সেটা আমার জীবনের সেরা রাত: রণবীর
তাঁকে বলা হয় ‘প্রিন্স অব বলিউড’। এক যুগে তাঁর ঝুলিতে জমা হয়েছে ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার। ‘বরফি’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দেওয়ানি’, ‘রকস্টার’, ‘ইয়ে দিল হ্যায় মুশকিল’, ‘সঞ্জু’ ছবিগুলো তাঁর পরিচয় নতুন করে লিখেছে। তিনি ঋষি কাপুর আর নিতু কাপুরের একমাত্র ছেলে, তিনি রণবীর কাপুর। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে দুটো ছবি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ আর ‘শমশেরা’। ৩৬ বছর বয়সী রণবীর কাপুরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিল্মফেয়ারের সম্পাদক জিতেশ পিল্লাই। এ ছাড়া ইউটিউবে প্রকাশিত ফিল্ম কম্প্যানিয়ন আর বলিউড হাঙ্গামাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিও থেকে নির্বাচিত অংশ দেওয়া হলো এখানে।
এবার আপনাকে গোয়েন্দার চরিত্রে দেখা যাবে। বাস্তবের জীবনে কখনো গোয়েন্দাগিরি করেছেন?
না, আগে কখনো এমন কাজ করিনি। বাস্তবেও করিনি। আর আমার ওপরও কেউ কখনো গোয়েন্দাগিরি করেনি। কারণ, আমি তো ধরা পড়ার মতো কিছু করিনি।
আপনি আগে বলেছেন পরিচালক হতে চান। ইন্ডাস্ট্রিতে এক যুগ হতে চলল। কবে ছবি পরিচালনা করবেন?
আমি যত ছবি করছি, ততই টের পাচ্ছি পরিচালক হওয়া কত কঠিন! আর যত ভালো ভালো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছি, ততই বুঝতে পারছি, ভালো পরিচালক হওয়া আরও বেশি কঠিন। অবশ্যই অভিনয় করা কঠিন কাজ। তবে তা পরিচালক হওয়ার চেয়ে অনেক কম। তাই যতই দিন যাচ্ছে, পরিচালক হওয়ার ইচ্ছাটা উবে যাচ্ছে।
আপনার বাবার আত্মজীবনী বের হয়েছে। পড়ে কেমন লাগল?
আমি পড়িনি। আমি আমার বাবার জীবন, চিন্তা সম্পর্কে জানি। আমি জানি বইয়ে কী লেখা আছে। অনেকেই বলেছেন, একেবারে অকপট স্বীকারোক্তি। আমি হলে কখনোই কিন্তু পারতাম না। যেমনটা আমার বাবা বা সঞ্জয় দত্ত পেরেছেন। ‘সঞ্জু’ কিন্তু কোনো প্রচারণামূলক ছবি ছিল না। এখানে তাঁকে ভালো দেখানোর কোনো ব্যাপার নেই। আমি কখনোই আমার সত্যি সবার সামনে উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত না। আমি অন্তর্মুখী, লাজুক। এই জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। এটা একটা বড় দায়িত্ব। আরেকটা পরিশ্রমের কাজ। যাঁরা এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন, তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা।
আপনি কয়েকটা হাই প্রোফাইল প্রেম করেছেন। আবার হাই প্রোফাইল ব্রেকআপও হয়েছে। প্রাক্তন প্রেমিকাদের সঙ্গে সিনেমাও করেছেন। কেমন লাগে পর্দায় প্রাক্তনদের সঙ্গে প্রেম করতে?
আমি তো বলিনি, আমি কারও সঙ্গে ব্রেকআপ করেছি। আমি কোনো দিন ক্যামেরার সামনে কেঁদেকেটে বলিনি, আমার ব্রেকআপ হয়েছে। মানুষ কল্পনা করে নিয়েছে! প্রশ্নের উত্তরে আসি। দিন শেষে আমি একজন অভিনয়শিল্পী। অ্যাকশন আর কাটের মাঝে যেটা দেখেন, সেটা কিন্তু আমি নই। আমি এই দুই শব্দের বাইরের মানুষটা। আর কাজ তো কাজই। আমি কাজকে খুবই সিরিয়াসলি নিই। সিনেমা কোনো ছেলেখেলার বিষয় নয়। আমি একজন পুরোদস্তুর প্রফেশনাল।
শুনেছি, আপনার আর ক্যাটরিনা কাইফের সম্পর্ক নাকি টম আর জেরির মতো। আসলেই?
প্রথম দিন থেকেই আমি আর ক্যাট খুনসুটিতে মেতে থাকতাম। আমাদের সম্পর্কের দিনগুলোও অনেকটা ও রকমই কেটেছে। ক্যাটরিনা এমন একজন মানুষ, যে আরেকজনকে জীবনে উদ্ভাসিত হতে দেয়। সফল হতে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার প্রিয় ছবি কোনটা?
