প্রিয়াঙ্কাকে ১০ প্রশ্ন

>তিন বছর পর আবার প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস ফিরছেন বলিউডে। মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত ও প্রযোজিত ছবি দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক। বিয়ে, সংসার, হলিউডের কাজ—এসব নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এত দিন। মার্কিন গায়ক নিক জোনাসকে বিয়ের পর আজও তিনি সেই ‘দেশি গার্ল’ রয়ে গেছেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ের মেহেবুব স্টুডিওর এক শান্ত বিকেলে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস বসেছিলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আড্ডায়। সেখানেই তাঁর মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস। ছবি: এএফপি
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস। ছবি: এএফপি

দেবারতি ভট্টাচার্য: দীর্ঘ তিন বছর পর হিন্দি ছবি নিয়ে পর্দায় ফিরছেন। এত দিন দূরে থাকার কারণ কী?

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস: ‘কোয়ান্টিকা’র কারণে গত তিন বছর আমি কোনো হিন্দি ছবি করতে পারিনি। ‘কোয়ান্টিকা’ শেষ হওয়ার পরপরই আমি ভালো চিত্রনাট্যের খোঁজ করছিলাম। তখনই দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক-এর চিত্রনাট্য হাতে পেলাম।

দেবারতি: দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক ভালো লাগার বিশেষ কোনো কারণ?

প্রিয়াঙ্কা: একেবারে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এই ছবির কাহিনি। এর আগেও আমি একাধিকবার বাস্তব চরিত্রের ওপর নির্মিত ছবি করেছি। বক্সার মেরি কমের বায়োপিকে অভিনয় করেছি। কিন্তু এই ছবিটা কোনো বরেণ্য ব্যক্তিত্ব নন, এক সাধারণ মা–বাবার অসাধারণ হয়ে ওঠার কাহিনি। ছোট একটা ছবি, যা আমরা ভালোবাসা দিয়ে বানিয়েছি। এই ছবির কাহিনি আমার অন্তরে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে।

দেবারতি: এই ছবিতে আপনি আপনার মেয়েকে হারিয়েছেন। বাস্তবেও তো আপনি আপনার প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা অনুভব করেছেন।

প্রিয়াঙ্কা: জন্ম-মৃত্যু—এই দুটিই প্রত্যেকের জীবনে অবধারিত। এখানে ধনী–গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই। এই ছবিতে আমি আমার মেয়ে ‘আয়েশা’র সঙ্গে যেমনভাবে জুড়ে ছিলাম, বাস্তবে আমি আমার বাবা আর দাদিরও তেমনই কাছের ছিলাম। যখন কেউ আমাদের ছেড়ে চলে যান, তখনই আমরা তাঁকে স্মরণ করি। কিন্তু আমার মতে, যখন সেই ব্যক্তিটি জীবিত থাকেন, তখন তাঁদের জীবনকে উদ্​যাপন করা উচিত। বাস্তবতা হলো, কখনো কখনো আমরা আমাদের মা–বাবাকে বলতে ভুলে যাই যে আমরা তাঁদের কতটা ভালোবাসি।

দেবারতি: আপনার খ্যাতি এখন এই উপমহাদেশ ছাড়িয়ে গেছে। এককথায় আপনি এখন ‘গ্লোবাল আইকন’। কেমন লাগে?

দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক ছবির দৃশ্যে শিল্পীরা
দ্য স্কাই ইজ পিঙ্ক ছবির দৃশ্যে শিল্পীরা

প্রিয়াঙ্কা: আমি কখনো ভাবিনি আমার নামের সঙ্গে এত ভারী শব্দগুলো জুড়বে। আমি এর জন্য কোনো বিশেষ চেষ্টাও করিনি। তবে এই শব্দ যখন আমার নামের আগে জুড়ে দেওয়া হয়, তখন একজন শিল্পী হিসেবে খুবই ভালো লাগে। একজন শিল্পীর এর থেকে বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই। এতে আরও ভালো ভালো কাজ করার উৎসাহ পাচ্ছি।

দেবারতি: প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস হওয়ার পর আপনার জীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে?

প্রিয়াঙ্কা: বিয়ের পর আমি অনেক ভালো হয়ে গেছি! আমার স্বামী খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমি ওর কাছ থেকে শিখছি যে কীভাবে শান্তশিষ্ট থাকা যায়।

গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস। ফাইল ছবি
গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস। ফাইল ছবি

দেবারতি: আপনিও ভালো গায়িকা। কখনো নিকের সঙ্গে গানে কণ্ঠ মেলানোর ইচ্ছা আছে?

