বাইরে বৃষ্টি, ভেতরে চন্দনার গান
থেমে থেমে বৃষ্টি ছিল সারা দিন। মৃদুমন্দ বাতাস। ছুটির দিন হলেও গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তীব্র যানজট দেখা যায় রাজধানী ধানমন্ডি এলাকায়। এ সবকিছু দমাতে পারেনি ছায়ানট ভবনে আসা সংগীতপিপাসুদের। সন্ধ্যায় সেখানে ভেসে বেড়ায় লোক আর মরমি গানের সুর। গানের বাণী আর সুরের অবগাহনে প্রকৃতির মতোই সিক্ত হয় শ্রোতার অন্তর।
ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনের রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন লালনগীতি ‘গুরু আমারে কি রাখবেন করে চরণ দাসী’, ‘সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা’সহ কালজয়ী সব গান। লোকগানের বিশিষ্ট শিল্পী চন্দনা মজুমদার শোনালেন লালন, রাধারমণ, বিজয় সরকার, শাহ আবদুল করিম, পাগলা কানাইসহ কয়েকজন গুণীজনের গান। ছায়ানট আয়োজিত নিয়মিত শ্রোতার আসরে এবার মূল শিল্পী ছিলেন তিনি। অবশ্য চন্দনা মজুমদারের গাওয়ার আগে কয়েকটি গান শোনান ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক সহযোগী মোহাম্মদ মানিক জালাল উদ্দিন খাঁ। তিনি শুনিয়েছেন ‘প্রাণনাথ ছাড়িয়া যাইও না মোরে’ ও ‘ভাবতরঙ্গে এসো আমার সঙ্গে’ গানগুলো।
শুরুতে চন্দনা মজুমদার শোনান লালনগীতি ‘জগৎ মুক্তিতে ভোলালেন সাঁই’। এরপর একে একে পরিবেশন করেন লালনের ‘গুরু আমারে কি রাখবেন করে চরণ দাসী’, ‘নিগুম বিচারে সত্য’, ‘সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা’, ‘হক নাম বল রসনা’সহ কয়েকটি গান। এরপর শুরু করেন রাধারমণের গান। এর মধ্যে ছিল ‘যাওরে ভ্রমর উড়িয়া, রাধার বন্ধুরে কইও গিয়া’, ‘আমার কৃষ্ণ কোথায় পাইগো কৃষ্ণ কোথায় পাই’সহ আরও অনেক গান। তাঁর পরিবেশনায় ছিল চারণকবি বিজয় সরকারের ‘আমার প্রাণ বন্ধুয়ার দেশে রে’, শাহ আবদুল করিমের ‘আমার মাটির পিঞ্জিরার সোনার ময়না রে।’
শ্রোতার আসর ছায়ানটের নিয়মিত আয়োজন। বাঙালিকে তার গানের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সংগীত রুচিতে আভিজাত্য আনতে, প্রতিষ্ঠার পরই ঘরোয়া আসর শুরু করে ছায়ানট। শ্রোতার আসরের প্রথম অনুষ্ঠান হয় মোখলেসুর রহমান সিধু ঢাকার ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিটের বাসায়। গেয়েছিলেন ওই সময়ে কলকাতা থেকে আসা ফিরোজা বেগম। পরের অনুষ্ঠানগুলো সাজানো হয় ফাহমিদা খাতুনের রবীন্দ্রসংগীত, খাদেম হোসেনের সেতারবাদন এবং ইউসুফ খান কোরেশি ও ইয়াসিন খানের উচ্চাঙ্গসংগীত দিয়ে।
সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছায়ানট আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ায় কয়েকটি অধিবেশনের পর আর হয়নি শ্রোতার আসর। পরে ছায়ানট আবার শ্রোতার আসর শুরু করে ২০০৭ সালের ২০ জুন, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী সুফিয়া কামালের জন্মদিনে।
সংগীতে শ্রোতার চিত্ত উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে প্রথমে আয়োজন ছিল মাসিক। বর্তমানে বছরে ছয়টি আসরের আয়োজন করছে ছায়ানট। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলা মাসের চতুর্থ শুক্রবার সন্ধ্যায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে হচ্ছে অনুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সঙ্গে নবীন শিল্পীদের এই আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অনুষ্ঠানের দিনে শ্রোতা হওয়ার পাশাপাশি উৎসুকজনের জন্য থাকে বার্ষিক সদস্যপদের ব্যবস্থা।