'নবাবের সে কী পরিশ্রম'

>ইদানীং বন্ধুদের আড্ডায় ঢুকলে প্রশ্ন একটাই—‘সেকরেড গেমস দেখেছিস?’ এই প্রশ্নের উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে তো নিজেকে দলছুটই মনে হবে। আর ‘হ্যাঁ’ হলে আড্ডা জমে উঠবে এই ট্রেন্ডিং ওয়েব সিরিজের পিণ্ডি কপচানো নিয়ে। হালের এই ধারার বাইরে নেই বাংলাদেশি তারকারাও। এই যেমন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ আমাদের জানিয়েছেন সেকরেড গেমস দেখে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। বলিউডের নবাব সাইফ আলী খান, পাকা অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী আর পঙ্কজ ত্রিপাঠির ভূয়সী প্রশংসা করলেন আমাদের এই অভিনেতা। 
সেকরেড গেমস–এর দ্বিতীয় মৌসুমের শিল্পীরা
সেকরেড গেমস–এর দ্বিতীয় মৌসুমের শিল্পীরা

প্রথম কিস্তি দেখার পর থেকেই প্রত্যাশাকে দমিয়ে রেখে সিয়াম আহমেদ অপেক্ষা করছিলেন নেটফ্লিক্সের মৌলিক সিরিজ ‘সেকরেড গেমস’–এর দ্বিতীয় কিস্তির জন্য। কাজ যতই থাকুক, বাড়ি ফিরে যতটুকু সময় মেলে, তার থেকেই একটুখানি সময় সিয়াম আলাদা করে রাখেন নতুন নতুন ওয়েব কনটেন্ট বা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে প্রিয় সিনেমা–সিরিজ দেখার জন্য। সেকরেড গেমসের বেলায়ও তা–ই হয়েছিল। সিয়াম জানালেন, স্ত্রী অবন্তীকে নিয়ে দু–তিন রাতের মধ্যেই দেখে শেষ করেছেন ৮ পর্বের সেকরেড গেমস–এর দ্বিতীয় মৌসুম। শুরুতে গোলকধাঁধার মতো লেগেছে খানিকটা, কিন্তু যত গভীরে গেছেন ততই চোরাবালির মতো ডুবেছেন এই সিরিজের গল্পে, এর নির্মাণশৈলীতে। 

গুরুজিতে মুগ্ধ

সিয়াম আহমেদের সঙ্গে দেখা হতেই জানতে চাইলাম, ‘কেমন লাগল সেকরেড গেমস?’ তিনি শুরুই করলেন ‘গুরুজি’র নাম নিয়ে! বললেন, ‘গুরুজি কিন্তু দারুণ ছিল!’ এবারের কিস্তিতে এই চরিত্রই নাকি সবচেয়ে বেশি টেনেছে সিয়ামকে। সেকরেড গেমসে ‘গুরুজি’ হিসেবে ভারতীয় অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠিকে দেখা গেছে কয়েক ঝলক। তাই সেই ‘গুরুজি’র জন্য একটা অপেক্ষা ছিল সবার। সেদিক থেকে সিয়ামও আলাদা নন। পঙ্কজ ত্রিপাঠি অভিনীত এ চরিত্রটি যেমন সিয়ামকে বিনোদন দিয়েছে, তেমনই ভাবিয়েছেও। ‘আমরা যাদের মনে করি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, ত্রাস; তাদের ওপর আরও বড় ত্রাস আছে—সেটা এই গুরুজির চরিত্র থেকে উপলব্ধি করেছি। ক্ষমতাবানের ওপরেও আছে আরও বড় হাত, এটা বুঝতে আর বাকি নেই।’ পঙ্কজ ত্রিপাঠির অভিনয়ের প্রশংসাও সিয়াম করেন মনভরে। 

ঈশ্বর থেকে নশ্বর ‘গায়তোন্ডে’

অভিনয়ের প্রসঙ্গে এলে চলে আসে আরও দুজনের কথা—নওয়াজুদ্দীন সিদ্দিকী আর সাইফ আলী খান। একেবারে সাদামাটা দর্শক হলেও মাঝেমধ্যে অভিনেতার চোখ দিয়েও অভিনয়কে দেখেছেন সিয়াম। প্রথম মৌসুম থেকে এবারের মৌসুম পর্যন্ত নওয়াজুদ্দিনের চরিত্রের যেই রূপান্তর, তা তাঁকে অবাক করে দিয়েছে। সিয়ামের ভাষায়, ‘নওয়াজুদ্দিনের চরিত্র গায়তোন্ডেকে তো প্রথম সিজনে ঈশ্বর বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারের সিজনে নওয়াজ যতটা ঈশ্বরসুলভ ছিলেন, তার চেয়েও বেশি তাঁকে পাওয়া গেছে বিপর্যস্ত রূপে। আর চরিত্রের এই যে বাঁকবদল, এটা দর্শকের সামনে ফুটিয়ে তোলা শিল্পীর জন্য বিশেষ কৃতিত্বের। নওয়াজ সব সময়কার মতোই নিজের জাত চিনিয়েছেন।’ 

sacred-games-2-1a
sacred-games-2-1a

তারার জগৎ থেকে ধরায় সাইফ

নবাব সাইফ আলী খান এই সেকরেড গেমসের জন্য নিজেকে যেভাবে ভেঙেচুরে পর্দায় তুলে ধরেছেন, এটা সিয়ামের মনে দাগ কেটেছে। সিয়ামের ভাষায়, ‘তারকাখ্যাতি থেকে বেরিয়ে এসে এমন আন্ডারটোন অ্যাক্টিং করা একজন এত বড় তারকার জন্য সহজ কথা নয়। শিল্পী হিসেবে বুঝতে পারি, এ জন্য নিশ্চয়ই সাইফ আলী খানকে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিতে হয়েছে, অনেক মানসিক চাপের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো বলিউডের ঝকমকে তারায় ভরা আকাশ থেকে ধরায় নেমে এসেছেন সাইফ, শিল্পী হিসেবে এটা স্বস্তি আর সাহস দিয়ে সিয়ামকে। তাঁর ভাষায়, ‘সারতাজ’ চরিত্রের জন্য বলিউডের নবাবের পরিশ্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। 

