কারণে দেশের সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন অভিনয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে।

কয়েক বছর আগে দীপ্ত টেলিভিশনে সুলতান সুলেমান প্রচার ও জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর বিদেশি অনুষ্ঠান নিয়ে নড়েচড়ে বসেন অভিনয়শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এই চ্যানেলে এখন সুলতান সুলেমান ছাড়াও ফাতমাগুল ও শার্লক হোমস প্রচারিত হচ্ছে। এর বাইরে চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এনটিভি, জিটিভি ও মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে যথাক্রমে ‘ইউনুস’, ‘জান্নাত’, ‘পালক আকাশে ওড়ে’, ‘ছিবি মারুফ চান’, ‘আলিফ লায়লা’, ‘দ্য লিরিস’ ও ‘হারকিউলিস’।

মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির কারণে চ্যানেলগুলোকে বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচারের নিয়ম মানার ব্যাপার ও সময় নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলে জানালেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্প্রচার শাখার অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম। আইন বলছে, ‘বিদেশি অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য সরকারের অনুমতি লাগবে। এই আইনের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছিল চ্যানেলগুলো। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই চলছিল বিদেশি অনুষ্ঠান ও সিনেমা।’

২২ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘বিদেশি ধারাবাহিক প্রচারে নিয়ম চান নির্মাতারা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দীপ্ত টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা সুবর্ণা পারভীনের দাবি, তাঁদের চ্যানেল সরকারের নিয়ম মেনে বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, চ্যানেলকে তাহলে অনুমতিপত্র দেখাতে বলেন।

রোববার বিকেলে বিদেশি অনুষ্ঠান নিয়ে প্রজ্ঞাপন ও অনুমতির প্রসঙ্গটি তুলে ধরলে সুবর্ণা আবারও বলেন, ‘আমরা তো অনুমতি নিয়েই অনুষ্ঠান প্রচার করছি।’ অনুমতিপত্র দেখাতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে সুবর্ণা বলেন, ‘এ নিয়ে আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানাতে হবে।’

নুরুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এফটিপিও আমাদের বিদেশি অনুষ্ঠান ও সিনেমার বিষয়টি অবহিত করে। এ দাবির সত্যতা আছে। আমরাও দেখলাম, অবৈধভাবে এসব অনুষ্ঠান দেশের টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে।’

প্রজ্ঞাপন জারির পরও যারা প্রচার অব্যাহত রাখছে, তাদের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা একটা সতর্কবার্তা।’

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। অবশ্যই বিদেশি অনুষ্ঠান নিয়ম মেনে দেশে আনতে হবে। পিক টাইমে এসব অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।’