কঙ্কনা ফিরছেন মিস শেফালিকে নিয়ে

কঙ্কনা সেন শর্মা ও মিস শেফালি
কঙ্কনা সেন শর্মা ও মিস শেফালি

তিনি প্রখ্যাত বাঙালি অভিনেত্রী ও পরিচালকের মেয়ে। তাঁর নিজের পরিচয়ও তা-ই। অভিনেত্রী ও পরিচালক। তাঁর নানা চিদানন্দ দাশগুপ্ত। চলচ্চিত্র বিশ্লেষক, বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, লেখক এবং কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নানি সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত কবি জীবনানন্দ দাশের চাচাতো বোন। বাবা মুকুল শর্মা লেখক এবং সাংবাদিক। মা প্রখ্যাত অভিনেত্রী ও নির্মাতা অপর্ণা সেন। আর তিনি কঙ্কনা সেন শর্মা।

একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আর দুটি ফিল্মফেয়ার পাওয়া এই অভিনেত্রীর ঝুলিতে পরিচালক হিসেবেও রয়েছে একাধিক স্বীকৃতি। আবারও পরিচালক হিসেবে ফিরবেন। তবে এবার বানাবেন ওয়েব সিরিজ। কলকাতার প্রথম বাঙালি ক্যাবারে নর্তকী আরতি দাসের গল্প নিয়ে এই ওয়েব সিরিজের গল্প। এখানে আরও উঠে আসবে গত শতকের ষাটের দশকের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

দুর্দান্ত ক্যাবারে নর্তকী মিস শেফালির আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় আরতি দাস। তাঁকে বলা হতো ‘কুইন অব ক্যাবারে’। তখন তো কলকাতা মাতিয়ে রাখত একটাই নাম, মিস শেফালি। আরতি দাস জন্মেছিলেন বাংলাদেশে। তারপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় মাত্র ১১ বছর বয়সে চলে যান কলকাতায়। চরম অর্থকষ্টে বেঁচে থাকার তাগিদে ১৩ বছর বয়সে ফিরপো হোটেলের লিডো রুমে নাচ শুরু করেন। অভিনেতা তরুণ কুমার তাঁকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। সেই থেকে শুরু। বিস্মিত করেছেন দেশি এবং বিদেশি সাহেবদের।

কঙ্কনা সেন শর্মা
কঙ্কনা সেন শর্মা

এরপর অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা নাটকে দেখা গেছে তাঁকে। ‘চৌরঙ্গী’, ‘রঙ্গিনী’, ‘সম্রাট সুন্দরী’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’-আরও কত। অভিনয় করেছেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের দুটি ছবিতে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ এবং ‘সীমাবদ্ধ’। ‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতে তিনি তা-ই করেছেন, যা সবচেয়ে ভালো পারেন, নাচ। এই নাচের শুটিং হয়েছে ফিরপো হোটেলের লিডো রুমে। আরতি অথবা মিস শেফালি নিজেই সব ব্যবস্থা করেন। এমনকি মহানায়ক উত্তম কুমার পর্যন্ত তাঁর বেলি ড্যান্স আর হুলা মুভসে ধরাশায়ী হন।

বিয়ে করেননি শেফালি। শুধু মন দিয়ে, নিজেকে উজাড় করে নেচেছেন। পরিবারের সবার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। ভাইয়ের ছেলেকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন। বাড়িতে যে মেয়েটি তাঁর কাজকর্ম দেখাশোনা করেন, সেই দুর্গাকে নিজের বোন বলে মনে করেন। ‘ডুম ডুম’ নামে একটা নাচের স্কুল আছে তাঁর। সেখানে হিপ হপ আর সালসা শেখান। এতকাল পর তাঁকে নিয়ে ছবি হবে জেনে খুব খুশি। বলেছেন, ‘নাচের মানুষ হলেও সবাই আমাকে মনে রেখেছেন চলচ্চিত্রের জন্য। কিন্তু আমাকে নিয়ে কোনো ছবি হয়নি। অনেক সংগ্রাম করে আমি হয়েছি। ছবিতে যদি তা না-ই আসল, তবে আমার জীবনের কী মানে থাকল?’

‘মিস শেফালি’ আরতি দাস
‘মিস শেফালি’ আরতি দাস

মিস শেফালির জীবনের ওপর ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করবেন বলে উচ্ছ্বসিত কঙ্কনা সেন শর্মা। ২০১৭ সালে ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এই গুণী অভিনেত্রী। সমালোচকদের দারুণ সমাদর পায় ছবিটি। এবার আরতি দাসের ওপর ছবি নির্মাণ প্রসঙ্গে বললেন, ‘এটা একজন প্রথাভাঙা নারীর দুর্দান্ত জীবনের ওপর নির্মিত হবে। ভারত ভাগের ওই সময়টা, নারীর সংগ্রাম, প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে যাওয়া—এ সবই আমাকে খুব টানে। আর আরতি দাসের জীবনে এর সবই উপস্থিত।’

এখন এই ছবির চিত্রনাট্যের কাজ চলছে। আগামী বছর থেকে চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে আবার দেখা যাবে এক সংগ্রামী নারীর জীবন!