‘রকস্টার’। ইমতিয়াজ আলীর সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, আমি অভিনয় বিষয়টা ধরতে পেরেছি। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার জীবনদর্শন বদলে গেছে। এই ছবির ‘কুন ফায়া কুন’ গানের শুটিং করার জন্য আমরা এক রাত দিল্লিতে হজরত নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার মাজারে ছিলাম। সুফিবাদের দুনিয়ায়। অন্য রকম একটা শক্তি আর অনুভূতি ভর করেছিল। সেটি এখনো আমার জীবনের অন্যতম সেরা রাত।
আর ‘বরফি’?
‘বরফি’ আসলে যতটা না আমার ছবি, তার চেয়ে বেশি অনুরাগ বসুর। তাঁর ছবির নির্ধারিত কোনো সময়, ডায়ালগ কিংবা ঠিকঠাক সেট থাকে না। তারপরও সবকিছু জাদুর মতো ঘটে যায়। তিনি অনেক দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে পারেন। এমনকি আমার অভিনয়ও। ‘বরফি’ চরিত্রটা আমি করিনি, আমার পক্ষে করা সম্ভবও না। তিনি আমাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন। মুক্তি পাওয়ার পাঁচ দিন আগে যখন পুরো ছবিটি দেখলাম, অবাক হয়েছি। এ আমি কী করেছি! কিন্তু যখন করেছি, তখন বুঝিনি।
অভিনয় করেননি, কিন্তু আপনার খুব প্রিয় সাম্প্রতিক একটা ছবির নাম বলুন।
‘রাজি’। আমার জীবনের দেখা সেরা ছবিগুলোর একটা। এই ছবি এতটা আয় করবে, তা কেউ কল্পনা করেনি।
সম্প্রতি আপনার সম্পর্কে ছড়ানো সবচেয়ে বোকা গুজবটা কী?
আরে এই তো কদিন আগেই শুনেছি, আমার সঙ্গে দিল্লির একটা মেয়ের বাগদান হয়েছে। জীবনে কোনো দিন এই মেয়ের নাম শুনিনি, চোখে দেখা তো দূরে থাক। আর সাংবাদিকেরা সেই মেয়ের সাক্ষাৎকার নিতে চলে গেছেন। সেই মেয়ে জানিয়েছে, সে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে না। কোনো দিন দেখেনি। মেয়েটি আরও বলেছে, সে আমার ভক্তও না। মাত্র দুটো ছবি দেখেছে। সেই ছবি দুটি তাঁর ভালো লাগেনি।
আপনি নাকি একাধিক নায়কের সঙ্গে পর্দা ভাগ করতে রাজি নন?
আমি যা-ই হই না কেন, অভিনয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল, পাগলাটে। আমি সিনেমার জন্য, ভালো কাজের জন্য ক্ষুধার্ত থাকি। সেই ক্ষুধা নিয়েই সেটে যাই। আপনি যেভাবে বলছেন, সে রকম কিছু না। চিত্রনাট্য পছন্দ হয়নি, তাই করিনি। দুই নায়ক বা দশ নায়ক কোনো বিষয় না। আমি অডিশন দিতে ভয় পাই। আত্মবিশ্বাস কম। আশার ব্যাপার হচ্ছে, আমি নিজের ছবির সমান বড় হয়েছি। আর সেই কৃতিত্বের বড় অংশ পরিচালকের। এখন আমার ছবিগুলো আমার হয়ে অডিশনের কাজ করে। আমার প্রথম ছবি সঞ্জয় লীলা বানসালির সঙ্গে। আর তিনি ৪০-৪৫ টেকের কমে কোনো শট ওকে করেন না। ‘সাওয়ারিয়া’র যে ‘টাওয়াল সংয়ের’ ওই দৃশ্যের জন্য প্রথম দিন ৫০ বার মতো টেক দেওয়া হলো। এই অবস্থা দেখে আমার জন্য মায়া হলো পরিচালকের। গম্ভীর মুখ করে বললেন, যা হয়েছে থাক, আমি বানিয়ে নেব। পরদিন সেটে গেছি। আবার সেই শট শুরু হলো। ৭০ টেকে গিয়ে ‘ওকে’ হলো। দুই দিন ধরে একটা গানের একটা ছোট্ট অংশ করলাম। তাই এখন যখন টেক ওয়ান, টেক টু, টেক সিক্স... সেটের শত শত মানুষ ভাবে, রণবীর কাপুর ঠিকঠাক শট দিতে পারছে না। আমার কিচ্ছু আসে যায় না।
আপনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যে ছবিগুলো আপনি করেছেন, যে বইগুলো পড়েছেন আর যে নারীদের সঙ্গে প্রেম করেছেন—এই তিনের সমন্বয়ে আপনি। এর মানে কী?
যা বলেছি সেটাই। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে গড়েছে। এই যে আমি আজ এত মানুষের সামনে কথা বলছি, কাল আমার জীবনে এর প্রভাব থাকবে।