'কালের যাত্রা' আসছে বিটিভিতে

কালের যাত্রা নাটকের দৃশ্যে দোয়েল ম্যাশ।  ছবি: সংগৃহীত
কালের যাত্রা নাটকের দৃশ্যে দোয়েল ম্যাশ। ছবি: সংগৃহীত

কারও কি মনে আছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মনকাড়া ধারাবাহিক নাটকগুলোর কথা? এখানে নোঙড়, ভাঙনের শব্দ শুনি, সংশপ্তক—এসব নাটকের কথা? একসময় কাজ ফেলে এসব নাটক দেখার জন্য টিভি পর্দার সামনে বসে থাকত মানুষ। কেবল টিভির যুগে বিটিভির সে স্বর্ণসময় আর নেই। নাটক প্রচারিত হয় সংবাদ চ্যানেল বাদে প্রায় সব চ্যানেলে। ফলে দর্শকও গেছে ভাগ হয়ে। বিটিভির নাটকের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে আবার হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনার মতো একটি কাজ হচ্ছে বিটিভিতে। আকরাম খানের নির্দেশনায় বিটিভিতে আসছে কালের যাত্রা নামে একটি ধারাবাহিক।

থিয়েটার তখন ছিল আন্দোলন। যেন জীবন উৎসর্গ করে মঞ্চের জন্য কাজ করতেন কর্মীরা। মঞ্চের জন্য আত্মনিবেদনের পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গী ছিল টেলিভিশনে কাজের হাতছানি, কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব, সহশিল্পীর সঙ্গে প্রেমে জড়ানোসহ নানা কিছু। মফস্বলের একটি নাটকের দলের সেসব গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে টেলিভিশন ধারাবাহিক কালের যাত্রা।

বছর পাঁচেক আগে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। ‘কালের যাত্রা’ নামের সেই উপন্যাস থেকে সবুজ ওয়াহিদ তৈরি করেছেন ‘কালের যাত্রা’ নাটকের চিত্রনাট্য। পর্দা উপযোগী সেই কাহিনি দেখানো হয়েছে ঔপন্যাসিক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদকে। তিনি তা পছন্দ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চিত্রনাট্যের পর বড় করে সেট করা হলো, কিছু দৃশ্য রান ডাউন করে আমাকে দেখানো হলো। আমার ভালো লেগেছে। এই নাটক মানুষের ভালো লাগতে পারে।’ ঢাকার মঞ্চের আড়ালের অনেক ঘটনা এই নাটকে দেখা যাবে কি না জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মফস্বলের একটি গল্প। তবে আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ঢাকার নাট্যাঙ্গনে কাজ করেছি, কিছু ঘটনা আসতেই পারে।’

ধারাবাহিকটির পরিচালক আকরাম খান বলেন, ‘নাটকের দ্বিতীয় লটের শুটিং শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভেতরে সেট নির্মাণ করে চলছে শুটিং। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন সিরিয়াল মানেই হিন্দি ধারাবাহিকগুলো নকলের চেষ্টা। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বা মানুষের ভালোবাসা থেকে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, নানা কারণে সেটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের গল্পটা এমন একটা থিয়েটার দলকে নিয়ে, যারা এখনো তেভাগার কাহিনি নিয়ে নাটক করে, এখনো তাদের একটা রাজনৈতিক আদর্শ আছে, যারা প্রান্তিক মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহ আছে, ইগো আছে, কাকে বেশি সুযোগ দেওয়া হলো, কাকে বঞ্চিত করা হলো—এসবের দ্বন্দ্ব আছে। এসব নিয়েই নাটকের গল্প।’

নাটকটিতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। আরণ্যক নাট্যদলের শক্তিশালী অভিনেতা। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিটিভিতে তৈরি করা সেটে কাজ করার অনেক আরাম আছে। এ রকম গল্প নিয়ে এখন কেউ কাজ করে না। এখনকার টিভি নাটকগুলো নির্দিষ্ট কিছু গল্পের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করে। সেই দিক থেকে এই নাটক একেবারে ব্যতিক্রম। পুরোনো দিনের গল্প হলেও নির্মাণে নতুনত্ব আছে। মঞ্চের কাহিনি নিয়ে খুব বেশি টিভি নাটক হয়নি। যারা অভিনয়ে আসতে চায়, তাদের জন্য এটা একটা শিক্ষণীয় নাটকও হতে পারে।

বিটিভির কন্ট্রোলার প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু তৌহিদ জানান, এই প্রান্তিকেই নাটকটি প্রচারের সম্ভাবনা রয়েছে। শুরুতে ১৩ পর্ব জমা দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট ৫২ পর্ব নির্মিত হবে, পরে পর্বের সংখ্যা বাড়তে পারে। তিনি বলেন, এই ধারাবাহিক দর্শকেরা পছন্দ করতে পারেন। চঞ্চল চৌধুরী আছেন, পরিচালক কাজটার প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল। তবে মানুষ কখন যে কোনটা পছন্দ করে আর ভাইরাল করে, সেটা অনুমান করা কঠিন।

নাটকটিতে আরও অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, তানভীন সুইটি, আরমান পারভেজ মুরাদ, সাদিকা স্বর্ণা, সাজ্জাদ সাজু, দোয়েল ম্যাশ, অবাক রায়হান রিয়াদ, শিরিন আলম প্রমুখ।