মুখ নয়, জনপ্রিয়তা মুখোশে!

>খ্যাতির এক অদ্ভুত মোহ আছে। পরিচিতি পাওয়ার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে! কিন্তু কিছু পাগলাটে মানুষ আছেন, যাঁরা এসব যশ–খ্যাতির ধার ধারেন না। আড়ালে থেকেই দিব্যি নিজের মনমতো জীবন কাটিয়ে দেন। মুখোশের আড়ালে থেকেই তাঁরা নেন স্বাদ, খ্যাতির বিড়ম্বনা। আজ এমন কয়েকজন গানের শিল্পীর কথা জানব, যাঁদের মুখ নয়, মুখোশটাই সব। মুখোশের পেছনে শিল্পীর আসল চেহারা নিয়ে নানা জনের নানা কৌতূহল।

সিয়া

আসল নাম: সিয়া কেট ইসাবেল ফারলার

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই কিন্তু মুখোশের আড়ালে নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখতেন না এই গায়িকা। ‘চিপ থ্রিলস’–এর মতো জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দেওয়া সিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে আড়ালে নিয়ে যান। অস্ট্রেলীয় এই গায়িকা, গীতিকার, সুরকারের মতে মুখ লুকিয়ে রাখার এই কাজ তিনি শুরু করেন ১০-১১ বছর আগে। পপ মিউজিকে এখন আর আগের মতো রহস্য–রোমাঞ্চ নেই। কিন্তু তাঁর ভাষ্যমতে, রহস্য ছাড়া আবার সংগীত হয় নাকি? সে জন্যই একটু একটু করে নিজেকে আড়াল করে রহস্যের জন্ম দিয়েছেন এই তারকা। কপাল বেয়ে আসা সাদা–কালো চুল দিয়ে ঢেকে ফেলেছেন নিজেকে। আজ শুধু নিজের গায়কি নয়, এই রহস্য আর মুখোশের জন্যও পরিচিত তিনি।

মার্শমেলো

আসল নাম: ক্রিস্তোফ কামস্টক

মার্শমেলোর মতো চারকোনা চেহারা, কাটাকুটি চিহ্নওয়ালা চোখ আর হাসিমাখা একটা মুখোশ পরে থাকেন এই সংগীতশিল্পী। ইতিমধ্যেই বিখ্যাত সব তারকার সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন তিনি। বড় বড় আরও তারকা এই মুখোশধারীর সঙ্গে গান করতে উন্মুখ হয়ে আছেন। কিছুদিন আগে বলিউডের শাহরুখ খানও কাজ করেছেন মার্শমেলোর সঙ্গে। কিন্তু সাদা মুখোশের আড়ালে থাকা এই মানুষ আসলে কে? আর কেনই–বা তিনি আড়ালে থাকেন সব সময়? এ বিষয়ে নানা মাধ্যমে নানা ধরনের তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। প্রথম দিকে মার্শমেলোর পরিচয় জানা না গেলেও পরে তথ্য বেরিয়ে আসে এক এক করে। জানা যায়, আরেক মুখোশধারী সংগীতশিল্পী ডেডমাউ৫-এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মার্শমেলো মুখোশ পরা শুরু করেন তিনি। উল্লেখ্য, ডেডমাউ৫ নামের জনপ্রিয় কানাডিয়ান ইলেকট্রনিক মিউজিক প্রডিউসার সব সময় ইঁদুরের মাথার আকৃতির মুখোশ পরে মঞ্চে উঠতেন।

ড্যাফট পাঙ্ক

আসল নাম: গাই-ম্যানুয়েল দ্য হোমেম-ক্রিস্তো ও থমাস ব্যাঙ্গাল্টার

সেই নব্বই দশকের কথা। যে সময় তারকাখ্যাতি পাওয়ার জন্য পশ্চিমা পপশিল্পীরা কী না করতেন! ম্যাডোনা নিজেকে তুলে ধরতেন প্লেবয়ের প্রচ্ছদে, মাইকেল জ্যাকসন নিজের ওপর করাতেন নানা ধরনের অস্ত্রোপচার। কিন্তু ওই সময়ে একটা নতুন ব্যান্ড শুরু করে নতুন ধারা। মুখোশের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে গান গাইতে শুরু করে। সেই দলের নাম ড্যাফট পাঙ্ক। গাই-ম্যানুয়েল দ্য হোমেম-ক্রিস্তো ও থমাস ব্যাঙ্গাল্টার সেই দলের দুই মুখোশধারী শিল্পী। রোবটিক মুখোশ পরে এ দুজন সব সময় মঞ্চে উঠতেন। এমনকি এই দলের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরও গাই–ম্যানুয়েল ও থমাস মুখোশ থেকে বেরিয়ে আসেননি। বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, নিজেদের ব্যক্তিজীবনকে স্বাভাবিক রাখতেই নিজেদের লুকিয়ে রাখেন তাঁরা। নামে আর গানে সবাই চেনে তাঁদের, এটাই বড় অর্জন।

বাকেটহেড

আসল নাম: ব্রায়ান প্যাট্রিক ক্যারল

বাকেটহেডের জন্ম হয়েছিল একটি খামারে। সেখানেই মুরগিদের প্রতি অন্য রকম মমত্ববোধ তৈরি হয় তাঁর। খামারের মালিক ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর। মুরগি আর বাকেটহেড—দুজনের প্রতিই তাঁর ব্যবহার ছিল নির্মম। সেখানে পাওয়া অভিজ্ঞতার পরই হাতে গিটার আর মাথায় বাকেট তুলে নেন বাকেটহেড। এখনো প্রতিটি রেস্টুরেন্টে মুরগিকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করার বিরুদ্ধে কাজ করছেন এই তারকা। যে ‘বাকেট’–এ বা বাক্সে করে মুরগি ভাজা পরিবেশন করা হয় রেস্টুরেন্টগুলোয়, সেই বাকেটেই নিজেকে পুরে নেন বাকেটহেড। গল্পটা এমনই। 

গ্রন্থনা: সাদিয়া ইসলাম