টিফ-কাণ্ড
পাগলামি আর কাকে বলে! প্রিয় তারকাকে দেখতে যাবেন বলে ছুটি চেয়েছিলেন। সব ঠিকঠাক ছিল। বসও ছুটি পাস করেছিলেন। কিন্তু কী থেকে কী গোলমাল বেধে গেল। লালগালিচায় ডাকোটা জনসন পা রাখার ঠিক আগে বেঁকে বসলেন বস। ‘ছুটি বাতিল! জলদি কাজে না আসছ তো চাকরির দফারফা।’ এত সাধ–আহ্লাদ, সব তবে মাটি? প্রিয় তারকার সঙ্গেসেলফি তোলা হবে না? সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি মেয়েটি। চাকরির মুখে ছাই দিয়ে সোজা চলে এসেছেন টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সবের লালগালিচায়। অপেক্ষমাণ জনতার ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসেছেন সামনে। হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘তোমার সঙ্গে শুধু একটা সেলফি তুলব বলে চাকরি ছেড়ে এসেছি। প্লিজ একটা সেলফি হবে?’ চাকরি খোয়া গেছে, কিন্তু অজ্ঞাতনামা সেই মেয়ের সেলফি ফসকায়নি। ফিফটি শেডস অব গ্রে ছবির তারকা ঠিকই ছবি তুলেছেন মেয়েটির সঙ্গে। উপরি হিসেবে সেই মেয়ে পেয়েছেন একটা আলিঙ্গনও। সত্যিই এমন কাণ্ড করতে পারে কেউ! কিন্তু এই সব খ্যাপাটে মানুষ আছে বলেই না দুনিয়াটা এত আনন্দময়।
১৫ সেপ্টেম্বর পর্দা নেমেছে ৪৪তম টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সবের। প্রতিবারের মতো এবারের উত্সবও ছিল নানা ঘটন-অঘটনে ভরপুর। চাকরি ছেড়ে আসা ওই মেয়ে তার এক নমুনামাত্র।
জীবে দয়া
রক্তাক্ত একটা নেকড়ে শুয়ে আছে রাস্তায়। খসে পড়েছে তার গায়ের লোম! ৫ সেপ্টেম্বর উত্সব শুরুর দিনে টিফ বেল লাইটবক্স ভবনে ঢুকতে যাওয়ার পথে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। ব্যাপারখানা কী? না সত্যিকার নেকড়ে নয় ওটা। আরও খোলাসা করে বললে আদতে নেকড়েই নয়, নেকড়ের কাছাকাছি দেখতে কয়োট নামের এক প্রাণী। টরন্টো শহরে কালেভদ্রে তাদের দেখা মেলে। কিন্তু এমন রক্তমাখা কয়োট পুত্তলিকা কেন টিফ বেল লাইটবক্সের সামনে? আমাকে আলোকিত করতে হাতের প্ল্যাকার্ড রেখে এগিয়ে এলেন একজন, ‘আমরা চাই টিফ (টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সব) যেন কানাডা গুজের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না নেয়। ওরা খুনি। ওরা প্রাণী হত্যাকারী।’ কানাডা গুজ হলো শীতের পোশাক তৈরিকারক স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বন্য প্রাণীর পশম ব্যবহার করে তৈরি করে তাদের শীতের পোশাকে। আর ওখানেই এই সব সমাজকর্মীর আপত্তি। ঝট করে মনে পড়ে গেল, পিটা, অর্থাৎ পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট টু অ্যানিমেলস হলো বাঘা বাঘা সব হলিউড তারকার পছন্দের দাতব্য প্রতিষ্ঠান। পামেলা অ্যান্ডারসন ছিলেন পিটার অন্যতম সমর্থক। এবারও কানাডা গুজের সঙ্গে টিফের সম্পর্ক ছেদ করতে আবেদন জানানো তারকাদের মধ্যে আছেন এই বেওয়াচ তারকা। এত দিন পিটার শুধু নাম শুনেছি, এবার বিষয়টা বোঝা হয়ে গেল পরিষ্কার। চটজলদি ছবি তুললাম। সমাজকর্মীরাও প্ল্যাকার্ড হাতে পোজ দিয়ে দিলেন।
হঠাৎ হাজির টম হ্যাঙ্কস
তিনি আসছেন, সেটা শোনা যাচ্ছিল আগেই। কিন্তু সত্যিই আসছেন তো? নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী? টম হ্যাঙ্কস বলে কথা? এমন মহাতারকার দেখা পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। আমাদের অনেকের মতো টরন্টোর এক রেস্তোরাঁর মালিক দম্পতিও ফরেস্ট গাম্প, অর্থাৎ টম হ্যাঙ্কসের বিশাল ভক্ত। সেই ভক্তি থেকেই টরন্টো উত্সবের সময়ে অনেকটা মজার ছলে দোকানের বাইরে একটা সাইনবোর্ড সেঁটেছিলেন টম হ্যাঙ্কসকে উদ্দেশ করে। দুদিন না যেতেই কী কারবার! সত্যি সত্যি তাঁদের দোকানে এসে হাজির স্বয়ং টম হ্যাঙ্কস। পরদিন স্বাভাবিকভাবেই পত্রপত্রিকার শিরোনাম এই ঘটনা। বলা নেই কওয়া নেই, স্রেফ এক আমজনতার বেশে ওই দম্পতির দোকানে হাজির হন টম হ্যাঙ্কস। যাওয়ার আগে তাদের পুঁচকে বাচ্চাকে কোলে নিতেও ভোলেননি। কপালের নাম গোপাল সম্ভবত একেই বলে।
ফেসবুকে পুরস্কার
টরন্টো চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কারটা মুখ্য নয়, সেটা জানতাম। অলাভজনক সংগঠন টিফ তাদের পুরস্কার অনুষ্ঠানে তেমন জাঁকজমকের ধার ধারে না, সেটাও জানা ছিল। কিন্তু তাই বলে পুরো পুরস্কার অনুষ্ঠানই বাতিল? অবিশ্বাস্য তো বটেই। তবে একটা কারণও দেখিয়েছে টিফ কর্তৃপক্ষ। সেটা এ রকম—উত্সবের শেষ দিনে যেদিন পুরস্কার ঘোষণা হয়, বেশির ভাগ বড় তারকাই টরন্টোতে থাকেন না। তার চেয়ে বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভালো। সবাইকে একযোগে পাওয়া যায়। আর তাৎক্ষণিকভাবে সবাই উদ্যাপনও করতে পারেন এই পুরস্কার। কোনো অনুষ্ঠান নেই, তাই সাংবাদিকদের পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ডের ফলাফল জানানো হয়েছে ই-মেইলে! আর যা–ই হোক, টিফ কর্তৃপক্ষের এই পরিকল্পনা প্রশংসা পায়নি কারোরই।