মালয়েশিয়ায় নিষিদ্ধ লোপেজের ছবি

জেনিফার লোপেজ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
জেনিফার লোপেজ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

‘হাসলারস’ আর জেনিফার লোপেজ—দুইয়ে মিলে ভালোই জমিয়েছে এবার টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসব। ছবিটি যে এত সাড়া জাগাবে, সেটা ভাবনার বাইরে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের পানশালার নর্তকীদের নিয়ে ছবির গল্প। সেই গল্প মন জয় করেছে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের। কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি মেলেনি এই ছবির। এএফপির প্রতিবেদনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই ছবির বিষয়, দৃশ্য ও উপস্থাপন মালয়েশিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় চিত্র পরিবেশক কোম্পানি স্কয়ার বক্স পিকচার্সের পক্ষ থেকে জানা যায় নিষিদ্ধের এই ঘোষণা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানানো হয়, মালয়েশিয়ার সরকার এই ছবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এর আগে গত আগস্ট মাসে ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী এলটন জনের জীবনভিত্তিক ছবি ‘রকেটম্যান’ থেকে কিছু দৃশ্য বাদ দেয় মালয়েশিয়ার ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ড। দৃশ্যগুলো ছিল সমকামিতার। তারপর সেখানে ‘রকেটম্যান’ মুক্তি দেওয়া হয়।

এএফপি জানিয়েছে, পরিবেশকদের পক্ষ থেকে তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে সেখানকার ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ছবিতে এত বেশি অশ্লীল দৃশ্য যে সব কেটে ফেললে এই ফিল্ম আর থাকে না। তবে এই বার্তার সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন ছবিকে ‘ফিফটিন সার্টিফিকেট’ দিয়েছে। অর্থাৎ, কেবল ১৫ বছরের বেশি বয়সের দর্শক ছবিটি দেখতে পারবেন। বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বলা হয়েছে, ‘নগ্নতা, যৌন দৃশ্য, গালাগালি আর মাদকের অপব্যবহারে ভরপুর’। যদিও বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পেয়েছে ছবিটি। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একই দিনে, অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে মুক্তি পেয়েছে।

‘হাসলারস’ ২০০৮ সালের একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। সামান্থা বারবাশ ও অন্য তিনজন বার ড্যান্সারের ওপর গল্প। তারা ধনী গ্রাহকদের মাদক দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। যার প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে। পরে এ ঘটনা ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয়। আর সেখান থেকেই কাহিনি নিয়ে লেখা হয় ‘হাসলারস’ ছবির চিত্রনাট্য।

জেনিফার লোপেজ। ছবি: এএফপি
জেনিফার লোপেজ। ছবি: এএফপি

ছবিতে জেনিফার লোপেজের চরিত্রের নাম রামোনা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটা পানশালার নর্তকী। ট্রেলারের শুরুতেই তাকে দেখা গেছে পোল ড্যান্স করতে। তার নাচের দলে যুক্ত হওয়ার পর ডরোথি এক কেলেঙ্কারি ঘটায়। মাদক আর অর্থ লুটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এই ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্কিন অভিনয়শিল্পী কনস্ট্যান্স হুর।

জেনিফার লোপেজ অভিনীত ছবি ‘হাসলারস’ নিয়ে কারও কোনো বড় আশা ছিল—এমন নয়। ছবির উদ্বোধনী লালগালিচায় জেনিফার লোপেজ মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। সেই ছবি ‘ভ্যারাইটি’র প্রচ্ছদে ঝলমল করেছে। জেনিফার লোপেজের দৌড় ওই পর্যন্ত। অন্তত এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু ‘হাসলারস’ ছবির তিন–চারটি প্রদর্শনীর পর ঘটনা দাঁড়িয়েছে ভিন্ন। ছবিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স জেনিফার লোপেজের। তার সুবাদে আগামী অস্কার মনোনয়নে সম্ভাব্যদের তালিকায় আলোচিত হচ্ছে তাঁর নামও।

‘হাসলারস’ ছবির পরিচালক লরেন স্কাফারিয়া বলেন, ‘ছবিটি পুরোদস্তুর নারীদের গল্প। যেখানে পুরুষতান্ত্রিক এক সমাজে প্রথা ভেঙে তাঁরা টিকে থাকার জন্য নিজেদের গল্প নিজেরাই লিখেছেন।’ নারীদের উঁচু হিল, ছোট ছোট পোশাক, পুল ড্যান্স, আলো-ঝলকানো মঞ্চ, অন্ধকার জগৎ—সব মিলিয়ে নারীবাদী ধাঁচের এই ছবিকে একটা শব্দে বলা হচ্ছে ‘গ্ল্যামারাস’।

বার্তা সংস্থা এপির ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জেনিফার লোপেজ বলেছেন, ‘বার ড্যান্সার, নারী যৌনকর্মী—তাদের সব সময় পুরুষের চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই ছবিতে তাদের দেখা যাবে নারীর চোখে। মানুষ কেবল পেশা দিয়ে একজন নারীকে বিচার করে। সেগুলো পুরোনো আমলের সব পুরুষতান্ত্রিক ধারণা। এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে ভেঙে চুরমার করে দেয় এই ছবি। এই নারীদের পেশাজীবী মোড়কের বাইরে ভেতরের সত্তাকে চিনতে সুবিধা হবে।’

১৭২ কোটি টাকা খরচ করে বানানো এই ছবি মুক্তির মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে কেবল উত্তর আমেরিকা থেকেই মূলধন তুলে লাভের মুখ দেখে ফেলেছে। আয় করেছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।