বাবার পরিচয় থেকে দূরে দুলকর সালমান

দুলকর সালমান। ছবি: টুইটার
দুলকর সালমান। ছবি: টুইটার

সাধারণত দক্ষিণি তারকাদের হিন্দিতে জড়তা থাকে। কিন্তু বেশ গড়গড়িয়ে হিন্দি বললেন ভারতের দক্ষিণের তারকা দুলকর সালমান। জোয়া ফ্যাক্টর ছবিতে এই নায়ককে দেখা যাবে সোনম কাপুরের বিপরীতে।

মালয়ালম, তামিল ছবির সুপারস্টার দুলকরকে এখন পর্যন্ত একটামাত্র হিন্দি ছবিতে দেখা গেছে। ছবির নাম কারওয়া। ইরফান খানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন দুলকর। এরপর বেশ সময়ের বিরতিতেই আবার ফিরছেন হিন্দি ছবিতে। কেন বলিউডে আসা-যাওয়া এত কম তাঁর? এ প্রসঙ্গে দুলকর সালমান বলেন, ‘আমি এত ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি যে ব্যালান্স রাখা মুশকিল হয়। তবু আমি চেষ্টা করব। মালয়ালম, তামিল, হিন্দি—সবখান থেকেই দারুণ দারুণ প্রস্তাব পাচ্ছি। কিন্তু সময় করে উঠতে পারি না। তাই আমি সবার আগে জিজ্ঞেস করি যে শুটিংয়ে শিডিউল কত দিনের। টানা ৬০ থেকে ৭০ দিনের শিডিউল হলে করতে রাজি হই।’

লার্জার দ্যান লাইফ থেকে বাস্তবভিত্তিক ছবিতে অভিনয় করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন এই অভিনেতা। তিনি মনে করেন, বেশি অবাস্তব বা জাঁকজমকপূর্ণ ছবির জন্য তিনি একদমই বেমানান। তাই ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু খুঁতখুঁতে এই নায়ক। জোয়া ফ্যাক্টর নায়িকাপ্রধান ছবি। এই ধরনের ছবি দুলকর কেন বেছে নিলেন? এর জবাবে এই দাপুটে অভিনেতা বলেন, ‘আপনি ছবিটা দেখলে বুঝবেন যে আমি কোনো ভুল করিনি। এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। দক্ষিণে আমি মহানটি বলে একটা ছবি করেছিলাম। অভিনেত্রী সাবিত্রীর বায়োপিক সেটি। আমি জানতাম, এটাও নায়িকাপ্রধান ছবি। এই ছবিতে আমি সাবিত্রীর স্বামী যামিনী গণেশনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। ছবিতে আমার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশ। তবু আজও আমাকে সবাই সেই চরিত্রের জন্য মনে রেখেছেন। স্বল্প উপস্থিতিতেও দর্শকের মনে দাগ কাটা যায়।’

ভাগ্য, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার—এসব নিয়ে জোয়া ফ্যাক্টর। বিয়ের পর দুলকর ছবির দুনিয়ায় পা রাখেন। মা-বাবার পছন্দ করা পাত্রীকেই বিয়ে করেন। এরপর থেকেই সাফল্য তাঁর ছায়াসঙ্গী। তাই কোথাও কি স্ত্রী আমল দুলকরের ভাগ্য এই সাফল্যের কারণ বলে মনে করেন? এবার একটা লাজুক হাসি দেন দুলকর আর বলেন, ‘আমার প্রথম ছবির চুক্তি সই আর বাগদান একই বছর একই মাসে হয়েছিল। তারপর থেকে আমার ক্যারিয়ার, জীবন, ভাগ্য—সবকিছু বদলে যায়। জানি না, হয়তো স্ত্রীর জন্যই এসব সম্ভব হয়েছে।’

পাঁচতারা হোটেলে বৃষ্টিভেজা এই বৈকালিক আড্ডায় নিশ্চিতভাবে উঠে এল সালমানের বাবা দক্ষিণি মেগাস্টার মাম্মুটির কথা। চার শতাধিক ছবি করেছেন, তিনবার জিতেছেন জাতীয় পুরস্কার। শোনা গেছে, ৩৬৯টি গাড়ির মালিক পদ্মশ্রী মাম্মুটি। এই মহাতারকার সন্তানই দুলকর। যদিও বাবার পরিচয়ে কখনো পরিচিত হতে চাননি ছেলে। তাই কোথাও বাবার পদবি ব্যবহার করেননি কখনো। তবু বাবাকে আদর্শ করে আজ দুলকর দক্ষিণি ছবির জগতে রীতিমতো রাজত্ব করছেন। বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই সালমান বলেন, ‘আমার বাবা চাননি তাঁর তারকাখ্যাতির তলায় আমি বেড়ে উঠি। তাই আমাকে তিনি তাঁর থেকে দূরে চেন্নাইয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাই আমার বেড়ে ওঠাটা খুব সাধারণ। স্কুলজীবন থেকেই আমি বাবার পদবি ব্যবহার করিনি। আমার মনে হয়, বাবা চাননি যে আমি তাঁর পদবি ব্যবহার করে সবার অতিরিক্ত মনঃসংযোগ আদায় করি। আর এতে আদপে আমারই উপকার হয়েছে। তাই পরে আমিও আর পদবি ব্যবহার করিনি।’

তবে বাবার পদবি ব্যবহার না করলেও ছায়াছবির আঙিনায় পা রাখার সময় অত্যন্ত চাপে ছিলেন দুলকর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আর পাঁচটা স্টার কিডের মতো আমিও চাপে ছিলাম। আমার ভয় ছিল যে বাবাকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের যেন আমি হতাশ না করি। তাই চেষ্টা করি ভালো মানের ছবিতেই কাজ করতে।’ আজ অবধি বাবা-ছেলেকে একসঙ্গে পর্দায় দেখা যায়নি। দুলকর মনে করেন না যে বাবার সঙ্গে কখনো একই পর্দায় আসা সম্ভব।

সালমান দক্ষিণে বেড়ে উঠলেও তাঁর কৈশোর ও যৌবনজুড়ে হিন্দি ছবি। দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে, আন্দাজ আপনা আপনা, কহোনা প্যায়ার হ্যায়-এর মতো ছবিগুলো তাঁর প্রিয় ছবির তালিকায়। বলিউডের তিন খান ছাড়া রাজকুমার রাও, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি ও ইরফান খান দুলকরের প্রিয় অভিনেতা। এদিকে অভিনেত্রীদের মধ্যে তাঁর পছন্দের হলেন দীপিকা পাড়ুকোন ও আলিয়া ভাট। আড্ডা যখন শেষ হলো, তখন সন্ধে নেমে এসেছে। বাইরে তখনো এলোমেলো বৃষ্টি। তারই মধ্যে এক মিষ্টি হাসি হেসে দুলকর সালমান বলেন যে একটা হিন্দি ছবির কথা চলছে। তাই আবার নিশ্চয় দেখা হবে।