সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশ-ভারতের মেলবন্ধন

উৎসবে মঞ্চস্থ হবে লোক নাট্যদলের ‘আমরা তিনজন’ নাটকটি। ছবি: প্রথম আলো
উৎসবে মঞ্চস্থ হবে লোক নাট্যদলের ‘আমরা তিনজন’ নাটকটি। ছবি: প্রথম আলো

শুক্রবার শুরু হচ্ছে বছরের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। এ উৎসব চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। অষ্টমবারের মতো এবারও নাটকপাড়া-খ্যাত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল ও স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অংশগ্রহণে এই সাংস্কৃতিক যজ্ঞ। এবারের গঙ্গা-যমুনা উৎসবে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তন, মুক্তমঞ্চ এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তন। এসব স্থানে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে থাকবে নানা বিষয়-বৈচিত্র্যের পথনাটক, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্যসহ নানা পরিবেশনা।

এবারের উৎসবে মঞ্চনাটক নিয়ে ভারতের চারটি নাট্যদল এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ২৬টি নাট্যদলসহ মোট ৩০টি নাটকের দল অংশ নেবে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সংস্কৃতির মানুষের মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়েই সাত বছর ধরে ‘গঙ্গা-যমুনা উৎসব’-এর আয়োজন করে যাচ্ছে গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব উদ্‌যাপন কমিটি।

১০ দিনের উৎসবে ৩০টি নাটকের দল অংশ নেবে।
১০ দিনের উৎসবে ৩০টি নাটকের দল অংশ নেবে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৯’-এর উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর ও ভারতের নাট্যব্যক্তিত্ব মেঘনাদ ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ছাড়া উদ্বোধনী পর্বে সম্মানিত অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক নিপা চৌধুরী, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল নাট্যজন কামাল বায়েজীদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন উৎসব পর্ষদের সদস্যসচিব আকতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। উদ্বোধনী মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করবে স্পন্দন। পরিচালনায় অনিক বসু।

উদ্বোধনী দিনে জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হবে প্রাঙ্গণেমোরের নাটক ‘হাছনজানের রাজা’, পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে রয়েছে ঢাকা থিয়েটারের ‘পঞ্চ নারীর আখ্যান’ এবং স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে পালাকারের ‘উজানে মৃত্যু’।

আজ বুধবার শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের বিস্তারিত জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আকতারুজ্জামান। আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, বাচিকশিল্পী আহকাম উল্লাহ, নাট্যজন মিজানুর রহমান, আহমদ গিয়াস। সঞ্চালনা করেন নাট্যজন মীর জাহিদ হাসান।

উৎসবে সুবচন নাট্য সংসদ পরিবেশন করবে ‘মহাজনের নাও’। ছবি: প্রথম আলো
উৎসবে সুবচন নাট্য সংসদ পরিবেশন করবে ‘মহাজনের নাও’। ছবি: প্রথম আলো

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘গঙ্গা-যমুনা উৎসবটি এখন দেশের সর্ববৃহৎ একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। আগামী কয়েক দিনে প্রতিদিন কয়েক হাজার শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী এখানে সমবেত হবেন নানা পরিবেশনা নিয়ে। এটি শিল্পীদের মধ্যে শিল্পভাবনার বিনিময়ে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সেটা ভারত ও দেশের শিল্পীদের মধ্যেও। আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কৃতি অন্যতম হাতিয়ার। আমরা যত বেশি সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে যাব, তত বেশি সেই ল‌ক্ষ্যে এগিয়ে যাব।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিদিন তিনটি হলে ধারাবাহিকভাবে মঞ্চায়নে থাকবে তিন দলের তিনটি মঞ্চনাটক। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ১২ অক্টোবর শনিবার ভারতের দল সায়ক মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘দায়বদ্ধ’, পাশাপাশি পরীক্ষণ থিয়েটারে নাট্যতীর্থের ‘কঙ্কাল’ এবং স্টুডিও থিয়েটারে প্যান্টোমাইম মুভমেন্টের ‘প্রাচ্য’ মঞ্চস্থ হবে।

১৩ অক্টোবর রোববার মঞ্চস্থ হবে জাতীয় নাট্যশালায় নাগরিক নাট্যাঙ্গন বাংলাদেশের ‘গহর বাদশা ও বানেছা পরী’, পরীক্ষণ থিয়েটারে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘নীলাখ্যান’ এবং স্টুডিও থিয়েটারে বাংলা নাট্যদলের ‘মেঘ’ মঞ্চস্থ হবে। ১৪ অক্টোবর সোমবার লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী) মঞ্চস্থ করবে নতুন নাটক ‘আমরা তিনজন’, সুবচন নাট্যসংসদ ‘মহাজনের নাও’ এবং বাতিঘরের নাটক ‘রেড ক্লিফ’।

১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রদর্শনীতে থাকবে থিয়েটারের সাড়া জাগানো নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, আরশিনগর ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ এবং ঢাকা নান্দনিকের নাটক ‘নড়বড়ে বউ’। ১৬ অক্টোবর বুধবার প্রদর্শনীতে থাকবে ভারতের নাট্যদল অনীকের নাটক ‘পিরানদেল্লো ও পাপেটিয়ার’, ঢাকা পদাতিকের ‘কথা ৭১’ এবং একটি নির্মল ‘যাত্রাপালা’। ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার আসরে থাকবে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য নাট্যদল তির্যকের আলোচিত নাটক ‘ইডিপাস’, চন্দ্রকলা থিয়েটারের ‘শেখ সাদী’ এবং জাগরণী থিয়েটারের ‘রাজার চিঠি’। ১৮ অক্টোবর শুক্রবার ছুটির দিনে মঞ্চে থাকবে ভারতের দল বেলঘরিয়া অভিমুখের নাটক ‘কোজাগরী’, দর্শনার দল অনির্বাণ থিয়েটারের ‘জিষ্ণুযারা’ এবং নাট্যম বরিশালের ‘তিলক’। পরদিন ১৯ অক্টোবর শনিবার মঞ্চে থাকবে নাট্যচক্রের ‘ভদ্দরনোক’, ভারতের নাট্যদল বেলঘরিয়া রূপতাপসের ‘এলা এখন’ এবং নাট্য রেপার্টরির ‘ডিয়ার লায়ার’।

চন্দ্রকলা থিয়েটার পরিবেশন করবে নতুন নাটক ‘শেখ সাদী’। ছবি: প্রথম আলো
চন্দ্রকলা থিয়েটার পরিবেশন করবে নতুন নাটক ‘শেখ সাদী’। ছবি: প্রথম আলো

২০ অক্টোবর সমাপনী দিনে আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে দলের আলোচিত নাটক ‘ময়ূর সিংহাসন’, সময় মঞ্চস্থ করবে ‘ভাগের মানুষ’ এবং থিয়েটার ৫২ মঞ্চস্থ করবে ‘নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’।

কয়েক বছর ধরে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব’। আসরটি দুই বাংলার থিয়েটার অঙ্গনে সাড়া ফেলে। শুরু থেকেই কলকাতার এই নাট্যাসরে বাংলাদেশের একাধিক নাট্যসংগঠন অংশ নিয়ে আসছে। ২০১২ সাল থেকে একই নামে বাংলাদেশেও একটি উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব’ পর্ষদ। ২০১৪-তে এসে নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মেলবন্ধনে উৎসবটিকে আরও প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তারই আলোকে নামকরণ করা হয় ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’।

সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০১৯’ উদ্‌যাপিত হবে।