বঙ্গবন্ধু স্মরণে শিল্পকলায় সাধু মেলা

শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাউল গান পরিবেশন করছেন শিল্পী। ছবি: প্রথম আলো
শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাউল গান পরিবেশন করছেন শিল্পী। ছবি: প্রথম আলো

‘রাত পোহালে পাখি বলে দে রে খাই দে রে খাই...’। গানটা এগিয়ে যেতে বাধ্য করল। নাটক দেখে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে সোজা মাঠে। গতকাল শুক্রবার রাতে শিল্পকলা একাডেমির খোলা চত্বরটি যেন পাড়াগাঁয়ের কোনো বাউল আসর। এক পাশে অপরিণত একটা বটগাছের নিচে সে আসরের নাম দেওয়া ‘সাধু মেলা’। আকাশে তখন পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি।

সাধক ফকির লালনের ভাববাণী ও জীবনদর্শন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ বছরের শুরু থেকে প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত ‘সাধু মেলা’র আয়োজন করা হয়। আগস্ট মাস শোকের মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে এবারের সাধু মেলার আয়োজন করা হয় ‘বাউলের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে।

আয়োজকেরা জানালেন, বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। শুরুতে ছিল আলোচনা পর্ব। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, কলামিস্ট ও গবেষক মোনায়েম সরকার, প্রাবন্ধিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে লালনের তত্ত্ব ও দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করেন লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন। বক্তারা বলেন, বাউলের যে হাজার বছরের সংস্কৃতির ইতিহাস রয়েছে, সেই ইতিহাসের মূল উপাদান হচ্ছে বাউল ধারার গান। বাউলের দর্শন মানবতাবাদ। বাউলদের গানে গানে মানবতাবাদের এই চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটেছে, যা আমাদের সংস্কৃতিরও মূল সুর।

এ বছরের শুরু থেকে প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত ‘সাধু মেলা’র আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
এ বছরের শুরু থেকে প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে নিয়মিত ‘সাধু মেলা’র আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

সূর্য ডোবার পর থেকে শুধুই গান। সন্ধ্যা নেমে রাত গড়াতেই জমে ওঠে আসর। এতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঘাতকের গুলিতে নিহত শেখ রাসেলকে নিয়ে ‘তোমরা গাইছো না কেউ গান’, ‘সে ছিল যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রাণ কথা’ গানগুলো শোনান সমীর বাউল। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে লেখা ‘অন্তর কাঠের নাও ভাসাইলাম কোন সে বন্দরে’, ‘আমি খুজে কি পাব আমার বঙ্গবন্ধুরে’ শোনান শফি মণ্ডল। এ ছাড়া আসরের বিভিন্ন সময়ে বাউলেরা শোনান ‘ডুবে দেখ দেখি মন কিরূপ’ ‘ধন্য ধন্য বলি তারে,’ ‘পারে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়’, ‘তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে’ ইত্যাদি গান। এদিন গান শুনিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, টুন টুন ফকির, আবদুল লতিফ শাহ, দিতি সরকার ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বাউল দলের সদস্যরা। অনেক রাত পর্যন্ত জমেছিল এই নাগরিক সাধু মেলা। উৎসুক মানুষের ভিড়ও ছিল যথেষ্ট।

একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জানালেন, বাউল গানের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ইতিমধ্যে একাধিক বাউল উৎসব ও আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছে। প্রতিশ্রুতিশীল বাউলশিল্পীদের নিয়ে ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠান এবং সেমিনার আয়োজন করেছে। একাডেমিতে তরুণ বাউল শিল্পীদের নিয়ে বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং শিল্পী পার্বতী বাউলের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।