নতুন-পুরোনো নাটকে জমেছে শারদীয় নাট্যোৎসব

থিয়েটার ৫২-এর ‘কালিদাস’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয় শনিবার রাতে।
থিয়েটার ৫২-এর ‘কালিদাস’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয় শনিবার রাতে।

ঢাক কুরকুর ঢাক কুরকুর অবিরাম বাজছে। দর্শনার্থীরা মণ্ডপে মণ্ডপে ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণ করছেন। সন্ধ্যা হতেই ঢাকার মণ্ডপগুলোতে বসছে সাংস্কৃতিক আয়োজনও। মণ্ডপে আসা বিপুলসংখ্যক লোক শামিল হচ্ছেন এসব সাংস্কৃতিক আয়োজনে।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে ‘শারদীয় নাট্যোৎসব’। সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতিবিজড়িত রাজধানীর রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দিঘির পাড়ে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে শনিবার দ্বিতীয় দিনেই দারুণ জমেছে এ উৎসব। এখানে পুরোনো জনপ্রিয় নাটকের পাশাপাশি মঞ্চস্থ হচ্ছে নতুন নাটকও।

শনিবার বিকেল চারটা থেকে ভজন ও শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশন করেন পণ্ডিত রামপ্রসাদ সূত্রধর ও মানিক সিংহ রায়। এরপর সন্ধ্যা সাতটায় দেশ নাটক মঞ্চস্থ করে মাসুম রেজা রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘নিত্যপুরাণ’। রাত নয়টায় শুরু হয় থিয়েটার ৫২-এর নতুন নাটক ‘কালিদাস’। নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ।

‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত

নিম্নবর্ণের সন্তান একলব্যকে ঘিরেই নাটক ‘নিত্যপুরাণ’। পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে অস্ত্রবিদ্যা শেখার জন্য গুরু দ্রোণাচার্যের কাছে যান তিনি। নীচু জাত বলে তাঁকে শেখাতে চান না দ্রোণাচার্য। যদিও একপর্যায়ে তাঁর কাছে ধনুর্বিদ্যা শেখার সুযোগ পান একলব্য। অথচ আরেক শিষ্য পঞ্চপাণ্ডবের এক পাণ্ডব অর্জুন একলব্যের কাছে পরাজিত হন ধনুর্বিদ্যায়। এর পরিণতিতে গুরু দ্রোণাচার্য একলব্যকে আঙুল কেটে গুরুদক্ষিণা দিতে নির্দেশ দেন। মহাভারতে বর্ণিত নিম্নবর্গের এক বীর যোদ্ধার এই করুণ কাহিনিই নাটকের উপজীব্য। এই নাটকে অভিনয় করেছেন মামুন চৌধুরী, আসিফ হাসান, কামাল আহমেদ, ফিরোজ আলম, লরেন্স উজ্জ্বল গোমেজ, হোসাইন নীরব, মাইনুল হাসান প্রমুখ।

‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি। ২০১৯ সালের ১২ জুলাই ছিল এর শততম রজনী।

ঢাকার মঞ্চে আলোচিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের পাশাপাশি এদিন নতুন নাটক দেখার অভিজ্ঞতা হয় স্থানীয় দর্শকদের। এদিন নতুন নাটক ‘কালিদাস’-এর বিশেষ মঞ্চায়ন করে থিয়েটার ৫২। নাটকটি লিখেছেন অপূর্ব কুমার কুণ্ডু। তিনি বলেন, কালিদাসকে নিয়ে ঐতিহাসিক জীবনী গ্রন্থ পাওয়া যায় না, অথচ তাঁর রচিত প্রায় সব সাহিত্য গ্রন্থ পাওয়া যায়। ‘মেঘদূত’, ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলা’, ‘রঘূবংশ’ প্রভৃতি গ্রন্থ হাত বাড়ালেই যেমনভাবে পাওয়া যায়, তেমনি সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদের সুবাধে অনায়াসে পড়েও নেওয়া যায়। কালিদাসের শৈশব-কৈশোর-যৌবন-বার্ধক্য স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও ডালে বসে সেই ডালের গোড়া কাটা কিংবা বাসর ঘরে স্ত্রীর ভর্ৎসনা সেসব তো এককথায় প্রচলিত গল্প। সেসব গল্পের কুয়াশা ভেদ করে কালিদাসকে আপন করে দেখতে চাওয়া আবার মহাকবি কালিদাসকে সশ্রদ্ধায় প্রণতি জানানোর ব্যাকুল চেষ্টার নাম নাটক ‘কালিদাস’। নাট্যকারের ভাষায়, পূর্বসূরি অমর কথাসাহিত্যিকের প্রতি সাহিত্যের নবীন এক যাত্রীর গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশের মরমীয় চেষ্টার নাম নাটক ‘কালিদাস’।

দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’-এর একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি, সংগৃহীত
দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’-এর একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি, সংগৃহীত

কাল রোববার বিকেল চারটায় পদাবলী কীর্তন পরিবেশন করবেন জয়পুরহাটের কুমারী লক্ষ্মী দেবী। এরপর সন্ধ্যা সাতটায় আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকটি। রাত নয়টায় স্বপ্নদল মঞ্চস্থ করবে ‘জাদুর প্রদীপ’।

পরদিন সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় নাগরিক নাট্যাঙ্গন মঞ্চস্থ করবে ‘বাংলা আমার বাংলা ও সেই সব দিনগুলো’। রাত নয়টায় চন্দ্রকলা থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘তন্ত্রমন্ত্র’। মঙ্গলবার শারদীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী সন্ধ্যায় বহুবচন নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। এদিন রাত নয়টায় নাট্যফৌজ মঞ্চস্থ করবে ‘এজন মুন্সির পোস্টার’।

বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের সভাপতি শারদীয় নাট্যোৎসবের আহ্বায়ক লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ‘আমরা এবারের উৎসবে আশাতীত সাড়া পেয়েছি। এখানে মেলা-দিঘি-দেবী দেখতে যেমন অনুরাগীর ঢল নামে, তেমনি শহরের নামকরা নাটকের দল এবং পরিচিত শিল্পীদের অভিনয় দেখতে অনুরাগী দর্শক-শ্রোতারা আগ্রহ নিয়ে ভিড় করেন সন্ধ্যায়। প্রতি সন্ধ্যায় দর্শকের দারুণ উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।’ তিনি জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে নাট্যোৎসবের আয়োজন করছেন তাঁরা। সে সময় তাঁরা ‘একসময় ভক্ত গিরীশ’, ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’, ‘মহারাজা হরিশ্চন্দ্র’, ‘রাম-সীতা’ প্রভৃতি পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক নাটক করেছেন।