'মুজিব মানে মুক্তি'র মাসব্যাপী প্রদর্শনী শুরু
নীরবতা ভেদ করে মঞ্চ কাঁপিয়ে উচ্চকণ্ঠে সেই চিরচেনা উচ্চারণ, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ প্রতীকী বঙ্গবন্ধু তখন মঞ্চে। বজ্রকণ্ঠে সেই অমর স্বাধীনতার ডাক। যেন ফিরে এসেছে সেই সাতই মার্চ। মিলনায়তনটিই যেন রেসকোর্স ময়দান।
‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটকের একটি দৃশ্য এটি। আজ থেকে শুরু হয়েছে এ নাটকের মাসব্যাপী প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা, পরিকল্পনা, সুর সংযোজন ও নির্দেশনায় নাটকটির তিনটি প্রদর্শনী হয়েছে আজ বুধবার ঢাকা, গোপালগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ জানান, দেশের প্রায় ১০০টি নাটকের দল ‘মুজিব মানে মুক্তি’র চিত্রনাট্য অনুশীলন করেছে। এই দলগুলো পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলায় এর প্রদর্শনীতে অংশ নেবে।
বঙ্গবন্ধুর মহান সংগ্রামী জীবনভিত্তিক ঐতিহাসিক নাট্যাখ্যান ‘মুজিব মানে মুক্তি’। আবহমান বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, শোষণ-বঞ্চনা, দ্রোহ ও মুক্তির স্বপ্ন বিনির্মাণ এই নাটকের মূল উপজীব্য। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ২৩ বছরের পাকিস্তানি অপশাসন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরে দেশ গঠন এবং তার প্রয়াণ এই নাটকের উপাত্ত।
নাটকের শুরুতে নেপথ্যে বাজতে থাকা একটি দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে মঞ্চ ঘুরে বেড়ান শিশু মুজিব। এভাবে এগিয়ে যায় নাটকের গল্প। ভাষা আন্দোলন থেকে ৬ দফা, ১১ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পর মহাকাব্যিক সাতই মার্চ এবং এর ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ঘটনাবলিও স্থান পায় নাটকে। নাটকটির উল্লেখযোগ্য দিক দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনা। ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে দেশাত্মবোধক গানের সমন্বয় রয়েছে।
নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘ইতিহাস-নির্ভর নাট্য নির্মাণ চিরকালই কঠিন কাজ। আর একজন মহাপুরুষের সংগ্রামী জীবন নিয়ে শিল্প নির্মাণ আরও কঠিন। ইতিহাসের শিল্পীত উপস্থাপন ও জাতির পিতার একটি জাতি ও দেশ নির্মাণ এবং তাঁর মহাপ্রয়াণে নিরীক্ষাধর্মী শিল্পশৈলী, নানা ইমেজ ও কোরিওগ্রাফের ভেতর দিয়ে উপস্থাপনই এই প্রযোজনার মূল কর্ম। একটি আবেগ-আশ্রিত কাব্যিক শিল্প উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি এই কাজটির মাধ্যমে।’