বকুলতলায় নৃত্য-গীতে শরৎবন্দনা

উৎসবে ছিল সমবেত নৃত্য পরিবেশনা । ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
উৎসবে ছিল সমবেত নৃত্য পরিবেশনা । ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ভোরের সূর্য উঁকি দিয়েছে। এসরাজের সুরে নতুন একটি দিনের আহ্বান। তাতে ছিল শরতের নিমন্ত্রণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ শুক্রবার ছুটির দিনের ভোরে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করেছিল শরৎ উৎসব।

শুক্রবার সকাল, ছুটির দিনে ঢাকা শহরের ঘুম তখনো ভালো করে ভাঙেনি। সংগত কারণে পথও ছিল ফাঁকা। টিএসসিতে তারুণ্যের আড্ডা জমতে দেখা যায়নি। শরতের নৈসর্গিক রূপবন্দনাই ছিল উৎসবের সংগীতে, নৃত্যে। মঞ্চও সাজানো হয়েছিল মেঘ আর কাশফুলের ছবি দিয়ে। উৎসবে অংশ নিতে আসা দর্শকদের পোশাকেও ছিল শরতের নীল-সাদার প্রভাব। তরুণীরা পরেছিলেন সাদা ও নীল রঙের নকশা করা শাড়ি। অনেকের খোঁপায় জড়ানো শিউলির মালা। সব মিলিয়ে শরতের মতো উৎসবেও ছিল স্নিগ্ধ পরিবেশ।

অসিত বিশ্বাসের সেতার বাদন দিয়ে শুরু হয়েছিল উৎসবের কার্যক্রম। এরপর সুরবিহারের শিল্পীরা ‘আমার নয়ন-ভুলানো এলে’ গানটি সমবেত কণ্ঠে গানটি পরিবেশন করেন। আয়োজক সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা শোনান ‘দেখো দেখো, দেখো, শুকতারা আঁখি মেলি চায়’ গানটি। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা শোনান ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী’ গানটি। অনুষ্ঠানে একক গান শোনান বিশ্বজিৎ রায়, সালমা আকবর, অণিমা রায়, তানভীর সজিব, রত্না সরকার, আবিদা রহমান, মাহমুদা মৌমিতা। তাঁদের পরিবেশনায় ছিল ‘তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে’, ‘আগমনী গান শোনা যায়’, ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’, ‘সারদ প্রাতে ঝিলের জলে শাপলা’ প্রভৃতি গান। একক ও দলীয় গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস, নৃত্যজন ও স্বপ্ন বিকাশ কলাকেন্দ্রের শিল্পীরা। একক আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ, নায়লা তারাননুম চৌধুরী প্রমুখ।

শুক্রবার সকালে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছিল শরৎ উৎসব। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
শুক্রবার সকালে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছিল শরৎ উৎসব। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

অনুষ্ঠানের মাঝে মঞ্চে শরৎ-কথন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি, রবীন্দ্রগবেষক ও লেখক হায়াৎ মামুদ।

শুক্রবার সকালের এই আয়োজনে নৃত্য, গান, কবিতার পরিশীলিত পরিবেশনে শিল্পীরা যেমন শরৎকে বরণ করেছেন, ঠিক তেমনি উৎসবপ্রিয় দর্শকদের আন্তরিক অভিবাদনেও উঠে এসেছে শরতের প্রতি তাঁদের ভালো লাগা আর ভালোবাসার প্রকাশ। বকুলতলায় সকালের পর্বটি শেষ হওয়ার পরই চারুকলা অনুষদের বারান্দায় উৎসব উপলক্ষে শুরু হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ‘শরৎ ঋতু’। নির্ধারিত সময়ের পরে আসার কারণে শরৎ-কথন পর্বে অংশ নিতে না পারলেও উৎসবের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ঘুরে দেখেন।

সমবেত গানের পরিবেশনা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
সমবেত গানের পরিবেশনা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এতে দলীয় গান পরিবেশন করবে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, উদয়ন, উজান, সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি ও সমস্বরের শিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, স্বপ্ন বিকাশ কলাকেন্দ্র, স্কেচ, অঙ্গীকার, ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র ও বেনুকা ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি করবেন মুক্তধারা সংস্কৃতি ও আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্রর শিল্পীরা। একক আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করবেন ইকবাল খোরশেদ, মাসকুর-এ-সাত্তার, রেজীনা ওয়ালী, ফয়জুল আলম, জহিরুল আলম, আহসান তমাল ও আজিজুল বাশার। একক গান শোনাবেন মহাদেব ঘোষ, মহিউজ্জামান চৌধুরী, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সরদার রহমত উল্লাহ, খগেন্দ্রনাথ সরকার, আকরামুল ইসলাম, খন্দকার মুজিবুল কাইয়ুম, তানজিলা তমা, শাহনেওয়াজ পারভীন, তামান্না নিগার, সমর বড়ুয়া, পল্লব গোমেজ, সানজিদা মঞ্জুরুল, রাবেয়া আক্তার, শ্রাবণী গুহ রায়, মীরা মণ্ডল, এস এম মেজবাহ, মাহমুদা তাবাসুমসহ অনেকে।

একক ও দলীয় গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল দলীয় নৃত্য। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
একক ও দলীয় গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল দলীয় নৃত্য। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন