গানের বাজার এখন অ্যাপসমুখী

এসব গান এত দিন ইউটিউবে দেখা গেলেও ভবিষ্যতে অ্যাপস থেকে শুনতে ও দেখতে পাবেন দর্শক–শ্রোতারা।
এসব গান এত দিন ইউটিউবে দেখা গেলেও ভবিষ্যতে অ্যাপস থেকে শুনতে ও দেখতে পাবেন দর্শক–শ্রোতারা।

ইউটিউবে গান প্রকাশ করে এখন আর পোষাচ্ছে না। লাখ-কোটি ভিউ দিয়েও ব্যবসা চাঙা রাখতে পারছে না গান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই নতুন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গানের এসব প্রতিষ্ঠান। ইউটিউবনির্ভরতা কমাতে এমআইবি কাজ শুরু করেছে অ্যাপস তৈরির। এক অ্যাপসে পাওয়া যাবে বাংলাদেশের বেশির ভাগ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত শিল্পীদের সব গান। এমনটাই জানিয়েছেন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমআইবি) সাধারণ সম্পাদক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির স্বত্বাধিকারী শেখ সাহেদ আলী পাপ্পু।

এমআইবিভুক্ত গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অনেকের সঙ্গে কথা বলেও অ্যাপস তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাগজে-কলমে দেশে এখন এমআইবিভুক্ত নিবন্ধিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮০। তবে সক্রিয়ভাবে গান প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত আছে ২৫টির মতো।

দেশে নিয়মিত গান প্রকাশ করে চলছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাউন্ডটেক, সংগীত, লেজার ভিশন, জি-সিরিজ, সিডি চয়েজ, গানচিল, ঈগল মিউজিক, অনুপম রেকর্ডিং, সুরঞ্জলি, মাই সাউন্ড, সিডি জোন, ইমপ্রেস অডিও ভিশন, সিডি প্লাস, চেনা সুর ইত্যাদি।

কয়েক বছর আগেও ইউটিউব থেকে ভালো টাকা পেত গানের পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। ইউটিউবে গান প্রকাশ করে সাবস্ক্রাইবার বাড়ানো এবং শিল্পী ও প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ছাড়া সেই অর্থে আর বেশি কিছু জোটে না। শুরুতে বেশ বড় বাজেটে ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করা হলেও এখন সেই চিন্তা থেকে সরে এসেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। অল্প বাজেটে গান তৈরি করে ইউটিউবে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেখ সাহেদ আলী বলেন, ‘ইউটিউবে কোনো গান এক কোটি ভিউ হলে ইউটিউব দেয় সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা। সব গান তো আর কোটি ভিউ হয় না। ইউটিউব বাংলাদেশের জন্য যে পার্সেন্টেজ করে রেখেছে, তা দিয়ে গানের ব্যবসা মোটেও হবে না। অ্যাপ তৈরি হলে স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে যে আয় হবে, তা দিয়ে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।’

কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউটিউবে একেক কন্টেন্টের বিজ্ঞাপনে একেক রকম মূল্য। যেহেতু দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিউবের সঙ্গে লিগ্যাল কোনো চুক্তি নেই, সমস্যা হলে তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব না—এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিটাও বেশি। তাঁদের মতে, যদি সব প্রতিষ্ঠান মিলে একটা অ্যাপ তৈরি করা যায়, গানের মধ্যে যেসব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হবে, পুরো টাকা তাদের কাছে থাকবে।

লেজার ভিশনের অন্যতম কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বাইরে গাননির্ভর অনেক লাভজনক অ্যাপ আছে। আমরাও চাই, আমাদের সবার একটা অ্যাপ হোক, যেখান থেকে সবাই লাভবান হবেন।’ এমআইবি সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস ধরে অ্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করেছে তারা। এই অ্যাপে এমআইবিভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের গান থাকবে। যে প্রতিষ্ঠানের গান যে পরিমাণ স্ট্রিমিং হবে, সেই প্রতিষ্ঠান তেমনটা লাভ পাবে।

অনুপম রেকর্ডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইউটিউব আমাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম না। অ্যাপ থাকলে সেটার অংশীদার আমরা।’

অ্যাপসমুখী হলে গানের বাজার অনেকটাই বদলে যাবে বলে মনে করেন ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউটিউব অ্যাকাউন্ট ওপেন করি, পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি থাকে। এরপরও শুনি ২০ লাখ কিংবা ৩০ লাখ সাবস্ত্রাইবারসহ চ্যানেল উধাও! ইউটিউবের সঙ্গে আইনগত চুক্তি নেই বলে কর্তৃপক্ষও বাধ্য নয় এসব নিয়ে ভাববার।’

নিজেদের একটি অ্যাপ হলে দেশের টাকা দেশেই থাকবে বলে মনে করেন ধ্রুব গুহ। তিনি বলেন, ‘দৃষ্টিনন্দন একটা অ্যাপ তৈরি করে সেখান থেকে কন্টেন্ট উপহার দিতে পারি।’

সিডি চয়েসের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম মনে করেন, গানের বাজারের ব্যবসায়িক দিকটা আরও শক্তিশালী করার জন্য অ্যাপমুখী হতে হচ্ছে।