আরও কিছু প্রিয় মুহূর্ত

‘পারুলকার’ আর ‘জোজো’—এই দুটি চরিত্রের কথাও আলাদা করে বললেন সিয়াম আহমেদ। গল্পকে জমাট বাঁধাতে আর প্রথম কিস্তির সঙ্গে দ্বিতীয়টিকে জুড়ে দিতে এই দুটি চরিত্রের অবদান ছিল বলে ধারণা তাঁর। আসলেই তো, প্রথম সিজনের শুরুতেই ‘সারতাজ’ চরিত্রের সাইফ আলী খানের সঙ্গে ‘পারুলকার’ চরিত্রের নীরাজ কাবি যে আচরণটা করে, সেই প্রভাবশালী চরিত্রের পরিণতি অনেকে আঁচই করতে পারেনি। অন্যদিকে সুরভীন চাওলার ‘জোজো’ চরিত্রটা প্রথম মৌসুম যেমন আঁধারে রেখে বিদায় নিয়েছিল সেকরেড গেমস থেকে, এই মৌসুম ততটাই প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। অভিনয়টাও ছিল পোক্ত। 

একটু সমালোচনা

আর সব দর্শকের মতো সিয়াম আহমেদের কিছু জায়গায় খটকা লেগেছে, বিশেষ করে শেষটা। এমন ‘ধুপ’ করে শেষ হয়ে যাওয়া সেকরেড গেমস তিনি চাননি! রোমাঞ্চে ভরা গল্পে একটা জুতসই ইতি টানার আশাতেই তো রাত জেগে স্ত্রী অবন্তীর সঙ্গে বসে দেখে গেছেন সিরিজটা। কিন্তু শেষে গিয়ে এ কী পেলেন সিয়াম! তবে এটা সমালোচনা নয়। সিয়ামের ভাষায়, এটাই সফলতা। দর্শকের সব ধরনের প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে তাদের চমকে দেওয়া। সমালোচনা হলো, সিরিজের কিছু কিছু শূন্যস্থান নিয়ে। যেমন ‘গুরুজি’ পঙ্কজ ত্রিপাঠির উত্থান, ‘জোজো’র সঙ্গে গুরুজির সম্পর্ক, ‘সারতাজ’–এর বাবার ভূমিকা—এ বিষয়গুলো সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থেকে গেছে মাথায়। এ জন্যই থেকে থেকে সিয়ামের মনে হচ্ছে, দ্বিতীয় মৌসুমটা প্রথমবারের মতো রোমাঞ্চের খুদা মেটাতে পারেনি তাঁর। 

তাই এখন সেকরেড গেমস থেকে সরে এসে বুকভরা আশা নিয়ে অপেক্ষা মানি হেইস্টের জন্য। সিয়াম আহমেদ আর তাঁর স্ত্রী অবন্তী—দুজনই নাকি মানি হেইস্টের নতুন মৌসুমের জন্য উদ্​গ্রীব হয়ে আছেন। সেটা আসা অবধি নতুন করে দেখছেন পুরোনো প্রিয় সিরিজগুলো—যেমন অনটুরাজ, স্যুটস ইত্যাদি। 

‘সেকরেড গেমস’বৃত্তান্ত

পরিচালক : অনুরাগ কাশ্যপ, বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানি ও নীরাজ ঘাওয়ান

চিত্রনাট্যকার : বিক্রম চন্দ্রের লেখা উপন্যাস সেকরেড গেমস অবলম্বনে লিখেছেন বরুণ গ্রোভার, স্মিতা সিং, বসন্ত নাথ, ধ্রুব নারাং, পূজা বার্মা ও নিহিত ভাওয়ে

ঘরানা : রহস্য, কূট, থ্রিলার ও অপরাধমূলক

অভিনয় : সাইফ আলী খান (সারতাজ সিং), নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী (গণেশ গায়তোন্ডে), পঙ্কজ ত্রিপাঠি (গুরুজি), কালকি কোচিন (বাত্যা), রণবীর শোরে (শহীদ খান), নীরাজ কাবি (ডিসিপি পারুলকার), অম্রুতা সুভাষ (যাদব স্যার), যতীন শর্মা (বান্টি), এলনাজ নওরুজি (জামিলা/জোয়া), জোজো (সুরভীন চাওলা), লিউক কেনি (ম্যালকম), মাজিদ (আমির বশীর), গিরিশ কুলকার্নি (ভোসলে), চিত্তরঞ্জন ত্রিপাঠি (ত্রিবেদি), জয়প্রীত সিং (দিলবাগ সিং) 

পর্বসংখ্যা : ১৬ (প্রথম ও দ্বিতীয় মৌসুম) 

মুক্তি : প্রথম মৌসুম: ৬ জুলাই ২০১৮, দ্বিতীয় মৌসুম: ১৫ আগস্ট ২০১৯