নগরের মঞ্চগুলো এখনো পায়নি শিল্পকলা একাডেমি

গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার নাট্যাঙ্গনে মঞ্চের অভাব। নাটকের দলগুলো তাই চাইলেও শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ বরাদ্দ পায় না। ঢাকার নাট্যকর্মীদের মাত্র তিনটি মঞ্চ চাহিদামতো বরাদ্দ দিতে হিমশিম খেতে হয় শিল্পকলাকে। এ অবস্থায় নাট্যদলগুলোর চাহিদা মোতাবেক মঞ্চ দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সংকট কাটাতে বিকল্প পথ ভেবেছিল শিল্পকলা একাডেমি। শহরের ভেতরে মঞ্চগুলোকে নিজেদের আওতায় নিয়ে এলে সংকট খানিকটা কাটবে। অন্যদিকে নাটককে শিল্পকলাকেন্দ্রিক না রেখে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে শহরের আনাচকানাচে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি এগোতে পারেনি তারা।

অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ঢাকা শহরের বেশ কিছু মঞ্চ ও মিলনায়তন। এগুলো ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতায় রয়েছে। কালেভদ্রে সেসব জায়গায় অনুষ্ঠান হয়। শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেসব মঞ্চ ও মিলনায়তনকে নাট্যমঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এতে একদিকে ওই মঞ্চ ও মিলনায়তনগুলোর যথাযথ ব্যবহার হবে। পাশাপাশি সেগুলোর নিয়মিত দেখভালের একটি ব্যবস্থাও হবে।

ইতিমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চটি নিজেদের আওতায় নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। এ রকম মঞ্চের মধ্যে ঢাকা শহরে আরও রয়েছে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চ, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ, পুরান ঢাকার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ইতিমধ্যে এ নিয়ে মেয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। এ বিষয়ে আন্তরিক সাড়াও পাওয়া গিয়েছিল তৎকালীন মেয়র আনিসুল হকের কাছ থেকে।

তবে এ মঞ্চগুলো নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিলেই কি মঞ্চসংকট কাটবে? শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী মনে করেন, রাজধানীর আনাচকানাচে অন্তত ২০ থেকে ৫০টি নাট্যমঞ্চ দরকার। এ মঞ্চগুলো করা গেলে শিল্পকলার মঞ্চগুলোর ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো নাটকের দল একাধিক প্রদর্শনী করতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের বরাদ্দ দিতে পারি না। মাসে যদি দুই শ প্রদর্শনীর চাহিদা থাকে, আমরা হয়তো এক শ প্রদর্শনীর জন্য মিলনায়তন বরাদ্দ দিতে পারি। এ অবস্থায় শহরের আনাচকানাচে থাকা মঞ্চ ও মিলনায়তনগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে আনা দরকার। পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চাকে সারা শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দরকার নতুন মঞ্চ স্থাপন। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও পরিকল্পনা চলছে।’

আগেও তিনি জানিয়েছিলেন, সুষ্ঠু ও অবাধ সংস্কৃতিচর্চার জন্য জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, লালকুঠি মিলনায়তন এবং গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু বেশি দূর এগোয়নি সেই কার্যক্রম। যদিও এ উদ্যোগ সম্পর্কে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন সংস্কৃতিজনেরা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘এসব মঞ্চকে শিল্পকলা একাডেমির আওতায় নিয়ে খুব একটা লাভ হবে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। নগরের মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করার কাজটি সিটি করপোরেশনেরও দায়িত্ব। আমরা বরং দাবি করতে পারি সিটি করপোরেশন যেন আরও মঞ্চ নির্মাণ করে। সেগুলো অল্প দামে ভাড়া দেওয়া ও শিল্পীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। সব কটি মঞ্চ শিল্পকলার আওতায় নিলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।’

ইতিমধ্যে শহরের কয়েকটি জায়গায় নাট্যমঞ্চ ব্যবহার করতে গিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়নি। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, মালপত্র নিয়ে এত দূরে আসতে নাটকের দলগুলোর খরচ বেশি হয়ে যায়। তা ছাড়া এখানে নাটক করলে দর্শকের তেমন সাড়া পাওয়া যায় না।