মঞ্চশিল্পীদের কল্যাণে 'কঞ্জুস'

মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে নাটকটির রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান, নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। ছবি: সংগৃহীত
মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে নাটকটির রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান, নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন মঞ্চশিল্পীদের জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করেছিল বেশ কিছুদিন আগে। মাঝে এ উদ্যোগে ভাটা পড়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন উদ্যমে আবার এ কল্যাণ তহবিল গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ করেছে লোক নাট্যদলের ‘কঞ্জুস’ নাটকটি।

কঞ্জুস নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
কঞ্জুস নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে নাটকটির রূপান্তর করেছেন তারিক আনাম খান। নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। নাটকে পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন আর সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। পুরান ঢাকার কৃপণ হায়দার আলী খানের সংসারের নানা ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে নাটকটির কাহিনি। তাঁর ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলী বেগম। পাশের মহল্লার মর্জিনার প্রেমে পড়ে কাযিম। আর ছদ্মবেশী প্রেমিক গৃহকর্মী বদি মিঞার সঙ্গে চলে লাইলীর মন দেওয়া-নেওয়া। সমস্যা বাধে যখন কঞ্জুস হায়দার আলী ছেলের প্রেমিকাকে বিয়ে করার ফন্দি করেন। আর ছেলের সঙ্গে এক বিধবা নারীর বিয়ে ঠিক করেন। অন্যদিকে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন ৫০ বছর বয়স্ক বন্ধু মির্জা আসলাম বেগের সঙ্গে। এ নিয়ে প্রতি মুহূর্তেই হাসি-তামাশার মধ্য দিয়ে ঘটতে থাকে নানা ধরনের ঘটনা। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির গল্প।

‘কঞ্জুস’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন আজিজুর রহমান, জিয়াউদ্দিন শিপন, রুবেল শংকর, মাসুদ সুমন, আবুবকর বকশি, ঈশিতা চাকি, খাদিজা মোস্তারি, শাহরিয়া কামাল, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, স্বদেশ রঞ্জন দাশগুপ্ত, জুলফিকার আলী প্রমুখ।

নাটকে প্রতি মুহূর্তেই হাসি-তামাশার মধ্য দিয়ে ঘটতে থাকে নানা ধরনের ঘটনা
নাটকে প্রতি মুহূর্তেই হাসি-তামাশার মধ্য দিয়ে ঘটতে থাকে নানা ধরনের ঘটনা

নির্দেশক লিয়াকত আলী বলেন, ‘৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দর্শকের কারণে। আমরা “কঞ্জুস” নাটকটি নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘জীবদ্দশায় মলিয়ের সমালোচকদের দ্বারা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর নাটক দেশে দেশে মানুষের মধ্যে কত যে শক্তি সঞ্চয় করেছে, তা “কঞ্জুস” নাটকটি দিয়েই বোঝা যায়।’

‘কঞ্জুস’ নাটকটি যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ৮ মে। এখন পর্যন্ত মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছে নাটকটি। ৩২ বছর ধরে নাটকটি মঞ্চায়ন করছে লোক নাট্যদল। অবশ্য ‘কঞ্জুস’ নাটকের ইতিহাস আরও পুরোনো। ১৯৮২ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে কয়েকজন নাট্যকর্মী পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাট্যদল’ নামের মঞ্চনাটকের দল। সঙ্গে আরও কয়েকজন। এর মধ্যে আছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম সারোয়ার, লিয়াকত আলী লাকী, কামাল উদ্দিন নীলু প্রমুখ। তারিক আনাম খান ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে অনুবাদ করেন ‘কঞ্জুস’ নাটকটি। শুরু থেকেই নাটকটি নিয়ে দর্শকের সাড়া পাওয়া গেছে। সেই থেকে ‘কঞ্জুস’ নাটকটির নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে।

৩২ বছর ধরে নাটকটি মঞ্চায়ন করছে লোক নাট্যদল
৩২ বছর ধরে নাটকটি মঞ্চায়ন করছে লোক নাট্যদল

কামাল উদ্দিন নীলু নির্দেশিত নাটকের পুরোটাই বাংলাদেশি আমেজে। সংলাপ বলা হয় পুরান ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায়। ১০টি প্রদর্শনী হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে নাটকটি সম্প্রচারিত হয় বিটিভিতে। তারপর নাট্যদল আর নাটকটি মঞ্চস্থ করেনি। পরে নতুন আঙ্গিকে নাটকটি মঞ্চে আনে লোক নাট্যদল।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রত্যেক মঞ্চশিল্পীই আমাদের স্বজন। দুঃসময়ে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে চাই। আর এমন মানবিক আর্তি থেকেই মঞ্চশিল্পীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এই কল্যাণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখন থেকে এ লক্ষ্যে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি আমরা ফেডারেশনভুক্ত বিভিন্ন দল নাটক মঞ্চস্থ করব।’