'কাভি কাভি' ও 'উমরাও জান' ছবির সুরকার খৈয়াম আর নেই

মোহাম্মদ জহুর খৈয়াম হাশমি
মোহাম্মদ জহুর খৈয়াম হাশমি

টুইটারে ভারতের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর লিখেছেন, ‘সংগীতের একটা যুগে অবসান হলো।’ আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘অনেক ভালো গান আর সুরের জন্য তাঁকে মনে রাখবে আসমুদ্রহিমাচল।’ ‘উমরাও জান’ (১৯৮১) ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক মোহাম্মদ জহুর খৈয়াম হাশমি। ভারতের সংগীতজগতে ‘খৈয়াম’ নামে তিনি পরিচিত। এ ছাড়া ‘কাভি কাভি’ (১৯৭৬) ও ‘উমরাও জান’ ছবি দুটির জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ফিল্মফেয়ার তাঁকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে ২০১০ সালে। পরের বছর সংগীতে অবদান রাখার জন্য ভারতের সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে। খৈয়াম আরও পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার (২০০৭) ও হৃদয়নাথ পুরস্কার (২০১৮)।

‘কাভি কাভি মেরে দিল মেঁ’, ‘ম্যায় পল দো পল কা শায়ের হুঁ’, ‘ইন আঁখো কি মাস্তি’, ‘তেরে চেহরে সে নজর’, ‘মোহাব্বত বড়ে কাম কি’, ‘আ যা রে ও মেরে’, ‘পেয়ার কা দর্দ হ্যায়’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার মোহাম্মদ জহুর খৈয়াম হাশমি (৯৩) আর নেই। গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টায় মুম্বাইয়ের সুজয় হাসপাতালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী জগজিৎ কাউরকে রেখে গেছেন। তিনিও গুরুতর অসুস্থ।

ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট বি এন তিওয়ারি সংবাদমাধ্যমকে আগেই জানিয়েছেন, খৈয়ামের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে। পাশাপাশি ছিল বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা। ১৫ আগস্ট সংকটাপন্ন অবস্থায় খৈয়ামকে সুজয় হাসপাতালে আনা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

খৈয়ামকে অনেক দিন থেকে দেখাশোনা করেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী তালাত আজিজ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, খৈয়ামের মৃতদেহ গতকাল তাঁর বাসায় রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের পশ্চিম আন্ধেরির ফোর বাঙ্গালোজ কবরস্থানে খৈয়ামকে দাফন করা হবে।

১৯২৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত ভারতের অবিভক্ত পাঞ্জাবের নয়নেশ্বর জেলায় খৈয়ামের জন্ম। এরপর দিল্লি যান গান শেখার জন্য। সেখান থেকে পাকিস্তানের লাহোরে গিয়ে প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক বাবা গোলাম আহমেদ চিশতির সঙ্গে কাজ করেন। ওই সময় তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নেন।

১৭ বছর বয়সে লুধিয়ানায় এসে খৈয়াম সংগীত নিয়ে কাজ শুরু করেন। বলিউডে তিনি প্রথম কাজ করেন ‘ফুটপাত’ (১৯৫৩) ছবিতে। এরপর পুরো পাঁচ দশকে তিনি ৩৭টি ছবির গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা এবং আবহসংগীতের কাজ করেন। তাঁর বেশির ভাগ ছবির গান খুব জনপ্রিয় হয়। ১৯৬১ সালে ‘শোলা অউর শবনম’ ছবির গানে সুর দিয়ে তিনি সবার নজর কাড়েন। সেই শুরু! এরপর ‘ত্রিশূল’, ‘বাজার’, ‘উমরাও জান’, ‘কাভি কাভি’, ‘নুরি’, ‘রাজিয়া সুলতান’সহ অসংখ্য ছবির গান তাঁকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।