প্রিয়াঙ্কা: আমার সেই সাহসই নেই যে ওর সামনে গান গাইব। গায়ক হিসেবে নিক খুবই প্রতিভাবান।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

দেবারতি: আপনার জীবন খুবই সংগ্রামের আর অনুপ্রেরণাদায়ক। আপনার সমসাময়িক নায়িকারাও আপনার দ্বারা অনুপ্রাণিত। আপনি কি মনে করেন না যে আপনার জীবনভিত্তিক ছবি বানানো উচিত?

প্রিয়াঙ্কা: আমি একটা মেয়ে, যে নিজের কাজ নিজের মতো করে যাচ্ছি। নিজেকে কখনোই মহান ভাবি না। কেউ যদি চান তো বায়োপিক বানাতে পারেন। আমি আমার আত্মজীবনীমূলক বই লিখছি। বইটার নাম আনফিনিশড। কারণ, আমি আমার সফরটাকে অসমাপ্ত বলে মনে করি। আগামী বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ২০ বছর পূর্ণ হবে। ১৭ বছর বয়সে আমি আমার পেশাজীবন শুরু করেছিলাম। আশা করি, আগামী বছর এই বইটা প্রকাশ করতে পারব। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড—এই তিন দেশে বইটা প্রকাশিত হবে।

দেবারতি: আপনাকে ঘিরে নানা নেতিবাচক খবর হামেশাই ভেসে আসে। এই খবরগুলো কীভাবে নেন?

প্রিয়াঙ্কা: কারও কোনো নেতিবাচক মন্তব্যে আমি প্রভাবিত হই না। আমি কেন অন্যকে আমার জীবনের ব্যাখ্যা দিতে যাব। আমার কাজ শুধু ছবি বানানো, অভিনয় করা আর আপনাদের আনন্দ দেওয়া। এর চেয়ে বেশি কিছু না। আবার যখন কেউ আমার অভিনয় নিয়ে সমালোচনা করে, তখন খারাপ লাগে।

সাক্ষাৎকার পর্বের শেষে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
সাক্ষাৎকার পর্বের শেষে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

দেবারতি: আপনি এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। ভারতকে কতটা মিস করেন? নিজের দেশ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যদি একটাকে বাছতে বলা হয় তো কোনটা বাছবেন?

প্রিয়াঙ্কা: ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো একটাকে বেছে নেওয়ার প্রয়োজনই নেই আমার। কারণ, দুটো দেশেই আমি কাজ করি। দুই দেশেই আমার বাড়ি আছে, পরিবার আছে। আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলাম, তখন হয়তো মনে ভয় ছিল। কারণ, ওখানকার মেয়েরা আমাকে আমার ধর্ম, বর্ণ এবং আমার জাতীয়তা নিয়ে উত্ত্যক্ত করত। কিন্তু এরপর আমি যখন আমার কাজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাই, সেখানে বিশেষ কদর পাই। যুক্তরাষ্ট্রে আমি এরপর প্রচুর ভালোবাসা আর সম্মান পেয়েছি। আমি আমার স্বামীকে সে দেশে পেয়েছি। তবে আমি আমার বাড়ির রান্না খুব মিস করি। আমি রান্না করতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় খাবার পাই, তবে তা ডিব্বায় ভরে আসে। তাজা গরম–গরম বাড়ির রান্না খুব মিস করি।

দেবারতি: গত বছর রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য আপনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ কি এখনো আপনার স্মৃতিতে আছে?

প্রিয়াঙ্কা: আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব দারুণ আকর্ষণীয়। আমার বাংলাদেশের খাবার ভীষণ ভালো লেগেছে। ফেরার সময় ওখান থেকে দু-তিনটি ঢাকাই জামদানি শাড়ি আর সালোয়ার–কামিজ উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। আমি মূলত শিশুদের জন্য সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। শিশুদের জন্য ভারত, বাংলাদেশ, জর্ডান, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে আমি ছুটে যেতে পারি। শিশুদের কোনো রং নেই, ধর্ম নেই, ভাষাবিভেদ নেই। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। শিশুরাই আমাদের এই বিশ্বের ভবিষ্যৎ।