শিল্পের পথযাত্রার প্রতিচ্ছবি

নিজ জীবন ও শিল্পযাত্রা নিয়ে একক বক্তৃতা বৈঠকে কথা বলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো
নিজ জীবন ও শিল্পযাত্রা নিয়ে একক বক্তৃতা বৈঠকে কথা বলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

উপস্থাপক ঘোষণা দিলেন, আজকে যিনি অতিথি, জন্মের পরে তাঁর নাম রাখা হয় আবুল কাশেম মো. এম আর খান। মাথায় সাদা চুল আর কালো ফ্রেমের চশমা পরে মঞ্চে যিনি ঢুকলেন, তিনি মামুনুর রশীদ। তবে ভুল নাম বলা হলো? সে রহস্যের জট খুললেন উপস্থাপক আপন আহসান নিজেই। বললেন, জন্মের পরে রাখা আবুল কাশেম মো. খানের সবকিছুই খান খান হয়ে গেছে। শুধু এম আর বাকি আছে। তিনি মামুনুর রশীদ।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ছিল মামুনুর রশীদের এক বক্তৃতার আয়োজন। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় তিনি তুলে ধরেন তাঁর অভিনয়, জীবন ও শিল্পযাত্রা। উঠে আসে থিয়েটারে মুগ্ধ হওয়ার দিনগুলো, নাটকের প্রেরণা, বেতারে নাটক লেখা ও অভিনয়, স্বাধীনতার আগের শিল্পজীবন, কলকাতায় নাটক দেখা, স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে নাট্য আন্দোলনসহ ব্যক্তিজীবনের নানা দিক।

আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুলের আয়োজনে ছিল এটি। প্রথমে সংক্ষিপ্ত কথা বলেন স্কুলটির অধ্যক্ষ রামেন্দু মজুমদার। এরপর একক বক্তৃতা পর্ব।

মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি জীবনে প্রথম বিজয়সিংহ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। তিনটি মাত্র সংলাপ ছিল। সেগুলো দিতে যখন আমি মঞ্চে উপস্থিত হই, তখন সামনে দেখলাম কেবল কালো কালো মাথা। আমার মনে হয়েছে কত তাড়াতাড়ি সংলাপটি দিয়ে শেষ করা যায়। আজকে সেই প্রথম দিনের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু আজকে আর তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে না।’

মামুনুর রশীদ স্মরণ করলেন প্রথম দিনগুলোর অভিনয় অভিজ্ঞতার কথা। প্রথম অভিনয় করেছিলেন একটি ধুতি পরে।  সেটি ছিল তাঁর মায়ের। বললেন, ‘তখন বেশ কড়া মেকআপ করা হতো। তা পোশাকেও লেগে যেত। দুই–তিন দিন পর্যন্ত সেগুলো তুলতাম না। সবাই বলত কিরে তোর গেঞ্জির মধ্যে এত রং কেন? তখন আমি বলতাম, কয়েক দিন আগে অভিনয় করলাম। এই কথাটা বলার জন্য বহুদিন ওই গেঞ্জিটা আমি ধুইনি।’

মামুনুর রশীদ জানান, ‘আমি অভিনয়ের প্রথম প্রেরণা পেয়েছি শৈশবে সোহরাব–রুস্তম যাত্রায় অসাধারণ সব অভিনয় দেখে। ভোর হয়ে গেছে। ভোরবেলায় বাড়ি ফিরব। তাঁদের অভিনয় দেখে হুহু করে কাঁদছি। মনে হয়েছে সারা রাত যাঁদের অভিনয় দেখলাম, তাঁদের চেয়ে শক্তিশালী মানুষ পৃথিবীতে আর মনে হয় না। একই মানুষ কাঁদাচ্ছে, আবার হাসাচ্ছে, আনন্দ দিচ্ছে, যুদ্ধ করছে নানান কিছু। এটা থেকেই আমার মাথায় ঢুকল যে এটা তো একটা বিরাট ব্যাপার।’

এভাবে মামুনুর রশীদের মাথায় ঢুকে পড়ে নাটক। তারপর কলকাতার নাটক দেখে আগ্রহী হন নিজের দেশেই নাটক করার। স্বাধীনতার আগে বেতারে খান আতাউর রহমান, গোলাম মুস্তাফাদের সঙ্গে নাটক করেন। নাটক করেন আবদুল্লাহ আল-মামুন, মুস্তাফা মনোয়ারদের সঙ্গেও। নাটক লেখা, অভিনয়, নির্দেশনা নিয়ে চলে তাঁর পথযাত্রা। স্বাধীনতার পর গড়ে তোলেন আরণ্যক নাট্যদল। করেন মঞ্চনাটকসহ পথনাটক, মুক্তনাটক। এসবই উঠে আসে মামুনুর রশীদের বক্তৃতায়।

শেষে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। মামুনুর রশীদ উচ্চারণ করেন তাঁর কিছু প্রিয় নাটকের সংলাপও। তখন তিনি আর আলোচক নন,  হয়ে উঠেছিলেন অভিনেতা মামুনুর রশীদ।