মধুমিতা ও সৌরভের বিবাহবিচ্ছেদ
ভারতের ছোট পর্দায় মধুমিতা সরকারের শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালে। সিরিয়ালটির নাম ‘সবিনয় নিবেদন’। প্রচারিত হয় সানন্দা টিভিতে। একই সিরিয়ালে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন সৌরভ চক্রবর্তী। কাজ করতে এসে পরিচয় হলেও মন দেওয়া-নেওয়া শুরু হয় মাস ছয়েক পর। এরপর কঠিন প্রেম। অনেক বাধা আর বিপত্তি কাটিয়ে ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই তাঁরা বিয়ে করেন। এবার জানা গেছে, পর্দার এই জনপ্রিয় জুটি বাস্তব জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুজনের কেউই চান না তা নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি হোক। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়া।
বিয়ের পর পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন মধুমিতা ও সৌরভ। সাজিয়েছেন নিজেদের মনের মতো করে। জানা গেছে, গত আগস্ট মাসে এই ফ্ল্যাট থেকে চলে যান মধুমিতা। পর্দায় তাঁরা খুব জনপ্রিয় হলেও অনেক দিন তাঁদের একসঙ্গে কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি।
মধুমিতা এখন ব্যস্ত ওয়েব সিরিজ নিয়ে। নাম ‘জাজমেন্ট ডে’। পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী। মধুমিতা এই মুহূর্তে ওয়েব সিরিজটির শুটিং করছেন দার্জিলিংয়ে। বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি দেননি।
সৌরভ ব্যস্ত নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ট্রিকস্টার নিয়ে। ‘কার্টুন’, ‘জাপানি টয়’, ‘ধানবাদ ব্লুজ’—গত দুই বছরে তিনটি সফল ওয়েব সিরিজ প্রযোজনা করেছে ট্রিকস্টার। ভারতের কলকাতার এক সংবাদমাধ্যমকে সৌরভ বলেছেন, ‘একসময় প্রেম থেকে বিয়ের দিকে বিষয়টি এগিয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা আলাদা থাকলে আরও ভালো থাকতে পারব, যেটা একসঙ্গে থেকে হচ্ছিল না। সেখান থেকেই সরে আসার সিদ্ধান্ত। আলাদা করে দোষারোপ করার কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের দুজনের জীবন আলাদা। তাই দুজনের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনার কোনো ইচ্ছা নেই। বিষয়টা কষ্টকর। কিন্তু কিছু করার নেই।’
আরও বললেন, ‘ভবিষ্যতে বন্ধুত্ব থাকবে কি না, তা আমরা কেউ জানি না। চেষ্টা করব বন্ধুত্ব রাখার। সাধারণত ডিভোর্স হলে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়ে থাকে। বন্ধুত্ব থাকবে—এই আশা করেই আমরা সেটা করছি না। আমরা চাই না ভালোভাবে শেষ হোক।’
পর্দায় দুজনই জনপ্রিয়। তাই একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে সৌরভ বললেন, ‘আমরা দুজনই খুব পেশাদার। তাই সে ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা না।’
এই দুই তারকার বন্ধুদের মতে, ২০১১ সালে নিজেদের মধ্যে যে চমৎকার সম্পর্ক ছিল, এখন মধুমিতা আর সৌরভের সেই ভালোবাসার টান নেই বললেই চলে। শুরুতে তাঁদের মধ্যে যে রসায়ন তৈরি হয়েছিল, তা আর কাজ করছে না। ধীরে ধীরে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, নিজেদের পছন্দ অপছন্দগুলো আলাদা হয়ে গেছে। এক ছাদের নিচে থেকেও একে অন্যের থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। তাই আলোচনা মাধ্যমে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের পথ বেছে নিয়েছেন।
বছরের শুরুতেই বাবাকে হারিয়েছেন সৌরভ। জানালেন, তাঁদের পরিবারে মধুমিতা শুরু থেকেই খুব আদরের বউমা। তাঁর বাবা মধুমিতাকে এতটাই ভালোবাসতেন যে পুত্রবধূকে নিয়ে কোনো সমালোচনা তিনি পছন্দ করতেন না। নিজের মন খারাপের দিনগুলোয় মধুমিতাকে পাশে পেয়েছেন, তাই তাঁকে ধন্যবাদ জানান সৌরভ।
‘বোঝে না সে বোঝে না’র ‘পাখি’ আর ‘কুসুম দোলা’র ‘ইমন’। দুটি সিরিয়ালই প্রচারিত হয় স্টার জলসায়। এই সিরিয়াল দুটি দারুণ জনপ্রিয় হয়। অল্প সময়েই বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ পরিবারের একজন হয়ে যান মধুমিতা সরকার। ‘পাখি’ হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয়তা, তেমনি ‘ইমন’ও দর্শকের দারুণ পছন্দের।
‘বোঝে না সে বোঝে না’র প্রচার শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর। এই সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট শুরু হয় ‘কুসুম দোলা’। সংসার কিংবা নিজের জন্য আলাদা করে এতটুকু সময় পাননি মধুমিতা। টানা কাজ করেছেন। তবে ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ‘কুসুম দোলা’ শেষ হওয়ার পর আর কোনো সিরিয়ালে দেখা যায়নি তাঁকে। তখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মধুমিতা বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আর মেগা সিরিয়াল করব না। ওয়েব সিরিজে অভিনয় করব। সিনেমায় কাজের ব্যাপারেও আলোচনা হচ্ছে।’ ‘পাখি’ আর ‘ইমন’ থেকে বেরিয়ে তিনি পুরোপুরি মধুমিতা হয়ে যান।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ‘বোঝে না সে বোঝে না’র ‘পাখি’ চরিত্রটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে ওই বছর ঈদে ‘পাখি ড্রেস’ নামে মেয়েদের নানা পোশাক বাজারে আসে। ঈদে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে না দেওয়ায় বাবার ওপর অভিমান করে আত্মহত্যা করেন এক তরুণী। আবার ‘পাখি ড্রেস’ না পাওয়ায় এক নারী স্বামীর সংসার ছেড়ে যান। এবার নিজের সংসার থেকে বেরিয়ে গেলেন সেই ‘পাখি’ মধুমিতা সরকার।