'হো চি মিন'-এ মুগ্ধ দর্শক

‘হো চি মিন’ নৃত্যনাট্যের একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো
‘হো চি মিন’ নৃত্যনাট্যের একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো

সমাজে কেউ পেট ভরে খাবে, কেউ অভুক্ত থাকবে? সাম্যবাদী নেতা হো চি মিন সেটা চাননি। তাই প্রতিষ্ঠিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। দেশকে সমতার ভূমি করে তুলতে চেয়েছিলেন।

ঢাকায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলো নতুন নৃত্যনাট্য ‘হো চি মিন’-এর দুটি প্রদর্শনী। জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এটি মঞ্চে নিয়ে আসে তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটার। সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনামের দ্রষ্টা হো চি মিনের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আর দেশটির জাতীয় দিবস ছিল ২ সেপ্টেম্বর। এ দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে ভিয়েতনাম সরকারের আহ্বানে নৃত্যনাট্যটি তৈরি করেছে বাংলাদেশের এই নাচের দল। ‘হো চি মিন’ নৃত্যনাট্যের শব্দ ও সংগীতে শোনা গেছে হো চি মিনের কণ্ঠ, তাঁর লেখা কবিতার আবৃত্তি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের গানের সুর। এই নৃত্যনাট্যের চিত্রনাট্য, নির্দেশনা, কোরিওগ্রাফি, সেট, পোশাক, কণ্ঠ ও নির্দেশনা দিয়েছেন পূজা সেনগুপ্ত।

নৃত্যনাট্যে আলো আর শব্দের ব্যবহার চমকে দিয়েছে দর্শকদের। ছবি: প্রথম আলো
নৃত্যনাট্যে আলো আর শব্দের ব্যবহার চমকে দিয়েছে দর্শকদের। ছবি: প্রথম আলো

নৃত্যনাট্যে আলো আর শব্দের ব্যবহার চমকে দিয়েছে দর্শকদের। নাচের মধ্য দিয়ে একজন সংগ্রামী মানুষের গল্প বলার পরিবেশন শিল্প ঢাকার মঞ্চে একেবারেই নতুন। তাই দারুণ উপভোগ করেছেন সবাই। দুই দিনের প্রদর্শনীতে সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের গুণীজন আর সাধারণ দর্শকদের মিলনমেলায় পরিণত হয় জাতীয় নাট্যশালা। প্রথম দিন দুটি প্রদর্শনীতেই ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। দ্বিতীয় দিনে মিলনায়তন সংরক্ষিত ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য। ওই দিন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

ভিয়েতনাম সরকারের আহ্বানে নৃত্যনাট্য তৈরি করেছে তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটার। ছবি: প্রথম আলো
ভিয়েতনাম সরকারের আহ্বানে নৃত্যনাট্য তৈরি করেছে তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটার। ছবি: প্রথম আলো

প্রদর্শনী শেষে মঞ্চে এসে নির্দেশক পূজা সেনগুপ্তকে নিজেদের ভালো লাগার কথা জানিয়ে তুরঙ্গমী নৃত্যদলের সঙ্গে একই ফ্রেমে বন্দী হন বাংলাদেশের নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেনে হলেন্সটাইন, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও টাবাজারা ডি অলিভিয়েরা, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পাক সং ইয়োপ, ইতালির রাষ্ট্রদূত এন্রিকো নুনজিয়াটা, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভ্রিম ওজতুর্ক, দারুসসালামের রাষ্ট্রদূত হাজি হারিস বিন ওথম্যান, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার আমির ফরিদ বিন আবু হাসান, সিঙ্গাপুরের কনসাল উইলিয়াম চিক, নেপাল, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি স্টিফেন করলিস।

জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ‘হো চি মিন’-এর দুটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটার। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ‘হো চি মিন’-এর দুটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটার। ছবি: প্রথম আলো

