'আমার প্রতি আপনার কোনো সহানুভূতি নেই, আমির'

আমির খান, তনুশ্রী দত্ত। ছবি: আমির খান ও তনুশ্রী দত্তের ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
আমির খান, তনুশ্রী দত্ত। ছবি: আমির খান ও তনুশ্রী দত্তের ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

ছবির সেটেই পরিচালক সুভাষ কাপুরকে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের সামনে চড় মেরেছিলেন গীতিকা তিয়াগি। যৌন নিপীড়নের অভিযোগে। এটা ২০১৪ সালের ঘটনা। তখন আমির খান বলেছিলেন, তিনি আর কখনো ‘জলি এলএলবি’খ্যাত এই পরিচালকের সঙ্গে কাজ করবেন না। সেই মামলা এখনো চলছে। তবে ঘোষণা এসেছে, সুভাষ কাপুরের নতুন ছবিতে অভিনয় করবেন আমির খান। শুধু তা-ই নয়, ছবিটির অন্যতম প্রযোজক আমির খানের স্ত্রী কিরণ রাও।

হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির খান সুভাষ কাপুরের সঙ্গে ছবি করার বিষয়ে সাফাইও গেয়েছেন। বলেছেন, ‘আইনে এখনো প্রমাণিত হয়নি যে তিনি অপরাধী। যতক্ষণ রায় না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোনো কাজ করতে পারবেন না, হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবেন, তা হতে পারে না।’ শুধু তা-ই নয়, কেন তিনি সুভাষ কাপুরের ছবিতে অভিনয় করবেন, সেই বিষয়ে লিখিত বক্তব্যও প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, বলিউড, তনুশ্রী দত্ত আর মিটু। এই তিনে মিলে তো আর কম জল ঘোলা হলো না। তনুশ্রী দত্তই প্রথম বলিউডে ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’র শুরু করেন। প্রায় ১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলেন। বলেন, ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবি করতে গিয়ে তাঁর সহ-অভিনেতা তাঁকে যৌন হেনস্তা করেছেন। আর সেই সহকর্মীর নাম নানা পাটেকার।

তারপর এই ঘটনা নিয়ে বলিউড তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেল। একদল নানা পাটেকারের পক্ষ নিল, একদল তনুশ্রী দত্তর। তৃতীয় দল গালে হাত দিয়ে মজা দেখতে লাগল যে জল কত দূর গড়ায়, কোথায় গড়ায়। দিন শেষে রায় এল নানা পাটেকারের পক্ষে।

আমির খানের লেখা পড়ে বেজায় খেপেছেন সেই তনুশ্রী দত্ত। ডেকান ক্রনিকলকে জানিয়েছেন, ‘লেখাটা পড়লাম। সুভাষ কাপুরের সঙ্গে কাজ করার পক্ষে নানা রকম যুক্তি দেখিয়েছেন। একজন নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। বলিউড উল্টো নিপীড়িতকে একঘরে করে রাখছে। আর নিপীড়নকারীকে দিচ্ছে “ক্লিন চিট”। এ রকম অবস্থায় কীভাবে বলিউডের সবাই নাকে তেল দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমেতে পারে?’

তনুশ্রী আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে, যৌন নিপীড়নের প্রতি যথেষ্ট সমর্থন আছে। আমিও বলিউডের অংশ ছিলাম। কিন্তু যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনায় এখন আমি বলিউড থেকে জীবিকা উপার্জনের পথ হারিয়েছি। আমি মেধাবী অভিনয়শিল্পী। কিন্তু এখন আমি সব কাজ হারিয়েছি। আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। কোনো বড় পরিচালক তাঁর ছবিতে আর আমাকে নেন না। সমস্ত মানসিক চাপ, অসম্মান আর অপমান কেবল আমার।’

শেষ করেছেন আমির খানের প্রতি কেবল একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে। অভিযুক্ত নিপীড়নকারীর প্রতি আমির খান খুবই সহানুভূতি দেখাচ্ছেন। তাঁর পরিচালনায় বায়োপিকে কাজ করছেন। তাই তনুশ্রী জানতে চেয়েছেন, ‘আমার প্রতি আপনার কোনো সহানুভূতি নেই, আমির?’

অন্যদিকে, মিড ডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গীতিকা তিয়াগিও জানিয়েছেন ক্ষোভ। বলেছেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রি খুবই একপেশে, পুরুষতান্ত্রিক। আমির খানের সিদ্ধান্তকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমি যে ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো কাজ পাইনি, সেই বেলা? আমার জীবিকার কী হবে? বলিউডের আচরণ সব পক্ষের জন্য সমান হওয়া উচিত।’ যদিও গীতিকা এও বলেছেন, আমির খানের এই সিদ্ধান্ত মামলার রায়কে প্রভাবিত করবে না বলেই তাঁর বিশ্বাস।

আমির খান সুভাষ কাপুরের পরিচালনায় যে ছবিটি করছেন, সেটি চলচ্চিত্র প্রযোজক গুলশান কুমারের ওপর। এই গুলশান কুমারই জনপ্রিয় মিউজিক রেকর্ডিং কোম্পানি টি-সিরিজের প্রতিষ্ঠাতা। আর বড় পর্দায় গুলশান কুমারের ভূমিকায় দেখা যাবে মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানকে।