কঙ্গনার এ কেমন সাজ

কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

পুরোদমে চলছে প্রি–প্রোডাকশনের কাজ। বলিউড তারকা কঙ্গনা রনৌত উড়াল দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। কারণ, আপাতত সেখানেই অবস্থান করছেন তাঁর মেকআপম্যান। এই ছবিতে মেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুটিং শুরু হওয়ার আগে কঙ্গনা রনৌতের ‘লুক’ একবার ঝালাই করে না নিলেই নয়। সেই প্রসথেটিক্স মেকআপের কিছু ছবি এবার সামনে এসেছে।

বড় পর্দায় জয়ললিতা হবেন কঙ্গনা রনৌত। কিন্তু কীভাবে? বিশেষ করে জীবনের শেষদিকে এই ‘আম্মা’র মতো দেখতে হবেন কীভাবে কঙ্গনা? এই সমস্যার সমাধান আনা হয়েছে সুদূর হলিউড থেকে। নাম তাঁর জেসন কলিন্স। সমাধান যখন হাজির, তাই আর দেরি কেন! আপাতত কঙ্গনা ছুটে গেছেন মার্কিন মুল্লুকে। শুটিং শুরুর আগে জেসন কলিন্স চলে আসবেন ভারতে।

ছবির নাম ‘তালাইভি’। অর্থ ‘বিপ্লবী নেত্রী’। জয়ললিতাকেই এই নামে চিনত সবাই। এই ছবিতে কঙ্গনাকে চারটি লুকে দেখা যাবে। তাই এই ছবির জন্য প্রসথেটিক্স মেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কঙ্গনাকে জয়ললিতা বানাতে ছবিটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে জেসন কলিন্সকে। তিনি ‘ক্যাপ্টেন মার্ভেল’, ‘ব্লেড রানার’ বা ‘হাঙ্গার গেমস’-এর মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মেকআপে প্রসথেটিক্সের কাজ করেছেন।

কঙ্গনা রনৌতের বোন ও ম্যানেজার রাঙ্গোলি চান্ডেল এই প্রসথেটিক্স মেকআপের কিছু ছবি শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে। আর তা দেখে ভক্তরা রীতিমতো চমকে উঠেছেন। বুঝেছেন, প্রসথেটিক্স মেকআপ সহজ কথা নয়। রাঙ্গোলি ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এভাবেই প্রসথেটিক্সের মাপজোখ নেওয়া হয়। অভিনয়শিল্পী হওয়া সহজ কথা নয়। এই ছবি দেখে আমাদের দম আটকে আসছে। অথচ কঙ্গনা কত শান্তভাবে মেকআপ নিচ্ছে।’

এই ছবি দেখে ভক্তরা নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছেন সত্যি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের চোখ কপালে উঠেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছবি শেয়ার করা মোটেই ভালোভাবে দেখছেন না ভক্তরা। একজন তো রীতিমতো উপদেশ দিয়ে লিখেছেন, ‘ছবি নিয়ে প্রথমে মানুষের আগ্রহ জমার সুযোগ দিতে হয়। তারপর সেটি তুঙ্গে উঠলে এক এক করে রহস্য ফাঁস করতে হয়। প্রথমেই যদি ফার্স্ট লুক দেখিয়ে দেন, তাহলে তো সব পানিতে গেল। আপনাকে ছবির মার্কেটিং তো বুঝতে হবে।’

কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

আরেকজন লিখেছেন, ‘অমিতাভ বচ্চন “পা” ছবির জন্য ছয় ঘণ্টা করে মেকআপ নিয়েছেন। অক্ষয় কুমার “টু পয়েন্ট জিরো” ছবির জন্য প্রসথেটিক্স নিয়েছেন। আরও অনেকেই নিয়েছেন। আর এ জন্য তো বড় অঙ্কের পারিশ্রমিকও নিচ্ছেন। এই কাজগুলো করতে পারছেন বলেই তো তিনি বলিউডের কুইন। এগুলো একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য খুবই স্বাভাবিক। এভাবে গুণকীর্তন করার কিছু নেই।’

‘তালাইভি’ ছবিটি তামিল, তেলেগু ও হিন্দি—তিন ভাষায় মুক্তি দেওয়া হবে। শুরুতে হিন্দি ভাষায় এই ছবির নাম রাখার কথা ছিল ‘জয়া’। পরে কঙ্গনার অনুরোধে সব ভাষার জন্য ‘তালাইভি’ নামটা চূড়ান্ত করা হয়। এই ছবিতে তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা এম জি রমচন্দ্রনের চরিত্রে দেখা যাবে অরবিন্দ স্বামীকে।

‘তালাইভি’ ছবির জন্য প্রসথেটিক্স মেকআপ নিচ্ছেন কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
‘তালাইভি’ ছবির জন্য প্রসথেটিক্স মেকআপ নিচ্ছেন কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

ভারতীয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। ঘনিষ্ঠজনের কাছে তিনি ‘আম্মা’। ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর যাঁর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ৭৭ জন আত্মহত্যা করেন। অভিনয়জগতে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর রাজনীতিবিদ হিসেবেও নিজের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছিলেন। এক জীবনে ভালোবাসা, ঘৃণা, উত্থান ও পতন—সব রূপ দেখেছেন তিনি।

১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জয়ললিতার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়। এই সময় তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন। ১৪০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ১২০টিই ছিল ব্লকবাস্টার। গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশকে জয়ললিতা এম জি রমচন্দ্রনের সঙ্গে অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। দুজনের মধ্যে বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। রমচন্দ্রনই তাঁকে রাজনীতিতে আগ্রহী করেন।

১৯৮৭ সালে রমচন্দ্রনের মৃত্যুর পর এআইএডিএমকে দলে বিভাজন তৈরি হয়। একদল ছিল রমচন্দ্রনের স্ত্রী জানকীর দিকে আর আরেক দল ছিল জয়ললিতার সঙ্গে। ১৯৮৯ সালে জয়ললিতাই জয়ী হয়ে বিধানসভার সদস্য হন। তিনি বিধানসভার প্রথম নারী হিসেবে বিরোধীদলীয় নেতা হন। বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে সরকারি দলের বিধায়কদের হাতে তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। এই ঘটনায় তিনি সাধারণ জনগণের সহানুভূতি পান এবং ১৯৯১ সালে প্রথম ও সর্বকনিষ্ঠ নারী মুখ্যমন্ত্রী হন।

‘তালাইভি’ ছবির জন্য প্রসথেটিক্স মেকআপ নিচ্ছেন কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
‘তালাইভি’ ছবির জন্য প্রসথেটিক্স মেকআপ নিচ্ছেন কঙ্গনা রনৌত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ললিতার দলের ব্যাপক ভরাডুবি হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে আবার ক্ষমতায় আসেন জয়ললিতা। সেই সময় ফৌজদারি মামলা চলছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেননি। পরে মামলা থেকে রেহাই পান। ২০১১ সালে জয়ললিতা তৃতীয় মেয়াদে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০১৪ সালের একটি রায়ে তাঁর চার বছরের কারাদণ্ড হয়। এর ফলে ভারতের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনের অযোগ্য ঘোষিত হন। একই সঙ্গে বিধানসভার সদস্যপদ হারান।

২০১৪ সালে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মেলে। উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আবার মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। আর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নিতেন মাত্র এক রুপি।