নৃত্যনাট্য ‘হো চি মিন’ দেখে নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, ‘এত অল্প সময়ের ভেতরে হো চি মিনের বিরাট জীবন অতি সুন্দর, অতি নান্দনিক, অত্যন্ত সু-অভিনয়, সু-নৃত্য ও পরিবেশনার মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মঞ্চকে উজ্জ্বল করেছে। এটি বাংলাদেশের গৌরবের ব্যাপার। আব্রাহাম লিংকনের জীবনী নিয়ে ছবি হয়েছে, মহাত্মা গান্ধীর জীবনী নিয়ে ছবি হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে ভাবা হচ্ছে। “হো চি মিন” নৃত্যনাট্যে পূজা সেনগুপ্তর কোরিওগ্রাফি, ধারাবর্ণনা, অভিনয়, সেই সঙ্গে মুকুলের অভিনয় অসাধারণ হয়েছে! ফরাসিদের সঙ্গে ভিয়েতনামিদের যে সংগ্রাম, সেটা যেমন উঠে এসেছে, আমেরিকানদের সঙ্গে সংগ্রাম, তাও এসেছে এবং খুব ভালোভাবে এসেছে। আসলে হো চি মিনের মতো মানুষকে বারবার দেখতে ইচ্ছা করে।’

প্রযোজনাটি দেখে ফেসবুকে আতাউর রহমান লিখেছেন, ‘মনোমুগ্ধকর, সুষমামণ্ডিত ও মেদহীন ছিল এই প্রযোজনা। আমি আমার তরুণ বয়সের হিরো সাম্যবাদী ইন্দোচীনের আপসহীন নেতা হো চি মিনকে অনেকখানি খুঁজে পেলাম।’

নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক আমানুল হক বলেন, ‘বিপ্লব ছাড়া, প্রগতিশীল চিন্তা ছাড়া যেকোনো সৃষ্টি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। পূজার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ও মৌলিক কাজ করে। ভিয়েতনামের জাতির জনক, প্রেসিডেন্টকে নিয়ে অন্য একটি দেশের কম্পোজার কাজ করছে, এটা কিন্তু একটা অসাধারণ ব্যাপার।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিপ্লব বালা বলেন, ‘কাজটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। সত্যিকার অর্থেই আন্তর্জাতিক মানের ড্যান্স থিয়েটার বলতে যা বোঝায়, তা নির্মিত হয়েছে। এ রকম কাজ ঢাকার মঞ্চে বারবার হোক।’

জীবনীভিত্তিক এ নৃত্যনাট্যের চিত্রনাট্য, নির্দেশনা, কোরিওগ্রাফি, সেট, পোশাক, কণ্ঠ ও নির্দেশনা দিয়েছেন পূজা সেনগুপ্ত। ছবি: প্রথম আলো
জীবনীভিত্তিক এ নৃত্যনাট্যের চিত্রনাট্য, নির্দেশনা, কোরিওগ্রাফি, সেট, পোশাক, কণ্ঠ ও নির্দেশনা দিয়েছেন পূজা সেনগুপ্ত। ছবি: প্রথম আলো

নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন একটা ভাবনা! হো চি মিন সারা বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা। এত বড় একজন নেতার জীবনীভিত্তিক একটা প্রযোজনা হয়েছে এবং পূজা সেনগুপ্তর নেতৃত্বে তুরঙ্গমী করেছে; আমি মনে করি, বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের জন্য এটা একটা মাইলফলক।’

বাংলাদেশে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ট্রান ভান খোয়া বলেন, ‘প্রথমবারের মতো কোনো জীবনীভিত্তিক ড্যান্স থিয়েটার মঞ্চায়িত হলো। ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের ইতিহাসের মধ্যে অনেক মিল আছে। আমি এই প্রযোজনা নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত।’

তুরঙ্গমী পরিচালক পূজা সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের পুরো দল অনেক পরিশ্রম করেছে। দর্শকদের মতগুলো ইতিমধ্যেই আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। প্রযোজনাটি নিয়ে আলাদাভাবে কিছু বলতে চাই না। আমি যা বলতে চেয়েছি, সেটা আমার কাজের মাধ্যমেই বলেছি। হো চি মিনের মতো এত বড় মাপের নেতার জীবন নিয়ে কাজ করার সুযোগ আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার, সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছেন।’